দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত জয়

Playওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল রোববার বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেট হারিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতা এনেছে। ফলে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনেও। প্রথম ম্যাচে হেরে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ে ফিরেছে টাইগাররা। আর এই জয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। কারণ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলার জন্য এই সিরিজে একটি জয়ই দরকার ছিল টাইগারদের। আর সেই কাক্সিক্ষত জয়টা পেয়ে গেল বাংলাদেশ। ফলে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলতে আর কোন বাধা থাকবে না টাইগারদের। গতকাল বোলাররাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৬২ রানে আটকে জয়ের পথটা সহজ করে দেয়। তাই জয়ের বাকি কাজটা সারতে তেমন কোন কষ্ট করতে হয়নি ব্যাটসম্যানদের। ২৭.৪ ওভার খেলে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান করে ৭ উইকেটে জয় পায় মাশরাফিরা। সৌম্য সরকার হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ১৬৩ রান। টার্গেটটা হাতের মুঠোয়ই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে অযথা ব্যস্ততা দেখালেন ওপেনার তামিম ইকবাল। আর মাত্র ৫ রানেই তাকে ফিরতে হলো দলকে বিপদে ফেলে। রাবাদার বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড তামিম। লিটন সরকার নেমেও ভালো করতে পারলেন না। দলীয় ২৪ রানে রাবাদার বলেই উইকেট খোয়ালেন ১৭ রান করে। ফলে ২৪ রানে প্রথম দুই উইকেট হারিয়ে চাপেই পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে ওপেনার সৌম্য সরকার আর রিয়াদ মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেয়। কারণ এই জুটি ভাংগার আগেই বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ১৫৯ রানে। এই জুটির সংগ্রহ ১৩৫ রান। রিয়াদের আউটে ভাংগে এই সফল জুটি। তবে আ্যবোর্টের বলে আমলার হাতে ক্যাচ হওয়ার আগে রিয়াদ ৬৪ বলে করেন ৫০ রান। ৪৭ বলে ৫০ করা সৌম্য সরকার ৮৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৭৯ বলে ১৩ টি চার আর এক ছয়ে ৮৮ রান করেন সৌম্য। সাকিব ব্যাট করতে নামলেও কোন রান করতে পারেনি। এর আগেই জয় পায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে রাবাদা একাই নেন দুই উইকেট। আ্যবোর্ট নেন একটি উইকেট।

টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা অল আউট হয় ১৬২ রানে। দলের পক্ষে কোন ব্যাটসম্যানই ভালো স্কোর করতে পারেনি। দলের পক্ষে ডু প্লেসিস ৪১ আর বেহারডিয়েন ৩৬ রান করে দলের স্কোরটা ১৬২ রানে নিয়ে যায়। না হলে আরো কম রানেই আটকে যেতে পারতো সফরকারীরা। গতকাল আগে ব্যাট করতে নেমেই টাইগার বোলারদের বোলিং আক্রমণে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। মুস্তাফিজ-নাসির-রুবেলের বোলিং আক্রমণে একের পর এক উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আগে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৬ রানেই প্রথম উইকেট হারায় দলটি। আর বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার ডি কককে আউট করেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ হওয়ার আগে ডি কক করেন ২ রান। পরের উইকেটটি নেন রুবেল হোসেন। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই হাশিম আমলাকে সরাসরি বোল্ড করেন রুবেল। দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় স্কোর তখন ৪৫। তবে আমলা আউট হওয়ার আগে ২২ রান করেন। মুস্তাফিজ আর রুবেলের পর সফল আঘাত হানেন নাসির হোসেন। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলে রুশোকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান নাসির হোসেন। ফলে দলীয় ৫৯ রানেই দক্ষিণ আফ্রিকার নেই প্রথম তিন উইকেট। ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের বোলিংয়ে টিকতে পারেনি মিলারও। মাত্র ৮ রান করে তাকে ফিরতে হয় রিয়াদের বলে মাশরাফিকে ক্যাচ দিয়ে। দলীয় রান তখন ৭৪। দক্ষিণ আফ্রিকা শতরানে পৌঁছানোর আগেই আরো একটি উইকেট নেন টাইগাররা। দলীয় ৯৩ রানে নাসিরের দ্বিতীয় শিকার দক্ষিণ আফ্রিকার সেট হওয়া ব্যাটসম্যান ডু প্লে¬সিস। নাসিরের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ হওয়ার আগে ডু প্লেসিস করেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান। ফলে শতরানের আগেই টাইগাররা তুলে নেয় ৫ উইকেট। দলীয় ১০০ রানে মুস্তাফিজুর নেন তার দ্বিতীয় উইকেট। এবার তার শিকার ডুমুনি। ডুমুনি করেন ১৩ রান। দলীয় ১১৬ রানে বাংলাদেশ পায় সপ্তম উইকেট। এবার মরিসকে আউট করে রুবেল নেন তার দ্বিতীয় উইকেট। মরিস আউট হওয়ার আগে করেন ১৬ রান। ফলে ১১৬ রানেই দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় প্রথম ৭ উইকেট। ফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় স্কোর করার আশা প্রায় শেষ হয় দলটির। তারপরও রাবাদা, অ্যাবোট আর রেহারডিয়েন মিলে স্কোরটা বড় করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। কারণ ১৬২ রানেই থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। দলটি খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভার। ৪৬ রানেই শেষ দলটির সবকটি উইকেট। আউট হওয়ার আগে রেহারডিয়েন করেন ৩৪ রান। বাংলাদেশের পক্ষে মুস্তাফিজুর রহমান আর নাসির নেন তিনটি করে উইকেট। রুবেল দুটি উইকেট নিলেও বাকি দুটি উইকেট নেন মাশরাফি আর রিয়াদ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

দক্ষিণ আফ্রিকা—-১৬২/১০ (৪৬ ওভার)

বাংলাদেশ———-১৬৭/৩ (২৭.৪ ওভার)

বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button