১১১টি ছিটমহলে উড়বে বাংলাদেশের পতাকা
দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে অন্য দেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে ছিটমহলে অবরুদ্ধ জীবন কাটানো প্রায় ৫২ হাজার বাসিন্দার আজ আনুষ্ঠানিক মুক্তির রাত। এ মুক্তি যেমন বাংলাদেশের ভেতর আজ রাত থেকে বিলুপ্ত হতে যাওয়া ভারতীয় ছিটমহলে, ঠিক তেমনি ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহলেও।
দুই দেশেরই ছিটমহলগুলোর বাসিন্দারা প্রত্যাশা অনুযায়ী নাগরিকত্ব এবং যে যেখানে বসবাস করছে, সেখানেই থাকার সুযোগ পাচ্ছে।
আজ মধ্যরাতেই দুই দেশের মধ্যে অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ও কার্যকর হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার এ বিষয়ে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
আগামীকাল শনিবার থেকে ভারতের ছিটমহলে বাংলাদেশের পতাকা ও বাংলাদেশের ছিটমহলে ভারতের পতাকা উড়বে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে আজ মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের সীমানায় চলে আসবে। যার আয়তন ১৭১৬০.৬৩ একর। অন্যদিকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল হয়ে যাচ্ছে ভারতের। এগুলোর আয়তন ৭১১০.০২ একর।
এদিকে শুক্রবার মসজিদ-মন্দিরে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ছিটমহলবাসীর উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুর ২টায় কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়াসহ ১১১টি ছিটমহলে উৎসব পালনের এ অভিন্ন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ছিটবাসীর মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার।
বিকেলে নৌকাবাইচ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মঈনুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ছাড়াও দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের অধিবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে ছিটমহলের মানুষ লাঞ্ছনা-বঞ্চনার মধ্যে ছিলেন। রাত ১২টার পর তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ছিটবাসীর উন্নয়নে কাজ করব। যারা ছিটবাসীর মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। জাতীয় পার্টি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও তাদের অভিনন্দন জানাই।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি মঈনুল হক বলেন, আমরা ছিটমহলবাসী অন্ধকার জীবন নিয়ে দীর্ঘ সময় পার করেছি। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে সদয় হয়ে ছিটমহল বিনিময় করেছেন। এ জন্য আমি ছিটবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধনবাদ জানাই। তারা যেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটমহল ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি ছিটমহল, যা দুই দেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হবে, এই ছিটবাসীর প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখেন, যাতে আমরা ছিটবাসী দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনা ভুলে যেতে পারি।
আজ রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ১১১টি ছিটের বাসিন্দারা এই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে অন্ধকারে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর পথে যাত্রা করবেন। এ ছাড়া ফানুস উড়িয়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে রাতভর চলবে আনন্দ-উল্লাস। তাদের এই বাঁধভাঙা উল্লাসের সাথে একত্র হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হওয়ায় এসব ছিটের ৪১ হাজার ৪৪৯ জন এখন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন। আজ রাত ১২টা ১ মিনিটে ‘ছিটমহল’ নামের শব্দটি বিলুপ্ত হয়ে তারা বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হবেন।
দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা মোজাফফর বলেন, আজ আমাদের ছিটবাসীর খুশির দিন। আমরা ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে আছি, কখন রাত ১২টা বাজবে। আমরা বাংলাদেশী হয়ে যাব। আমরা গর্বের সাথে বলতে পারব, আমরা বাংলাদেশী।
ছিটমহলবাসীর উৎসবে যোগ দেয়া একই ছিটের বাসিন্দা ও দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, আজ রাত থেকে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আর কেউ বলতে পারবে না, আমরা ছিটের মানুষ।