অমুসলিমদের সাথে সৌহার্দ্য বাড়াচ্ছে ব্রিটেনের রমজান টেন্ট প্রকল্প
যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ছাত্ররা তাদের পরিবার থেকে রমজান মাসের অধিকাংশ সময় বিচ্ছিন্ন থাকেন। এ সময় আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন এবং অভাবি মানুষের সেবা করার জন্য ছাত্রসহ সব পেশার মানুষ উপযুক্ত সুযোগ খুঁজে থাকেন। রোজা রাখার কারণে খাবারের যে অংশ অবশিষ্ট থেকে যায় তা অভাবি লোকদের মাঝে বিতরণ করে দেবে সে চিন্তাও মানুষের মাথায় সব সময় আসে না। উপরন্তু সমাজের মধ্যে এমন অমুসলিমদেরও বসবাস যারা রমজান সম্পর্কে জানতে চায় কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা পায়। রমজান বা ঈদে পরিবার থেকে দূরে থাকেন এমন তরুণ বিশেষত পারিবারিক পরিবেশে থাকা সমমনা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ‘রমজান টেন্ট প্রকল্প’। এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত তরুণ মুসলিম ছাত্রদের তাদের সমাজের সেবা করার এবং নেতৃত্বে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। সমাজের গৃহহীন সদস্যদের আহ্বান জানানো হয় এবং উৎসাহিত করা হয় এখানে যোগ দেয়ার। আর উদ্বৃত্ত খাবার রমজান টেন্ট প্রকল্পে আশ্রিতদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা টেন্টে আসেন তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে অমুসলিম। রমজান টেন্ট প্রকল্প ইসলামের প্রকৃত চেতনা শিক্ষা, বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় এবং সমাজের পারস্পরিক যোগাযোগের সূচনা ঘটায়।২০১১ সালে ওমর সালহা এই প্রকল্প গড়ে তোলেন এবং কর্মঠ তরুণ শিক্ষার্থীদের হাতে এর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ৫টি শহরে সেবা দিচ্ছে। এর ফলে অন্য যুবকদের সুযোগ হচ্ছে তাদের সমাজের সেবা করার। একই সাথে ক্রমশ তাদের নেতৃত্বের প্রসার ঘটাচ্ছে। প্রকল্প চালুর পর থেকে তারা ১০ হাজারেরও বেশি জনকে খাবার পরিবেশন করেছে এবং আজ রমজান টেন্ট প্রকল্প অধ্যাপক তারিক রমাদানের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি নামকরা নিবন্ধিত অরাজনৈতিক ও অলাভজন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৩টি শহর (লন্ড, মেনচেস্টার ও প্লেমাউথ) এবং একই সঙ্গে তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও জাম্বিয়ার এনডোলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ উদ্যোগের ফলে অনেক ব্যক্তির জীবনধারা পাল্টে গেছে।রমজান টেন্ট প্রকল্পের এক স্বেচ্ছাসেবী বলছিলেন, কীভাবে এই প্রকল্প তার জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ‘আমি এ বছরই এই প্রকল্পে কাজ শুরু করেছি। আমার সাথে আরো দুটি মেয়ের পরিচয় হয়েছে গত সপ্তাহে এবং তাদের সাথে মিলিত হয়ে মনে হচ্ছে আমরা যেন কত দিনের চেনা। আমরা যেভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে আমরা পরস্পর এক গভীর সংঘবদ্ধ পরিবারের সদস্য’।রমজান টেন্ট প্রকল্পের ওপেন ইফতার কর্মসূচি বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দেয়। জুলিয়া মালেক নামের একজন এখানে অংশ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রতি রাতেই আমি টেন্টে যাই, বিভিন্ন ঘরানার মানুষের সাথে মিশি, সেখানে কথোপকথন যতই ছোট হোক না কেন আমি এই অনুভূতি নিয়ে ফিরি যে, এটা ছিল অর্থপূর্ণ’।