ইসলামের বিজয় অত্যাসন্ন আপনি কি প্রস্তুত
উবায়দুর রহমান খান নদভী: আমাদের প্রত্যেকের জীবন থেকে চলে গেল আরেকটি আনন্দালোকের মধুর সময়। সেই রজব শাবান থেকে মহামহিমান্বিত রমজান, শবেকদর ও পবিত্র ঈদুল ফিতর। কী রহমত, বরকত, ক্ষমা-করুণা, নাজাত ও মাগফিরাতের ঢেউ। কী আবেগ উচ্ছ্বাস আনন্দাশ্রু আর হৃদয়নিংড়ানো নিবেদনের মওসুম। কেমন ছায়া, কেমন মায়া, কী শীতলতা, কত অনুকম্পার ভরা বর্ষা। শবে মিরাজ, নিসফে শাবান, শবে বরাত, সিয়াম ও কিয়াম, তিলওয়াত, তারাবীহ, সাহরি, ইফতার, সাদাকা ও ইতেকাফ পালন করে, তাকবীরের উদ্দীপনায় প্রেমপুণ্য পরিচয় ও পরিপূরণের ঈদ। হে আল্লাহ তুমি আমাদের মঙ্গলে পূর্ণ করে দাও, রজব ও শাবানকে ভরে দাও, বরকত ও ঋদ্ধিতে। আমাদের হায়াত দারাজ করে পৌঁছে দাও, পবিত্র মাস রমজানের দ্বারপ্রান্তে। এ দোয়াটি নবী করিম (সা.)-এর। বলেছেন, রমজানের শেষ দশকে খোঁজো কদরের রাত। এ রাতের নাগাল যে পাবে তার অতীত গোনাহ মাফ। হাজার মাসের সেরা এ রাত মুক্তির পয়গাম। সামনে আসছে হজ ও কোরবানী। এরপর মহররম। আশুরার পর সৌভাগ্যের পরম বার্তাবহ রবিউল আউয়াল। আবার একটু দম নিয়েই বছরের চাকা ঘুরে গিয়ে স্পর্শ করবে নতুন রজব শাবান। আরেকটি রমজান। জানা নেই, কারা কারা পাবে সে নতুন বাঁকা চাঁদ। জীবনের ডায়েরির পাতায় আরেকটি রমজান।
গত পাঁচ বছর ধরে, কী এক কুদরত দেখে চলেছি আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর আশিসধন্য পবিত্র স্বদেশ বাংলাদেশে। জুন, জুলাই ও আগস্টের ভ্যাপসা গরম, তাপদাহ, খররোদ্র আর বিদঘুটে আবহাওয়ায় যেই রমজান আসে শুরু হয় ছায়া ঢাকা শীতল আবহে স্বস্তির মরুদ্যান। একটি মাস যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ। আবার ঈদ শেষে যেই সেই। রমজান শরীফে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস যে রহমত ও স্বস্তিতে ভরে যায়, এটি প্রত্যক্ষ করে কোটি কোটি মানুষ আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর দিকে ঝুঁকে পড়ে। নামাজির সংখ্যা শতগুণ বৃদ্ধি পায়, বাড়ে রোজাদার ও পরহেজগারের পরিমাণ। উপচে পড়ে লাখো মসজিদ। তারাবীহ, জুমা ও কিয়ামুল্লাইলে নামে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ঢল। দোয়া, মোনাজাত, জিকির, তওবা, প্রার্থনা, ফরিয়াদ, কান্না ও রোনাজারির বেহেশতি আবহ সৌরভে ভরে দেয় বাংলার আকাশ-বাতাস। কী অপূর্ব এ বাংলা, কত গভীর এর আস্থা ও বিশ্বাস। কত ব্যাপক এখানে ঈমান, আমল ও ইহসান। কী কঠিন মায়ার চাদর বিছিয়েছেন আল্লাহ এ দেশের মানুষের অন্তরে। কতই না শক্ত তাদের বাঁধন প্রিয় নবীজির (সা.) ভালোবাসার ডোরে।
বাংলাদেশের সাথে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) মহান আনুগত্যের সম্পর্ক নিয়ে কথা বললেই মনে পড়ে আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা। তিনিই তো বলেছেন, এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবী সাকী। নেশায় হলাম দিওয়ানা যে রঙিন হলো আঁখি। …আল কোরআনে সবক দিলে শবে কদর রাতে। নর-নারী, বাদশাহ-ফকির সেই জামাতে হলো শামিল। যা ছিল নজরানা দিল রাঙা পায়ে রাখি। এ কোন মধুর…। ইসলাম ও ঈমানের বন্ধন, কোরআন সুন্নাহ, রমজান ও শবে কদরের মায়া আর এলো খুশীর ঈদের ছায়া যে এই বাংলায় দেড়হাজার বছর ধরেই বিস্তৃত তা কাজী নজরুল ইসলামের মত সুন্দর করে আর কে বলতে পারবে? শুধু বাংলায় বাংলাভাষায়ই নয়, দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে সকল জীবন্তভাষায় ইসলামের শানে রচিত কবিতা ও সংগীত আমরা খুঁজে দেখেছি, নজরুল ইসলামের মত হৃদয়, মায়া, অশ্রু ও নিবেদন, তাঁর মত ভাব, ভাষা, ছন্দ ও সুর সহজে চোখে পড়ে না।
বাংলাদেশ বিশ্ব ও আশপাশের প্রায় তিরিশ কোটি বাংলাভাষীর ঈদ প্রাণ খুঁজে পায় না যদি না গীত ও শ্রুত হয় কবি কাজীর গান, ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ। তোর সোনা দানা বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ। দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিদ। তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ। কী অসাধারণ দার্শনিক ও দিক-নির্দেশক এর বাণী। কত অনন্য এর ভাব, ভাষা, গীত ও ছন্দ।২০১৫-এর ঈদ যদিও ছিল অনেক দুঃখ কষ্ট ও জমাটবাধা শোকের পাটাতনে স্থাপিত তথাপি অন্ধকার দিগন্ত ফুঁড়ে বের হওয়া আলোর ফোয়ারা দেখে আশায় জাগ্রত হয় মুমিন হৃদয়। মেঘ দেখে ভয় পাওয়া উম্মতে মুহাম্মদী আবার আড়ালে তার সূর্যের হাসিও দেখে।
বিগত কয়েক বছরে সারাবিশ্বে কাফির মুশরিক ও নাস্তিক বেঈমানদের হাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিহত হয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখ মুসলমান। এ কষ্ট কি বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে বাজে না? ফিলিস্তিন, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইনসহ সাত মহাদেশের কোন জমিনটি এমন আছে যেখানে উম্মতে মুহাম্মদীর পূর্ণ নিরাপত্তা স্বীকৃত। লাখো শহীদ, লাখো শরণার্থী, লাখো এতিম বিধবা সন্তানহারার কষ্ট জমাট বাধা এই ঈদে মুক্তি ও বিজয়ের কোন ঐশী আলোকচ্ছটা কি দেখতে পাওয়া যাবে? দিকে দিকে দেশে দেশে নয়া কারবালার পশ্চাদপটে কি ভেসে ওঠে কোন নতুন জিন্দেগীর দিশা? ইসলাম তো কারবালার পরই নতুন জীবন ফিরে পায়।এবার বিশ্বের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ মক্কাশরীফে গিয়ে পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। মসজিদে নববীতে ১৫ হাজার আর মসজিদুল হারামে প্রায় ১২ লাখ মানুষ ইতেকাফ পালন করেন। ২৭ রমজান রাতে মক্কায় ইবাদত বন্দেগীতে কাটান ৫০ লাখ মানুষ। এবার সউদী বাদশাহ স্বয়ং কাবা সংলগ্ন স্থানে ইতেকাফে শরিক হন। এর আগে তিনি পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারত করতে মদীনা শরীফ যান। উন্নত প্রযুক্তিতে এবছরই প্রথম কাবাশরীফের অসাধারণ সব ছবি বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়। আকাশ থেকে কাবার ছাদ আর পূর্ণ তাওয়াফ ও কিয়ামুল্লাইলের ছবি ধারন করা হয়। যেসব দেখে ইসলাম গ্রহণ করে বিশ্বব্যাপী শত সহস্র মানুষ। আমেরিকায় খতম তারাবির জামাত হয় তিন হাজার। আড়াইশ’ হাফেজ ছিলেন বাংলাদেশী। অসংখ্য হাফেজ আমেরিকার মাদরাসায় পড়ে কোরআন মুখস্থ করেছেন। ইউরোপে খতম তারাবির কোন সীমাসংখ্যা নেই। জাপানে বাংলাদেশী হাফেজরা তারাবিহ পড়াতে গিয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে অসংখ্য ইমাম এখন বাংলাদেশী কুয়েত-কাতারে হাজার খানেক ইমাম বাংলাদেশী। এবার ঈদুল ফিতরের জামাত দেখে বোঝা মুশকিল ছিল, একি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনার জামাত না কি কোন আরব রাজধানীর? এসব জামাত ছিল মস্কোয়, লন্ডনে, ইটালি, জার্মানী, চীন, নিউইয়র্ক আর ওয়াশিংটনে। মক্কা, মদীনা, রাবাত, কায়রো, আম্মান, বাগদাদ, বাকু, করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, দিল্লী, আহমদাবাদ, বাংলোর, বোম্বে, কলকাতা, ঢাকা, কুয়ালালামপুর ও জাকার্তা কোথাও কোন ছন্দপতন নেই। একই নামাজ, একই তাকবীর ধ্বনি, একই দুরূদ, একই মোনাজাত।
বার্মিংহামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে সংগ্রহ করে নেয়া কিছু পান্ডুলিপি ও পূরাকীর্তি দীর্ঘ বছর পড়েছিল। এক গবেষক এসব ঘেটে বের করেছেন পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রাচীন কিছু অংশ। তাদের কার্বন টেস্টে ধরা পড়েছে এ কাগজগুলোর বয়স কমপক্ষে ১৩৭০ বছর। বিজ্ঞানীদের মতে, এসব হযরত নবী করিম (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে এমন কোন ব্যক্তির হাতের লেখা। প্রক্রিয়াজাত হরিণের চামড়ায় হিজাজি লিপিতে তৈরি এ পান্ডুলিপি নুকতা ও যের, যবর, পেশ সংযুক্ত হওয়ার আগেকার। নবী করিম (সা.)-এর নিকট এ অংশটি নাজিল হয় অন্তত ১৪৪০ বছর আগে। বিজ্ঞানীদের আন্দাজ ১৩৭০ হলেও এর বয়স আরো বেশী হওয়ার সম্ভাবনার কথা তারাই বলেছেন। ঈদের পর জুমার রাতে ইন্টারনেটে পাওয়া পবিত্র মহাগ্রন্থের এ পাতাটি খুব মনযোগ দিয়ে দেখে বুঝতে পারি এটি সূরা তোয়াহার প্রথম দিককার ১৩টি আয়াত। আর সূরা মারইয়ামের শেষাংশ। দেখে আমার শরীর কেঁপে ওঠে। বিগলিত অন্তরে অশ্রুর ধারায় চলে যাই ইতিহাসের সে পবিত্র প্রাঙ্গণে। বলা তো যায় না, হয়ত এ পাতাটি হাতে পেয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হযরত ওমর (রা.)। ইতিহাস তো তাই বলে। তিনি তো নবী করিম (সা.) কে হত্যার উদ্দেশ্যে খোলা তরবারি হাতে বের হয়েছিলেন। যাচ্ছিলেন রাসূল (সা.) এর ঠিকানায়। পথে তাকে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, কোথায় চললে হে ক্ষিপ্ত কোরেশ যুবক। জবাবে বলেছিলেন, দেবদেবীর বিরোধিতাকারী মুহাম্মদকে হত্যা করতে। সেই লোক তখন বলেছিলেন, মুহাম্মাদকে পরে হত্যা কর। আগে খবর নিয়ে দেখ তোমার পরিবারের কী অবস্থা। তোমার বোন ফাতিমা ও ভগ্নিপতি সাঈদ নাঈম ইসলাম গ্রহণ করেছে। হযরত ওমর ঘুরে দাঁড়ালেন। গেলেন বোনের বাড়িতে। শুনলেন ওরা যেন ভেতরে কী পাঠ করছে। দরোজা ধাক্কা দিলেন। হুংকার শুনে বোন ভগ্নিপতি কোরআনের পাতটি লুকিয়ে দরোজা খুলে দিলে ওমর অতর্কিত তাদের দু’জনকেই বেদম মারপিট শুরু করেন। ওমরের বোন ফাতিমা তখন তার স্বামীকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে তার প্রাণ রক্ষা করেন। নিজে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মত বড়ভাই ওমরকে বললেন, জীবনে বহুবার তুমি আমাকে মেরেছ। তোমার চাপে বহুবিষয়ে আমরা মতও পাল্টেছি। কিন্তু এবার আমরা এমন এক মহাসত্যের সন্ধান পেয়েছি, জীবন গেলেও এ থেকে আমরা সরে যাব না। ভাইজান, তোমার হাতে যদি আমার মৃত্যুও হয় তবুও আমি হযরতকে ত্যাগ করব না। ইসলাম হাতে পেয়ে আবার কুফুরিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল। রক্তাক্ত-আহত বোন ফাতিমার মুখে এত দৃঢ় উচ্চারণ শুনে ওমর ভড়কে গেলেন। বললেন, আচ্ছা তোরা কী যেন তিলাওয়াত করছিলি। দে, ওটা আমাকে দে। বোন বললেন, এ হচ্ছে সদ্য নাজিল হওয়া কিছু আয়াত। কেবল পবিত্র মানুষেরাই এটি স্পর্শ করতে পারে। তুমি মুশরিক, তুমি এটি স্পর্শ করতে পার না। তখন ওমর বললেন, তাহলে আমাকে কী করতে হবে? ফাতিমা বললেন, তুমি গিয়ে গোসল করে প্রস্তুত হয়ে এসো। ওমর তাই করলেন। ভেজা চুল, স্নিগ্ধ দেহলতা, আপাত শান্ত ধীর সুস্থ ওমর। খাত্তাবপুত্র কোরেশী কূটনীতিক বীরকেশরী ওমর। নবী করীম (সা.) যে দু’জন লোকের হেদায়েত প্রাপ্তির বিষয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন। আবু জাহেল ও ওমর। এদের একজনের অন্তরে এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত কার্যকর হতে যাচ্ছে। বোন ফাতিমা বললেন, দেখ, ভাইজান, তুমি আমার সাথে যে আচরণই কর না কেন, কথা দাও কোরআনের এ পাতাটি তুমি নষ্ট করবে না। এর অবমাননা করবে না। ওমর ওয়াদা করলেন এবং বোনের কাছ থেকে লুক্কায়িত পৃষ্ঠাটি হাতে নিলেন। চোখ পড়ল ঐশী বাণী পাক কোরআনের এ জীবন্ত আয়াতগুলোর ওপর। পরম করুণাময় মহামহিম আল্লাহর নামে। তোয়াহা, কোরআন আমি আপনাকে বিপন্ন করার জন্য অবতীর্ণ করিনি হে মুহাম্মদ (সা.)। এ আমি নাজিল করেছি যারা আমাকে ভয় করে তাদের জন্য উপদেশ স্বরূপ। আমি তো পরম করুণাময়। আরশে অধিষ্ঠিত। আকাশ ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে সবই আমার। একে একে আরো ক’টি আয়াত পড়ে স্থানুর মত হয়ে গেলেন ওমর। কাঁপছেন তিনি। এ কার কথা? কে এই করুণাময়। কে আমায় স্পর্শ করে বিগলিত করে ফেললেন তার বাণীর সুরে। বললেন, আমায় তোরা হযরতের কাছে নিয়ে চল। গেলেন, তাকে দেখে রাসূলের সহচরেরা সতর্ক হয়ে ওঠলেন। নগ্ন কৃপান হাতে ক্ষিপ্ত ওমরকে তারা বাধা দেবেন বলে ওঠে দাঁড়ালেন। হযরত (সা.) বললেন, আসতে দাও। ওকে তোমরা বাধা দিও না। ওমর এলেন। একনজর দেখলেন ত্রিভূবনের সুদর্শনতম নূরানী মুখবয়ব। উদ্যত কৃপান সঁপে দিলেন তার পদতলে। বললেন, আমাকে গ্রহণ করুন হে মহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। হযরত মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। হযরত তার বুকে হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করলেন। ওমর বললেন, গতকাল পর্যন্ত আমিই ছিলাম বড় বাধা। এখন আর কোন বাধা নেই। এখন থেকে আর গোপনে নয়, কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ পড়বেন আপনি। আমরা সঙ্গী হব। কাবায় ছুটে গিয়ে ঘোষণা দিলেন, এতদিন যত অন্যায়-অত্যাচার হয়েছে সবকিছুর অবসান চাই। খাত্তাবের পুত্র ওমর ইসলাম গ্রহণ করেছে। কেউ যদি তার পুত্রকন্যাকে এতিম আর স্ত্রীকে বিধবা বানাতে চায়, সেই আমার সামনে এসে দাঁড়াক। এ দিন থেকেই ইসলাম ও মুসলমানের জীবনে দৃশ্যমান অনেক পরিবর্তন এলো।জানি না কেন জানি আমার মনে হয় এটি কি সেই সূরা তোয়াহা। একি সেই লুকোনো পৃষ্ঠা। ওমর (রা.) যা নষ্ট না করার ওয়াদা করেছিলেন। মহান আল্লাহ কি দেড়হাজার বছর ধরে এটি হেফাজত করে রেখেছেন? বাগদাদের খলিফাদের পর আধুনিক সময়ে এটিই কি ইউরোপে চলে এলো? এত বছর পর হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে শত বৈরিতা, নিন্দা, কৌতূক আর ঔদ্ধত্যে লিপ্ত ইউরোপের নেতৃবর্গ আর দুর্জন শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের কাছে নতুন কোন ইশারা নিয়েই কি এসেছে এই সূরা তোয়াহা। আল্লাহ ভাল জানেন। তবে হযরত ওমরের চিঠি নীলনদে বন্যা আনার মতই তার স্মৃতিধন্য পৃষ্ঠা যে ইউরোপে হেদায়েতের প্লাবন আনবে না তা-ইবা কে বলতে পারে।
ঈদ উপলক্ষে ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ দ্বিতীয় হঠাৎ প্রোগ্রাম করলেন মসজিদে যাবেন। প্রথমবারের মত রাজকীয় রীতি ভঙ্গ করে তিনি খালি পা হলেন। পবিত্রতা অর্জন করে বিনম্র শ্রদ্ধায় আনত নয়ন ও বিগলিত মন রাণী মাথায় টেনে দিলেন দীর্ঘ ওড়না। ঢুকলেন গিয়ে মসজিদে। চেহারায় তার অপূর্ব বিনয় ও ভক্তি। ছবি প্রচারিত হলে গোটা মুসলিম জাহানে নেমে আসে তার ইহ-পরকালীন পরম সাফল্যের জন্য হৃদয়নিংড়ানো দোয়া। মধ্যপ্রাচ্যের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উপচে পড়ে কল্যাণ কামনার প্রার্থনা আর হেদায়েতের মোনাজাতে। পৃথিবীর সব মানুষের অন্তরের মালিক যিনি তার পরিকল্পনা কারো জানা নেই। তিনি যা চান তাই করেন।
দু’চারজন থেকে শুরু হয়ে আজ প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান। একটি থেকে শুরু করে আজ ৬০টি রাজধানী মুসলমানের। মক্কার পর কুফা, বাগদাদ, দামেস্ক দিল্লি যেমন ইসলামের জন্য ওয়াশিংটন, লন্ডন, সিডনি, প্যারিস, রোমও তেমন। প্রকৃতির মতই এর গতি। শান্তি ও ভালোবাসা এর শক্তি। মহান আল্লাহ বলেছেন, অবিশ্বাসীরা আমার নূরের প্রদীপকে ফুঁ দিয়ে নেভাতে চায়। আমি কিন্তু আমার আলোর জ্যোতিকে পূর্ণরূপেই প্রজ্বলিত করব। ওরা যতই অপছন্দ করুক। আমি আমার রাসূলকে পাঠিয়েছি সকল মত ও পথের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। এটাই বাস্তবায়িত হবে। মুশরিকরা যতই অপছন্দ করুক।আল্লাহর রাসূল (সা.) কে নিয়ে যারা কূটক্তি ও বিষোদগার করছে তারা পরাজিত হবেই। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তারা শাস্তি পাবেই। যারা মানবপ্রকৃতি বিরোধী বিকৃত জীবনাচার আইন করে চালু করছে তারা বিলুপ্ত হবেই। গোটা ইউরোপ দ্রুতই ইসলাম গ্রহণ করবে। শত বিপর্যয়ের মুখেও বিশ্বব্যাপী ইসলামের জাগরণ এর আধ্যাত্মিক মহাশক্তি বলেই সংঘটিত হবে। ইসলাম তার অন্তর্নিহিত শক্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হবে। ইনশাআল্লাহ এ সর্বপ্লাবী বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। আপনি তৈরি তো !