কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির কারণে ভয়াবহ সংকটে রেস্টুরেন্ট
কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির কারণে ব্রিটেনের বাংলাদেশি এবং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টগুলো ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। রেস্টুরেন্ট মালিকরা বলছেন, কারির চাহিদা কমে যাওয়া কিংবা ক্রেতার অভাব রেস্টুরেন্টগুলোতে নেই। বরং স্টাফ সংকটের কারণে রেস্টুরেন্ট মালিকরা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাঙালি বেশ কয়েকজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বললেন, বেশি বেতন দিয়েও এখন রেস্টুরেন্টে কাজ করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, একদিকে ইমিগ্রেশন আইনের কড়াকড়ির কারণে বিদেশ থেকে লোক আনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ব্রিটেনে যারা নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি তারাও রেস্টুরেন্ট খাতে কাজ করতে আগ্রহী নয়।
এসব ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের নিজেদের সন্তানরাও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় আগ্রহী নয়। যে কারণে অনেকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকে ব্যবসা ধরে রাখলেও স্টাফ সংকটের কারণে বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিই বলেন, রেস্টুরেন্ট খাতে দক্ষকর্মীর সংকট এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সর্বশেষ সরকার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য যে ৩৫ হাজার পাউন্ড বেতন নির্ধারণ করেছে তাতে সংকট আরো বেড়েছে। নতুন ওই নিয়মে বলা হয়, ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আগত ব্যক্তিরা ছয় বছরের বেশি ব্রিটেনে কাজ করতে হলে তাদের বার্ষিক বেতন কমপক্ষে ৩৫ হাজার পাউন্ড হতে হবে। ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে রেস্টুরেস্ট খাতের অনেক দক্ষ কর্মীকে ব্রিটেন ছাড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনাম আলী বলেন, রেস্টুরেন্ট খাতে স্টাফ সংকট ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিরা এ খাতে কাজ করতে আগ্রহী নন। আবার ব্রিটিশ তরুণরাও ইন্ডিয়ান স্টাইল কিচেনে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। অথচ সরকার বলছে, ব্রিটেনেই দক্ষ শেফ এবং স্টাফ তৈরি করতে হবে। এনাম আলী আরো বলেন, শেফদের শর্টেস্ট ওকুপেশান লিস্টে রাখা হলেও তার কোনো সুবিধা পাচ্ছে না রেস্টুরেন্টগুলো। কেননা, ওই লিস্টে থাকার কারণে শেফদের বেতন বছরে ২৯ হাজার ৫৭০ পাউন্ড হলেই চলে। কিন্তু টেকওয়েগুলো ওই লিস্টে নেই। যার কারণে সেসব রেস্টুরেন্ট টেকওয়ে বিক্রি করে তারাও ওই সুবিধা পাবে না। অর্থ্যাৎ এসব রেস্টুরেন্টের শেফের বেতন বছরে ৩৫ হাজার পাউন্ড হতে হবে। এনাম আলীর মতে, ৯৯ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি এবং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট টেকওয়ে বিক্রি করে। ফলে শেফদের শর্টেজ ওকুপেশন লিস্টে রাখা হলেও এর কোনো সুবিধা তারা পাচ্ছেন না। এনাম আলী আরো বলেন, ব্রিটেনে যারা দক্ষ শেফ আছেন তারা বিভিন্ন রেস্টরেন্টে কর্মরত। নতুন করে নিয়োগ দেয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে আর দক্ষ শেফ পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুকিম আহমদ বলেন, ইমিগ্রেশন রেইড, স্টাফ নিয়োগে নানা নিয়ম কানুনের কারণে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করার মত পরিস্থিতি আর নেই। তিনি বলেন, তাঁর মোট ১২টি রেস্টুরেন্ট ছিলো। এরমধ্যে আটটি ছিলো ক্যাফে নাজ চেইনের। সবগুলো রেস্টুরেন্ট তিনি বিক্রি করে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থেকে বের হয়ে এসেছেন। সর্বশেষ ক্যামব্রিজের ক্যাফে নাজ রেস্টুরেন্টটি তিনি বিক্রি করে দেন গত ১৩ জুলাই রোববার।
ফারুক আহমদ নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, নর্থ লন্ডনে বেঙ্গল বার্টিজ নামে তাঁর দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এসব রেস্টুরেন্ট চালাতে তাঁকে বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। বাড়তি বেতন দিয়েও স্টাফ পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
আবছার খান সাদেক নামে অপর এক রেস্টুরেন্ট মালিক বলেন, শুধু শেফ নয়, কিচেন পর্টারও এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পছন্দমত স্টাফ পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের (বিসিএ) হিসাব মতে ব্রিটেনে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রাখে এই খাত। বর্তমান কনজারভেটিভ সরকার ইমিগ্রেশন বিষয়ে যে কড়াকড়ি আরো করেছে তাতে বিশাল রেস্টুরেন্ট খাতটি দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।