সৈকতজুড়ে পর্যটকদের ভিড়
বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এখন লাখো পর্যটকে সরগরম। ঈদে তিন কিলোমিটারের বেশি সৈকতজুড়ে পর্যটকদের জন্য বসানো হয় দুই হাজারের বেশি চেয়ার-ছাতা। কোনোটাই খালি নেই।
কক্সবাজারের হোটেলমালিকদের ভাষ্যমতে, সোমবার সমুদ্রসৈকতে সমবেত হয়েছেন এক লাখের বেশি পর্যটক। পর্যটকের আনাগোনা থাকবে আরও এক সপ্তাহ।
কক্সবাজারের পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। এখানকার প্রায় ৪০০ হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁয় রমরমা ব্যবসা চলছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে আগামী সাত দিন কক্সবাজারে ছয় লাখের মতো পর্যটকের আগমন ঘটবে। এতে তাঁদের ব্যবসা ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, এখানে ছোট-বড় ৩৯১টি হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস আছে। তাতে প্রতিদিন ৭৭ হাজার পর্যটকের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো হোটেলেই এখন কক্ষ খালি নেই। প্রতিটি হোটেল-মোটেল ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে ধরলে দৈনিক দুই কোটি টাকা এবং এক লাখের বেশি পর্যটকের দৈনিক খাবারের বিপরীতে ৫০০ টাকা করে ধরলে পাঁচ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। তা ছাড়া বিমান, সড়ক, নৌপথে যোগাযোগ, সৈকতে ছাতা ভাড়া, শামুক-ঝিনুক পণ্য, আলোকচিত্র, ভ্রাম্যমাণ দোকান, শুঁটকি, আচার, ডাব, মাছ, চিংড়ি, কুটিরশিল্পসহ পর্যটন–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায় দৈনিক লেনদেন হচ্ছে আরও অন্তত আট কোটি টাকা। এই হিসাবমতে, সাত দিনে লেনদেন দাঁড়ায় ১০৫ কোটি টাকা।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে সোমবার দেখা গেছে, পর্যটকদের জন্য বসানো চেয়ার-ছাতার একটিও খালি নেই। প্রতি ঘণ্টায় চেয়ার-ছাতার ভাড়া ৩০ টাকা। অর্থাৎ দুই হাজার ছাতা থেকে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টায় আয় হচ্ছে সাত লাখ টাকা।
বিগত পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটক তেমন না আসায় অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছিলেন এখানকার চার শতাধিক ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রী। তাঁদেরই একজন আনোয়ার হোসেন জানান, পর্যটক না থাকায় পুরো রোজার মাসে তিনি এক হাজার টাকাও আয় করতে পারেননি। এখন দৈনিক ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন।
পর্যটকের পছন্দের স্থান প্যাঁচার দ্বীপ ‘মারমেইড ইকো বিচ রিসোর্ট’। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সেবা দিতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশবান্ধব এই ইকো পল্লি। এর মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান জানান, রিসোর্টের ৮০ শতাংশ অতিথি বিদেশি পর্যটক। বিদেশিরা অনলাইনে কটেজ বুকিং নিয়ে এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। গত মৌসুমে হরতাল-অবরোধের কারণে তাঁরা বড় ধরনের লোকসান গুনেছেন। কিন্তু এখন ঈদের পর ব্যবসা জমে উঠেছে।
লাবণী পয়েন্টে হোটেল কল্লোলের ১৪১টি কক্ষের সব কটিই ঈদের আগে বুকিং হয়ে গেছে। এসব কক্ষ এর আগের তিন মাস প্রায় খালিই পড়ে ছিল। ঈদে ভালো ব্যবসা হচ্ছে বলে জানান হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দিন আহমদ।
কক্সবাজার সৈকতে শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রির দোকান আছে ১৬৫টি। পর্যটকেরা এসব দোকান থেকে নানা পণ্য কেনেন। সৈকত ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাশেম আলী জানান, প্রতিটি দোকানে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার শামুক-ঝিনুক পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধপল্লি, টেকনাফ নেচার পার্ক, দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ির পাহাড়ি ঝরনাসহ দর্শনীয় বিভিন্ন স্থান পর্যটকেরা ভ্রমণ করছেন।