ব্রিটেনে মাহে রমজান : আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব প্রতিযোগিতা
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: ‘এত দূরে সাত সমুদ্র তেরো নদীর এপারেও আপনারা নামাজ নিয়ে এসেছেন? রোজা নিয়ে এসেছেন?’ কথাগুলো নাম না জানা এক ব্যক্তির। কথাগুলো আমাকে বলেছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলমান, যিনি বিলাতে এসেছিলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর। তিনি ইন্তেকাল করেছেন বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষ প্রান্তে এসে। তত দিনে ব্রিটেনে মুসলমানদের অবস্থার হয়েছে আমূল পরিবর্তন। জীবদ্দশায় তিনি দেখে গেছেন তাজমহলের আদলে তৈরী গম্বুজ ও মিনারবিশিষ্ট ইস্ট লন্ডন মসজিদ। আরো দেখে গেছেন জুমা, ঈদ ও তারাবির নামাজে হাজার হাজার মানুষের ঢল।
লন্ডন পশ্চিমা জগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই শহরকে ইউরোপের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। লন্ডন শহরের জনসংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৮৫ লাখ। মুসলমানদের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১১ লাখ, যা গোটা জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ।
গোটা লন্ডন শহরে সর্বমোট ৩৩টি স্থানীয় সরকার রয়েছে। এ স্থানীয় সরকারগুলোকে বারা কাউন্সিল বা সংক্ষেপে বারা বলা হয়। ইস্ট লন্ডন মসজিদের অবস্থান হচ্ছে টাওয়ার হ্যামলেটস বারাতে। ব্রিটিশ সংসদ ভবন, হোয়াইট হল এবং প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে পাতাল রেলে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে হচ্ছে লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস। এখানে মাত্র তিন বর্গমাইলের মধ্যে এক লাখেরও অধিক মুসলমান বসবাস করেন। আবার এদের ৯০ শতাংশের বেশি হচ্ছেন বাংলাদেশী মুসলমান। শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসে মসজিদের সংখ্যা হচ্ছে ৪০-এরও বেশি। প্রতিটি গলিতে একটি করে মসজিদ। জোহর বা আসরের নামাজের সময় আপনি যদি হোয়াইট চ্যাপেল হাইরোড দিয়ে হাঁটেন, তখন একাধিক মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি শুনতে পাবেন। টাওয়ার হ্যামলেটসের বাইরে বেশি মুসলমান বাস করেন নিউহাম ও রেডব্রিজ বারাতে। যুক্তরাজ্যে মসজিদের সংখ্যা ১৬ শ’রও অধিক। লন্ডনে মসজিদের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় চার শ’র মতো। নামকরা মসজিদগুলোর মধ্যে হচ্ছে, আরবদের তৈরী রিজেন্ট পার্ক মসজিদ এবং হ্যকনি বারাতে তুর্কিদের তৈরী সোলায়মানিয়া মসজিদ।
ছাত্র হিসেবে ব্রিটেনে আসি ’৭০-এর দশকের প্রথম দিকে। ওই দশকে পাশ্চাত্যে মুসলমান সমাজের বাইরে রমজান সম্পর্কে সাধারণ জনগণের তেমন একটা ধারণা ছিল না। ’৮০-এর দশক থেকেই রমজান সম্পর্কে সচেতনতা শুরু হয়। যত দূর মনে পড়ে, ওই সময়ে বিবিসি রেডিও মাহে রমজান সম্পর্কে একটি কথিকা প্রচার করেছিল। ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে আমি যেদিন লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারির সনদ গ্রহণ করি, সে দিনটা ছিল মাহে রমজানের দিন। সনদ প্রদানের দিনে ডিনারে অংশগ্রহণ অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু রমজানের কারণে মুসলমান ছাত্রদেরকে ডিনার থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এখন ইউরোপ এবং আমেরিকার সর্বত্র, প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডারে রমজান ও ঈদ স্থান করে নিয়েছে। এ বছরের মে মাসে আমেরিকায় গিয়ে শুনলাম, নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ২০১৬ সাল থেকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনকে সব স্কুলের জন্য সাধারণ ছুটির দিন ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন হোয়াইট হাউজে। এর পর থেকে প্রতি বছরই মুসলমানদের জন্য ইফতার মাহফিল হয়ে আসছে হোয়াইট হাউজে। ব্রিটেনেও সরকারিভাবে রমজানকে খোশ আমদেদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি প্রদান করেন এবং ঈদের শুভেচ্ছাও জানান। এবারে জার্মান প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা মার্কেল গত ২ জুলাই বার্লিনে মুসলিম কমিউনিটির দেয়া একটি ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, ‘ইসলাম হচ্ছে জার্মানির অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ মাহে রমজানের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অমুসলিমদের মধ্যেও। কিছু দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ নগরীতে কয়েকজন শিক্ষক গরিবদের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং মুসলমান ছাত্রদের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে রোজা রাখছেন। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুসলমান পেশাজীবীদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের অমুসলিম সহযোগীরাও সুদীর্ঘ সাড়ে উনিশ ঘণ্টা রোজা পালন করছেন। এটি কোনো ছোটখাটো ঘটনা নয়। ইসলাম যে সার্বজনীন এবং মাহে রমজান সত্যিই যে তাকওয়ার মাস, এটি তার একটা প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসে মাহে রমজান যেন উৎসবের মাস। এ সময় প্রতিটি মসজিদে মুসল্লিদের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। উল্লেখ করা প্রয়োজন, লন্ডন শহরের খুব কম মসজিদেই মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা আছে। ইস্ট লন্ডন মসজিদে এক কোটি পাউন্ড স্টার্লিং ব্যয় করে মহিলাদের নামাজের জন্য সুব্যবস্থা করা হয়েছে; এর নাম দেয়া হয়েছে মরিয়ম সেন্টার। পুরো মসজিদ কমপ্লেক্সটি, যার মধ্যে রয়েছে লন্ডন মুসলিম সেন্টার ও মরিয়ম সেন্টারওÑ তৈরি করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে দুই কোটি ২০ লাখ পাউন্ড স্টার্লিং। আর এ রমজান মাসেই মসজিদসংলগ্ন এবং ১৮৯৯-তে নির্মিত ইহুদিদের উপাসনালয় (সিনাগগ) খরিদ করা হয়েছে ১৫ লাখ পাউন্ড স্টার্লিংয়ের বিনিময়ে মসজিদকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য। এই বিশাল অঙ্কের সঙ্কুলান হয়েছে মুসল্লিদের আর্থিক কোরবানির মাধ্যমে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদে ইতিকাফের জন্য জায়গা পাওয়া বেশ দুরূহ। রমজান শুরু হওয়ার আগেই দরখাস্ত করতে হয় ইতিকাফের জন্য। লটারির মাধ্যমে যাদের নাম ওঠে, শুধু তারাই ইতিকাফ করার সুযোগ পান। এ বছর ৮৪টি ইতিকাফের স্থানের জন্য আবেদন পড়েছিল ৩৫০টি।
তারাবির নামাজের সময় দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে, সাইকেলে চড়ে, গাড়িতে করে এবং বাসে চড়ে হাজার হাজার মানুষ তারাবির নামাজ পড়তে আসেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাদা, কালো, এশিয়ানসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর, বিভিন্ন আয়ের ও বয়সের লোক। তাদের বেশির ভাগই যুবক। এক রাতে দেখলাম একজন মুসল্লি ব্রিটেনের সবচেয়ে দামি গাড়ি রোলস রয়েস নিজে ড্রাইভ করে নামাজ পড়তে এসেছেন। তারাবির নামাজ শেষ হলে মনে হয়, মানুষ যেন উৎসব শেষে বাড়ি ফিরছে। আট রাকাত তারাবির নামাজ শেষ হয় রাত ১২টায় এবং ২০ রাকাত শেষ হয় রাত ১টায়। আর কদরের রাতÑ সে যেন এক ‘এলাহি কাণ্ড’। ৮ থেকে ১০ হাজার মুসল্লি কদরের রাতে মসজিদে আসেন। বিশেষ করে রমজানের শেষ ১০ দিনে তাহাজ্জুদের সময় হাজারও মানুষের ঢল নামে ইস্ট লন্ডন মসজিদে। এবার রাত ছোট হওয়ায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছেন জামাতে তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যবস্থা না করতে। গতবার কদরের রাতে দেখলাম, তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য একদল মুসল্লি যখন মসজিদের ভেতরে, অন্য আরেক দল মুসল্লি বাইরে অপেক্ষা করছেন দ্বিতীয় জামাতের জন্য। নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্য তারাবি ও তাহাজ্জুদের পর মসজিদের চার পাশ দিয়ে একটু হাঁটলাম। সে এক মোহনীয় দৃশ্য। চার পাশে লোকে লোকারণ্য। মসজিদের পেছনের রাস্তা ফিল্ডগেট স্ট্রিট বন্ধ হওয়ার মতো। সামনের রাস্তা হোয়াইট চ্যাপেল হাইরোডে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। গাড়িগুলো পিঁপড়ার গতিতে চলছে। এ দৃশ্যকে সকাল ১০টার ঢাকা শহরের ব্যস্ততম মতিঝিল কমার্শিয়াল এলাকার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। অথচ তখন এখানে রাত প্রায় দেড়টা।
যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন, যাতে করে তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারেন। রমজান মাস কৃচ্ছ্র পালনের। এই এক মাসের প্রশিক্ষণ ঈমানদারদের বছরের বাকি সময়ের জন্য শরীর, মন ও আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত করে। ওয়ালটার মিশেল নামের আমেরিকার এক মনস্তত্ত্ববিদ স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রি-স্কুল শিশুদের আত্মনিয়ন্ত্রণের ওপর একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। পরীক্ষাটি ছিল অত্যন্ত সহজ। শিশুরা চাইলে একটি মিষ্টি সাথে সাথে খেতে পারে অথবা একটি কক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে। যারা অপেক্ষা করবে তাদেরকে অপেক্ষা শেষে দু’টি মিষ্টি দেয়া হবে। এ গবেষণার ফলাফল বিস্ময়কর বলে প্রমাণিত হয়। যে শিশুরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল তারা জীবনের সব ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সফলতা অর্জন করতে পেরেছিল। একজন রোজাদার সারা দিন অপেক্ষা করে দিনের শেষে ইফতার করার মধ্য দিয়ে যে মানসিক শক্তি অর্জন করে, তা তার জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে যে বিরাট সাফল্য এনে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মনস্তত্ত্ববিদ মিশেলের পরীক্ষার ফলাফল এ সত্যের পক্ষেই আরেকটি যুক্তি। তার এ পরীক্ষা আরো প্রমাণ করে, ইসলাম হচ্ছে ফিতরাতের ধর্ম।
রমজান মাসেই আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেছেন মানুষের হেদায়াতের জন্য (সূরা বাকারা ২ : ১৮৫), অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য (সূরা ইব্রাহিম ১৪ : ১)। সঙ্ঘাতময় এ পৃথিবীতে যখন ইসলামকে সন্ত্রাসের সাথে তুলনা করা হচ্ছে তখন খুব কম সংখ্যায় হলেও অমুসলিমরা মাহে রমজানের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করছেন। এটি প্রমাণ করে, ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা মানবতার জন্য। ২০১১ সালে ব্রিটেনের জনসংখ্যা জরিপে বলা হয়, এক লাখেরও বেশি অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে শতকরা ৬৬ ভাগই মহিলা। এই জরিপে আরো বলা হয়, ব্রিটেনে প্রতি বছর পাঁচ-ছয় হাজার অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন।
আল কুরআন এসেছে মানুষের হেদায়াতের জন্য। রাসূল সা:-এর সময় কুরআনের কোনো তাফসির ছিল না। তাঁর জীবনটাই ছিল কুরআনের বাস্তব রূপ। সাহাবায়ে কেরাম যেহেতু কুরআনের ভাষা জানতেন, তাই তারা সরাসরি কুরআনকে বুঝতে ও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। কুরআন থেকে হেদায়াত পেতে হলে কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। হাদিসে আছে, সাহাবায়ে কেরাম মাহে রমজানে বেশি বেশি করে কুরআন অধ্যয়ন করতেন, কুরআনের গভীরে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, কুরআনের অন্তর্নিহিত মাহাত্ম্য বোঝার চেষ্টা করতেন। মাহে রমজানে জিব্রাইল আ: আল্লাহর রাসূল সা:-এর কাছে এসে একসাথে কুরআন অধ্যয়ন করতেন।
কুরআনের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক বাড়ানো এবং কুরআনকে জানা ও বোঝার আগ্রহ সৃষ্টির একটি উত্তম মাধ্যম হচ্ছে তারাবির নামাজে কুরআন তেলাওয়াত। ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রতি বছর দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে নামকরা কারিদের নিয়ে আসা হয় তারাবি পড়ানোর জন্য। এ বছরে পাঁচজন কারি তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন। সবারই কুরআন তেলাওয়াত অত্যন্ত সুন্দর। কিন্তু মিসরের কারি আহমদ রাগিব রামাদানের তেলাওয়াত অতুলনীয়। তিনি যখন তেলাওয়াত করেন তখন কুরআনের প্রতিটি শব্দ অন্তরে দোলা দেয় এবং এতে করে ঈমান বেড়ে যায় (সূরা আনফাল ৮ : ৩)। রাতের নামাজের একটি ক্লাইমেক্স হচ্ছে বিতর নামাজ। এখানে আরব দেশের মতো বিতরের নামাজ প্রথমে দুই রাকাত এবং আলাদাভাবে আরো এক রাকাত পড়া হয়। আর শেষের রাকাতে রুকু করে সিজদায় যাওয়ার আগে হাত তুলে সুদীর্ঘ মুনাজাত করা হয়। ইমাম সাহেব দোয়া করতে থাকেন আর মুসল্লিরা আমিন আমিন বলতে থাকেন। অনেকেই চোখের পানি ফেলে জোরে জোরে কাঁদতে থাকেন- এতে এক স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিজে উপস্থিত না থাকলে এ অনুভূতি বোঝা সম্ভব নয়। যে দেশে শরাব ও উলঙ্গপনার ছড়াছড়ি, সেখানে রমজানের এ পবিত্র রাতগুলোতে যে আধ্যাত্মিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়, তা অনেকটা অকল্পনীয়। সৎকাজে একে অপরের সাথে সব সময় যেন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত (সূরা বাকারা ২ : ১৪৮)। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, আমি জীবন ও মৃত্যুকে সৃষ্টি করেছি এটা দেখার জন্য যে, উত্তম আমলের প্রতিযোগিতায় তোমরা কারা অগ্রসর (সূরা মুলক ৬৭ : ২)। এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার যে, দিনে আট ঘণ্টা কাজ করে, ১৯ ঘণ্টা রোজা রাখার পর কেমন করে এ মানুষেরা তাদের প্রভুর জন্য রাত জেগে থাকেন ইবাদতে মশগুল। এই মানসিক শক্তি একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই তার সর্বোত্তম সৃষ্টিকে (সূরা তিন ৯৫ : ৪) উপহার দিতে পারেন। বস্তুবাদ ও ভোগবাদের ওপর দিয়ে যখন আধ্যাত্মিকতার প্লাবন শুরু হয়, তখন এ প্লাবনে অন্য সব কিছু খড়কুটার মতো ভেসে যায় মাহে রমজানের শেষ দশ দিনে লন্ডন থেকে এটিই হচ্ছে আমার অন্তরের অনুভূতি।