ইরান-ছয় রাষ্ট্র সমঝোতা : আরব কেন্দ্রীক সুন্নী ব্লকে নতুন হিসাব-নিকাশ
বুধবার সউদী আরবে চেচেন প্রেসিডেন্ট রামাজান আহমদ কাদিরভকে তার ঈদোত্তর শুভেচ্ছা সফরের সময় জেদ্দার প্রাসাদে স্বাগত জানান সউদী উপযুবরাজ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের দ্বিতীয় ডেপুটি প্রধান প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ।
হামাস প্রধান খালিদ মিশালকে বাদশাহ সালমান কর্তৃক সউদী আরবে সংবর্ধনা, তুরস্ক ও মিসরের জন্য ঈদে নতুন বার্তা, লেবানিজ প্রভাবশালী নেতা সামির জাজাসহ একাধিক গালফ নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সউদী চেচেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক পরিবর্তনশীল মধ্যপ্রাচ্য প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুতবহ। ইরান-ছয় রাষ্ট্র সমঝোতা চুক্তির পর আরব দেশগুলোর সুন্নী ব্লকে দেখা দিয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশের প্রয়োজনীয়তা।
সউদী উপযুবরাজ প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক মস্কো ও প্যারিস সফরের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল একটি মেরুকরণ প্রক্রিয়া। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের পর এ ধারাবাহিকতা আরো জোরদার হয়েছে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের নানা পর্যায়ের শক্তিকেন্দ্র সমূহের মাঝে সংহতি গড়ে তোলা ও সউদী কূটনীতির বহুমুখীকরণ এবং বিশ্বরাজনীতির আবহ বিশ্লেষণে প্রিন্স মুহাম্মদের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠেছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হাসান রমজানে সউদী আরব ঘুরে আসার পর এবং গতকাল চেচেন প্রেসিডেন্ট কাদিরভের সাথে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে ফলপ্রসূ ভারসাম্য তৈরি হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মিসরের সেনাশাসক আবদুল ফাত্তাহ সিসির সাথে সাক্ষাত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিনিধি বিজেপি নেতা মুখতার আহমদ নাকভি। ইয়েমেন যুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার সউদী আরবকে সমর্থন দিলেও দোদুল্যমান কূটনৈতিক আচরণের কারণে সউদী-বাংলাদেশ সম্পর্ক দুর্লংঘ শীতলতার শিকার। বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যদি স্বকীয়তা ধরে রাখতে না পারে তাহলে আগামী দিনের মেরুকরণে তার একঘরে হয়ে পড়ার আশঙ্কা সমূহ। ১৫ কোটি মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কূটনীতি হতে হবে আরো সুস্পষ্ট ও দ্বিধামুক্ত। এ বছর নানা অপপ্রচার ও বৈরিতা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী ঈদুল ফিতরে ছিল মুসলিম ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের দুর্জেয় অগ্রযাত্রা। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, চীন, ভারতসহ সারা বিশ্বে ঈদের জামাত ছিল নতুন প্রাণপ্রাচুর্যে সমৃদ্ধ। এ বছর রমজান ও ঈদে অসংখ্য নারী-পুরুষ ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন। পবিত্র রমজানে কাবা শরীফের ইতেকাফ, শবেকদর ও কিয়ামুল্লাইল ইন্টারনেটে দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছে ইটালী, ফ্রান্স ও জার্মানীর বেশ কিছু পরিবার। এ বছর এক কোটি বিশ লাখ মানুষ ওমরাহ পালন করেন। সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ রমজানের শেষ দশ দিন কাবা সংলগ্ন সাফা প্রাসাদে অবস্থান করেন। এ সময় বিশ্বের অনেক মুসলিম শাসক ও নেতা তার সাথে হারাম শরীফেই সাক্ষাতে মিলিত হন। এ ধাররই সর্বশেষ বৈঠক ছিল চেচেন নেতার সফর। সংকটকালীন সময়ে সামগ্রিক ইসলামী অগ্রযাত্রা আর নতুন রাজনৈতিক কৌশল যুগপত প্রভাব বিস্তার করবে বলে মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ বিশ্বাস করে।