সত্য ভাষণে আপসহীন খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (রাহ.)
মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী: ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী আগ্রাসী শক্তির করাল গ্রাসে মুসলিম উম্মাহ্ জীবনস্পন্দন যখনই হয়েছে বিপন্ন, ঈমানী চেতনা যখন নিভু নিভু; তখনই কান্ডরী হয়ে এগিয়ে এসেছেন এমন কিছু সিপাহসালার যাদের স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠের বলিষ্ঠ ও সাহসী হুঙ্কারে জনসাধারণের মাঝে দীনি জজবা ও প্রেরণার সৃষ্টি হয়েছে। তেমনি একজন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সম্মানিত খতিব, এদেশের তাওহিদী জনতার অভিভাক ও মুরুব্বী, জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হযরত মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.) সেই মহামনীষীদের একজন। তিনি ছিলেন সত্যিকারে নায়েবে রাসুল। খাঁটি দেশেপ্রেমিক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। মজলুম ও নির্যাতিত অত্যাচারিতদের পক্ষে জালেমের বিরুদ্ধে আপসহীন।
মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.) ছিলেন বাংলাদশে হাতেগোনা কয়েকজন আলেমদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন। তার মতো মুহাদ্দিস, ফকীহ ও সময়ের চাহিদামাফিক কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যাদাতা-মুফাক্কির খুবই বিরল। উপমহাদেশে আলেমদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে প্রতিভার সাক্ষর রেখে যারা খ্যাতির মালা পরেছেন সেই ক্ষণজন্মা উলামায়ে কেরামের শেষ নিশান ছিলেন হযরত খতিব সাহেব (রহ.)। তাঁর তূল্য সাধক আলেম বাংলার জনবহুল জমিনে আর কবে জন্মগ্রহণ করবে তা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই ভালো জানেন। তিনি উপমহাদেশের বাইরেও আরব জাহানে, ইউরোপে এবং দূরপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে খতিব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিগত শতাব্দীর শেষভাগে মসজিদের মিম্বার থেকে যেসব বুজুর্গানে দীনের বয়ান ও খুতবায় মুসলিম উম্মাহ হারানো ঐতিহ্য, ঈমানী চেতনা ও জিহাদী উদ্দীপনা ফিরে পেয়েছিল তাদের মধ্যে ইমামে হারাম শায়খ আবদুর রহমান হোজাইফী, দিল্লির জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুলাহ বুখারী আর বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতীব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভারতের মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা ও হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে মাওলানা আবদুল্লাহ বুখারীর জুমার বয়ানের প্রভাব সমগ্র উপমহাদেশেই অনুভূত হতো।
আমাদের দেশের জাতীয় মসজিদের মিম্বার থেকে মাওলানা উবায়দুল হক সমসাময়িক বিষয়ে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে, ন্যায়, ইনসাফ ও মানবতার পক্ষে, জুলুম-নির্যাতন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, নাস্তিক-মুরতাদ-খোদাদ্রোহী, ইয়াহুদি-খ্রিস্টান শক্তি, কাদিয়ানী, বাহাঈ, ভন্ড বিশ্বাসী এনজিও মিশনারী আগ্রাসী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতি জুম্মায় যে পথনির্দেশনা দিতেন তাঁর প্রভাব সারাদেশে প্রতিফলিত হতো। তাঁর বয়ানের তেজস্বিতা এত মজবুত ছিলো যে, মানুষের হৃদয়কে তা প্রবলভাবে নাড়া দিতো। যেকোনো সঙ্কটকালীন মুহূর্তে আলেমসমাজ ও ইসলামী জনতা চেয়ে থাকতো খতিব সাহেবের পক্ষ থেকে কী নির্দেশনা আসছে।
তিনি দীর্ঘ চব্বিশ বছর জাতীয় মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে তিনি যে জোরালে বক্তব্য ও সুদৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছেন তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার প্রজ্ঞাজাত সঠিক রাহনুমায়ী নতুন করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। যে কোনো কঠিন সময়ে অকুতোভয় সৈনিকের মতো বীর মুজাহিদ হয়ে অমিত সাহস, পর্বতসম ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাথে এগিয়ে গেছেন। কোনোরূপ লোভ-লালসা, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক হুমকি-ধমকি, হয়রানি ও সমালোচনা তাকে মোটেও দুর্বল করতে পারেনি। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মসজিদে একেকজন খতিব রয়েছেন; কিন্তু বায়তুল মোকাররমের মিম্বারে দাঁড়িয়ে ইসলামের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস, তাহযীব-তামাদ্দুন রক্ষায় মাওলানা উবায়দুল হক যে ভূমিকা রেখেছেন সেটিই তাঁকে ‘খতিব’ উপাধিতে পরিচিত করে তুলেছে। খতিবে বাগদাদীর পর খতিব হিসেবে সর্বজন পরিচিত হওয়ার ঘটনা আর কারো ব্যাপারে আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা খতিব হিসেবে তাঁকেই বোঝেন, তাকেই চিনেন।
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘সত্যপ্রকাশে যে চুপ থাকে সে বোবা শয়তান।’ এবং ‘জালিম শাসকের সামনে হক কথা প্রকাশ করা সর্বোত্তম জিহাদ।’ প্রিয়নবী (সা.)-এর এই অমীয় বাণীর উপর শতভাগ আমল করে দৃঢ়চিত্তে খতিব মাওলানা উবায়দুল হক দেখিয়ে গেছেন ক্ষমতার প্রভাব আর চোখরাঙানিকে নায়েবে রাসূলগণ পরোয়া করে না। সত্যভাষণে তিনি বেশ কৌশলী, বিজ্ঞ ও পারঙ্গম ছিলেন। যাকে যেভাবে বলা দরকার সংশ্লিষ্টদের সেভাবেই বলেছেন। মহান আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশে চরম বিনয়ী, রাসূলের (সা.) সুন্নাতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কঠিন মুহূর্তে বেদনা ও দরদমাখা আকুতি; রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ও বজ্রকণ্ঠে কঠোর ও কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। ইঙ্গ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী আগ্রাসী অপশক্তির রাষ্ট্র ও ধর্মদ্রোহী কর্মতৎপরতার প্রতিবাদে তিনি ছিলেন আপসহীন। আমলাদের তোয়াজ ও প্রশাসনের সাথে আঁতাতনীতি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিলো না। যেকোনো সময় ইতিবাচক ভূমিকা তাকে জাতীয় ব্যক্তিত্বের আসনে অভিষিক্ত করেছে। বক্ষ্যমান নিবন্ধে তার বীরত্বপূর্ণ সাহসী ভূমিকার কয়েকটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যখন শিখা চিরন্তন নামের অগ্নিমশাল প্রজ্বলন করে; তখন খতিব সাহেব (রাহ.) সাহসী হুঙ্কার ছেঁড়ে বললেন, শিখা চিরন্তন সরাসরি অগ্নিপূজার শামিল। এটা কুফরি কাজ, আগুনকে সম্মান করা ইসলাম সমর্থন করে না। দেশের খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়টিকে অগ্নিপূজার শামিল বলে অভিহিত করেছেন। সরকারের উচিত, আলেমদের ধর্মীয় ব্যাখ্যা প্রদানের পর শিখা চিরন্তনের নামে অগ্নিপূজা বন্ধ করা। তিনি বললেন, আল্লাহর একত্ববাদের উপরই আমাদের ঈমান। আল্লাহর হুকুমের বাইরে সরে এলে মুমিন বা মুসলমান থাকা যায় না। শতকরা নব্বইভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে সরকারপ্রধানের নিকট দাবি জানাই, জেনে করুন বা যে কারণেই করুন না কেন অবিলম্বে শিখা চিরন্তনের নামে এ অগ্নিপূজা বন্ধ করুন।
পাকিস্তান আমলের ঘটনা। আজম খান পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর হয়ে ঢাকায় এলেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একটি সম্মেলন ডাকলেন। মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.) যুবক আলেম ছিলেন। নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি, হাকিমুল উম্মত থানভী (রহ.)-এর খলিফা মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর সাথে তিনিও সে সম্মেলনে উপস্থিত হলেন। গভর্নর আজম খান ওলামায়ে কেরামের সামনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখলেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি আলিমদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা মদ-জুয়া বর্জন করার জন্য জনগণকে বোঝাবেন। জুমায় বয়ান করবেন, ওয়াজ-নসিহত করবেন। উপস্থিত সকলেই নিশ্চুপ রইলেন। সবাই নীরবে গভর্নরের বক্তব্য শুনে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ নীরবতা ভঙ্গ করে বক্তব্যের মাঝখানে মাওলানা উবায়দুল হক দাঁড়িয়ে গেলেন। এবং প্রতিবাদের সুরে গভর্নরকে লক্ষ্য করে উচ্চকণ্ঠে বললেন, ‘আপনারা মদের লাইসেন্স দিবেন আর আমাদেরকে বলবেন, ওয়াজ করতে। আগে আপনারা লাইসেন্স বন্ধ করুন তারপর আমরা ওয়াজ-নসিহত করে জনগণকে বোঝাবো।
১৯৯৩ সালে খতমে নবুওয়ত আন্দোলন যখন তুঙ্গে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর সাথে খতমে নবুওয়ত বিষয়ে আলোচনার জন্য ওলামায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে খতিব সাহেব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যান। মন্ত্রীর সাথে দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে খতিব সাহেব তার সিলেটি টোনে বললেন, ‘মন্ত্রী সাব! আপনি আল্লাহ এক, মুহাম্মদ (সা.) শেষনবী এবং তারপর অন্য কোনো নবী আসবেন না একথা বিশ্বাস এবং ঘোষণা করেন কি না? মন্ত্রী বললেন, জি হ্যাঁ! খতিব সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন, এ বিশ্বাস যারা করে না; তারা মুসলমান কি না ? মন্ত্রী বললেন, ‘না! তারা মুসলমান নয়।’ আমরা তো ভিন্ন কিছু চাই না। শুধু এটুকু রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করে দিন। আরও অনেক কথা হলো। অবশেষে মন্ত্রী কাদিয়ানীদের অপব্যাখ্যা সম্বলিত কুরআনের তাফসীরসহ বিভিন্ন প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণার ওয়াদা করেছিলেন এবং তা আংশিক বাস্তবায়নও হয়েছে।
২০০০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঢাকার পল্টন ময়দানে আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত সংস্থা ‘ইকরা’র ব্যবস্থাপনায় কেরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন হযরত খতিব সাহেব (রহ.)। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ। স্পিকার হুমায়ন রশিদ চৌধুরী, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মাওলানা নুরুল ইসলাম, হাজী সেলিম এমপিসহ বিদেশি রাষ্ট্রদূত, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ। পল্টন ময়দানে লাখো মানুষের জমায়েত। সময়টিতে মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা ষড়যন্ত্র চলছিল। অনেক শীর্ষ আলেম কারাবন্দি ছিলেন। এমন সময় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হিন্দুদের দুর্গা পূজা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘দুর্গা পূজা সব বাঙালিদের উৎসব।’ আবার পল্টন ময়দানে কেরাত সম্মেলনে এসে উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, কুরআনের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো। হযরত খতিব সাহেব সভাপতির ভাষণে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রথমেই ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকে ধরলেন। তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশে বললেন, আপনারা শুনেছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য। ধর্মনিরপেক্ষ এই মন্ত্রীদের চরিত্র হলো ‘বা মুসলমান আল্লাহ আল্লাহ বা ব্রাহ্মণ রাম রাম।’ এটা মুনাফিকী চরিত্র। হিন্দুদের দুর্গা পূজা মুসলমান বাঙালিদের উৎস হতে পারে না। কোনো মুসলমান দুর্গা পূজাকে নিজেদের উৎসব মনে করলে তা ঈমান থাকবে না। আপনাদের ধর্ম হলো, ‘আল্লাহ ভী খোশ রহে ভগওয়ান ভী নারাজ না হো’।
২০০১ সালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাআত পূর্ব বয়ানে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে খতিব সাহেব বলেন, ‘আমেরিকাই বিশ্বের বড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। ইরাক ও আফগানিস্তানের মুসলমানদের রক্ত নিয়ে বিশ্ব সন্ত্রাসী বুশ হোলিখেলায় মেতে উঠেছে। মুসলিম শাসকেরা সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের ‘পায়রবী’ করছে। জাতিসংঘ, ওআইসি নীরব। আমরা ভয়ে বিড়ালের মতো হয়ে গেছি।’ তিনি আমেরিকাকে উদ্দেশ করে বলেন, বিশ্বের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ মুসলমান। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যা ঘটছে; তার বিপক্ষে বলার লোক বর্তমান বিশ্বে প্রায় দেড়শ’ কোটি। বিপুল সংখ্যক মুসলমানরা সন্ত্রাসী বুশ ও আমেরিকার দিকে ঘৃণা ও নিন্দার থুথু নিক্ষেপ করলে যে সমুদ্রের সৃষ্টি হবে তাতে তা বুশ আমেরিকা ভাসিয়া যাইবে। কিন্তু লজ্জার বিষয়, আমাদের শক্তি আছে, সাহস নেই। সময় এসেছে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে শত্রুদের মোকাবেলা করার। আমাদের ঘুমিয়ে থাকার সময় নেই। আপনারা সবাই জেগে উঠুন। দেশ, জাতি, ধর্ম ও মুসলিম উম্মাহকে বাঁচান।
২০০৭ সালে প্রথমআলো পত্রিকার আলপিন ম্যাগাজিনে রাসূল (সা.) ও হযরত আবু হুরায়রাকে নিয়ে বেয়াদবিমূলক কার্টুন প্রকাশ করে। এর প্রতিবাদে খতিব সাহেবের নেতৃত্বে সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন ও বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠে। কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য খতিব সাহেবের বাসায় হাজির হন। তাদের দেখে খতিব সাহেব বললেন, অপরাধ করলেন, এত বড় আর ক্ষমা চাইলেন দেড় ইঞ্চি। আলেমসমাজ এমন ক্ষমা মানে না।’ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ব্যরিস্টার মুইনুল হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা ড. মতিউর রহমানসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকদের নিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বায়তুল মোকাররম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের শুরুতেই খতিব সাহেব প্রথম আলোর সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার পত্রিকা শুরু থেকেই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আসছে। দেশে নব্বই ভাগ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি। আপনাদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। পরে সকলের অনুরোধ ও সমঝোতায় প্রথম আলোর সম্পাদক ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে অঙ্গীকার করে খতিব সাহেবের হাতে তওবা করেন।
পরিশেষে বলবো, সমকালীন বাংলার মুসলমানদের জন্য মাওলানা উবায়দুল হক একটি স্মরণীয় নাম, সত্যোচ্চারণে একটি অপরিমেয় সাহসী কণ্ঠ। দীনের উপর কোনো আঘাত এলে এই সহজ-সরল মানুষটি বজ্রকঠোর হয়ে দাঁড়াতেন। বায়তুল মোকাররমের খতিব হয়ে ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠিত সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সভাপতি এবং জাতীয় শরীয়াহ্ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। খতিব মাওলানা উবায়দুল হক ২০০৭ সালে ২৪ রমজান মোতাবেক ১৪২৮ হিজরি ইন্তেকাল করেন। আল্লাহপাক তার জীবনের সকল নেক আমলগুলো কবুল করুন। তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের আ’লা মাকাম নসীব করুন। তার মতো রাহবারে মিল্লাহ আল্লাহপাক এ জাতিকে উপহার দিন। আমীন।