ক্যামেরনের বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
রামাদান ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শফিক বলেন, আমি উদ্বিগ্ন যে ক্যামেরন আবারো উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সংযোগ ও একীকরণের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলছেন যে মুসলিমরা একীভূত হওয়ার জন্য যথেষ্ট করছে না এবং তা উগ্রবাদ লালনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। কিন্তু কথা হচ্ছে এই যথেষ্টটা কি এবং আপনি কীভাবে তা পরিমাপ করবেন। ক্যামেরনের মত প্রকাশের স্বাধীনতার মত ব্রিটিশ মূল্যবোধের বন্দনা এবং তারপর সমকামী সমতার ব্যাপারে আপত্তিকারী মুসলমানরা যেভাবেই হোক উগ্রপন্থী ও তাদের কথা বরদাশত করা হবে না বলার মধ্যে একটা বিরোধ রয়েছে। মুসলিমসহ এদেশে বসবাসকারী প্রত্যেকেরই তাদের মত প্রকাশের অবশ্যই অধিকার আছে তা সে তারা যতই অসহিষ্ণু হোক না কেন। ইতিবাচক দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, বহু মুসলিম পরিবারই যদি দেখে যে তাদের সন্তানরা উগ্রপন্থী হয়ে উঠছে সেক্ষেত্রে তাদের অপরাধী হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষায় তাদের সন্তানের পাসপোর্ট আটক করার ক্ষমতা প্রদানকে স্বাগত জানাবে।
কেজ-এর মুখপাত্র সিরি বালিভান্ট বলেন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি আইএস ও ইসলামী মৌলবাদের সমর্থনের সাথে সম্পর্কিত নয় বলে মন্তব্য করা ডেভিড ক্যামেরনের জন্য হাস্যকর।
সিআইএ-র পরিচালক জন ব্রেনান সম্প্রতি বলেন, পাশ্চাত্যের পররাষ্ট্রনীতি সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পন্ডিতরা এর সাথে একমত নন। বহুসংখ্যক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায় তাদের উদ্বুদ্ধ করার অন্যতম কারণ পররাষ্ট্রনীতি। তবে আরেকটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে যেদিকে ক্যামেরন দৃষ্টি দিচ্ছেন না। যুক্তরাজ্যে বহু মুসলমানই আর নিরাপদ বোধ করছে না এবং ক্যামেরন যে ধরনের রাজনীতি করছেন তা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাচ্ছে। আমরা লোকজনকে বলতে শুনছি, আমরা এ দেশকে আর বিশ্বাস করি না। আমরা নিরাপদ বোধ করছি না। লোকে উপলব্ধি করে যে ইসলামের আদি বিশ্বাসকে অপরাধমূলক করা হচ্ছে। আমরা যদি হৃদয়-মন জয় করতে চাই তাহলে আমাদের উন্মুক্ত বিতর্ক প্রয়োজন। আমরা লোকজনকে নীরব করে দিয়ে ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তা পেতে পারি না।
লেবার এমপি খালিদ মাহমুদ বলেন, আমরা তরুণ জনগণের সমর্থন পেয়েছি। যে তিন তরুণী দেশত্যাগ করেছে, কমিউনিটিতে আমাদের অবশ্যই তার দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা সবকিছুর জন্য রাষ্ট্রকে দায়ী করতে পারি না। আপনি যদি ধর্মীয় বিধি-নিষেধের ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন … যদি আমরা তা করতে না পারি তাহলে আমরা কীভাবে প্রত্যেককে দায়ী করব? আমরা যে সঠিক কাজ করছি তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের স্থানীয় ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এক সাথে কাজ করতে হবে।
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের মিকদাদ ভারসি বলেন, চিন্তার ব্যাপার হলো সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার প্রধান কারণ হিসেবে আমরা মতাদর্শের উপরই বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি এবং তা প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় যাতে বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদের কারণ বহুমুখী। বিষয়টি অতি সরলীকরণ করার ঝুঁকি রয়েছে। আমি মনে করি যে উগ্রবাদ বলতে কি বোঝায়: কি ধরনের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লালন ও রুদ্ধ করা হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন সমঝোতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা কি সরকার সন্ত্রাসবাদের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে তার সকল প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের এক জনমত জরিপ হয়েছে যাতে ৩৭ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের সংখ্যা হ্রাস করার নীতি সমর্থন করা হয়েছে। এ এক বিশাল সংখ্যা। সরকার কি এ সব চরম মতের ভিত্তিতেই কাজ করতে যাচ্ছে? আমি মনে করি, আমাদের ভয় যে এ পর্যন্ত ইসলামভীতির মোকাবিলা করা হয়নি।