ব্রাদারহুড নেতাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম
আবুল কালাম আজাদ মিসর: সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বর্বর গণহত্যায় ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড প্রধান মুহাম্মাদ বদিইসহ অন্য নেতাদের ছেলেমেয়ে নিহত হওয়ায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। অপর দিকে শোকার্ত পরিবারের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং মুরসির সমর্থনে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছে সমর্থকেরা। রাবেয়া স্কয়ার, আল নাহাদা স্কয়ার ও রামসিস স্কয়ারের গণহত্যায় দলের প্রধান মুহাম্মাদ বদিইর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আম্মার বদিই ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিজ পার্টির মহাসচিব মুহাম্মাদ বেলতাগির মেয়ে আসমা বেলতাগি, মুরসির মিডিয়াবিষয়ক উপদেষ্টা আহমাদ আবদুল আজিজের মেয়ে সাংবাদিক হাবিবা, মানসুরা জেলার নেতা আবু সায়ালার মেয়ে হালাহসহ একাধিক নেতার সন্তানেরা শহিদ হয়েছেন।
রাবেয়া স্কয়ারের কিশোরী কন্যা খ্যাত বেলতাগি পরিবারের একমাত্র মেয়ে মাত্র ১৭ বছরের আসমা। ২৫ জানুয়ারি বিপ্লবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। রাবেয়া স্কয়ারে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে বাবার পাশাপাশি তিনিও ছিলেন বেশ সরব। প্রতিটি তাঁবুতে ছুটে যেতেন কুরআন, হাদিস ও ইসলামি সাহিত্য নিয়ে। মেয়েদের শিা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে প্রেরণা দিতেন সর্বদা। তার সহপাঠী জিহান শায়াবান জানান, স্কুলের সেরা ছাত্রী আসমা রাবেয়া স্কয়ারের শুরুর দিন থেকে এক দিনের জন্যও অন্য কোথাও যাননি। মায়ের সাথে তাঁবুতে থাকতেন। রাতের বেলায় মহিলাদের সাথে তাহাজ্জুদ পড়তেন আর দিনের বেলায় বিক্ষোভ করে যেতেন। আর তিনি খুব বই পড়তে ভালোবাসতেন। রাতে ইবাদত আর দিনের বেলায় বিক্ষোভ করে যেতেন। কখনো তার কান্তি ছিল না। তার মা জানান, তাকে আমি কখনো কুরআন তেলাওয়াত থেকে দূরে থাকতে দেখিনি। সবসময় ব্যাগে কুরআন শরিফ থাকত। সময় পেলেই তাঁবুতে বসে বা রাতের বেলায় ময়দানের লাইট পোস্টের আলোতে কুরআন পড়ত। গণহত্যার সময় মায়ের পাশেই ছিলেন আসমা। এইচএসসি পরীক্ষার্থী আসমা বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ১৪ আগস্ট বুধবার সেনাদের গণহত্যায় তার সব স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায়। আম্মার হাসান ও হিশামুদ্দিনের আদরের বোন আসমা। পেছন থেকে বুলেটের আঘাতে শহীদ হন তিনি। মৃত্যুর সময় তার ওসিয়ত ছিল জীবন গেলেও সেনা শাসন আর ফিরে না আসুক।
ব্রাদারহুড প্রধান মুহাম্মাদ বদিইর বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আম্মার। দেশজুড়ে সেনা অভ্যত্থানবিরোধী আন্দোলনে সর্বদা ময়দানে কাজ করে গেছেন। দুই ছেলেমেয়ের পিতা। রাবেয়া স্কয়ারের অবস্থান কর্মসূচি উচ্ছেদের পরও পিছু না হটে রামসিস স্কয়ারে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। ১০৩ জনের গণহত্যার মধ্যে তিনিও ১৭ আগস্ট শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হয়ে শনিবার মারা যান। রোববার নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। তিনি বাবার মতোই ত্যাগ আর বিচণতার মাধ্যমে কাজ করে গেছেন। শেষবারের মতো ছেলেকে দেখতে আসায় গোয়েন্দারা তার পিছু নেয়। ছেলে শহীদ হওয়ার এক দিন পরই গ্রেফতার হন বাবা।
হালাহ মানছুরা জেলার ব্রাদারহুড নেতা আবু সায়ালার মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। প্রথম দিকে যারা শহীদ হয়েছেন তিনি তাদের অন্যতম। মুরসির সমর্থনে জেলায় চলমান বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করলে মোবারকের সন্ত্রাসী বাহিনী বিক্ষোভ হামলা করে। গুলি ও ধারালো চাকুর আঘাতে আহত হয়ে এক দিন হাসপাতালে থেকে শহীদ হয়ে যান তিনি।
মুরসির মিডিয়াবিষয়ক উপদেষ্টা আহমাদ আবদুর আজিজের মেয়ে হাবিবা। গালফ নিউজের সাংবাদিক। রাবেয়া স্কয়ারের মিডিয়া সেন্টারেই বেশি সময় পার করতেন। সেনাবিরোধী আন্দোলনের সময় রাবেয়া স্কয়ারে থাকতে বুধবার তিনিও শাহাদত বরণ করেন। তার শাহাদতে সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। পাঁচ হাজারের অধিক নিহত পরিবারের সাথেও ব্রাদারহুড নেতাদের পরিবারেও চলমান শোক মিসরের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আরো এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।