গুজরাটের কলঙ্ক মুছে ফেলা মোদির পক্ষে সম্ভব নয় : অমর্ত্য সেন
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মোদির স্বপ্নের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, হিন্দুত্ব, ‘ঘর ওয়াপসি’ (ঘরে ফেরা), গুজরাট দাঙ্গা, শিক্ষা ক্ষেত্রে গৈরিকিকরণ, সেকুলারিজম ইত্যাদি নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীকে কার্যত তুলোধোনা করেছেন বিশ্ববরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ।
মঙ্গলবার এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘অভুক্ত, অপুষ্ট এবং অশিক্ষিত দেশবাসীকে নিয়ে বিশ্বের সামনে নিজেকে শিল্পায়নের বৃহৎ শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে ভারত। কিন্তু, ভারতবর্ষের মূল সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে তা হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।’
উগ্র হিন্দুত্ববাদ মাথাচাড়া দেয়ায় মোদির নিরবতা প্রসঙ্গে সমালোচনা করেছেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছেন, ‘ঘর ওয়াপসি’ (ঘরে ফেরা), চার্চে হামলা বা উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচার প্রসঙ্গে অনেকদিন ধরেই নিরব রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার কাছ থেকে কথার চেয়ে কাজের প্রত্যাশাই বেশি ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হলে অমর্ত্য সেন সাফ জানিয়েছিলেন, ‘মোদি ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হন, তা তিনি চান না।’
মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০২ সালের ভয়াবহ দাঙ্গার কথা মনে করিয়ে দিয়ে অমর্ত্য সেন বলেছেন, সেই কলঙ্ক মুছে ফেলা মোদির পক্ষে সম্ভব নয়।
২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গায় মুসলিম হত্যার জন্য মোদিকে দায়ী করা হয়
ভারতের সেকুলার ঐতিহ্যের কথা বর্তমান বিজেপি সরকারকে মনে করিয়ে দিতে তিনি মুসলিম বাদশা আকবর এবং বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
মোদি এবং তার দল উন্নয়ন প্রসঙ্গে কথায় কথায় গুজরাট মডেলের কথা তুলে ধরলেও অমর্ত্য সেন প্রচারের সেই ফানুসও কার্যত ফুটো করে দিয়েছেন। বিহারের মতো রাজ্যের চেয়েও গুজরাট অপুষ্টি বা অন্যান্য মানবিক সূচকে পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষা ও উন্নয়নে কেরালা মডেল গুজরাটের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন অমর্ত্য সেন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ১৩ মাসে মোদি সরকার যেভাবে একের পর এক হস্তক্ষেপ করছে তা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন অমর্ত্য সেন। এ প্রসঙ্গে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ, বিভিন্ন আইআইটি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস এবং আইআইএম-এর উদাহরণ তুলে ধরেছেন অমর্ত্য সেন। বিজেপি যেভাবে তাদের হিন্দুত্বের কর্মসূচি এ ধরণের মেধা চর্চা কেন্দ্রগুলোর উপর চাপানোর চেষ্টা করছে তার ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন এ. সেতুমাধবন। তার জায়গায় আরএসএসের একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এর নবনিযুক্ত চেয়ারপার্সন লোকেশ চন্দ্র প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, মহাত্মা গান্ধীর চেয়েও বড় মাপের ব্যক্তিত্ব নরেন্দ্র মোদি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্ট্রিকাল রিসার্চ-এর বর্তমান চেয়ারপার্সন সুদর্শন রাওয়ের ইতিহাসে কোনো গবেষণাই নেই। তিনি একটি নিবন্ধে দাবি করেছেন ভারতের জাতপাতের বিভেদ দেশের নাকি অনেক উপকার করেছে! অমর্ত্য সেন এভাবে উদাহরণ দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্রে কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদ থেকে তাকে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তাকে সরে যেতে বাধ্য করেছিল বলে আগেই জানিয়েছেন অমর্ত্য সেন। এবার বিজেপি তথা মোদি সরকারের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করলেন তিনি। ‘নিউ ইয়র্ক রিভিউ অফ বুকস’–এ আগামী আগস্ট মাসে চার হাজার শব্দের একটি লেখা প্রকাশিত হবে তার। সেখানে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার অপসারণসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। –রেডিও তেহরান