স্বপদে ফিরলেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সায়েম

Saimবিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সালেহ মো. সায়েম তার স্বপদে ফিরেছেন। ২ আগস্ট রবিবার পূর্ব লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় এ সিদ্ধান্তের কথা তিনি সাংবাদিকদের জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা শাইস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া টেলিকনফারেন্সে ব্যারিস্টার সায়েমকে অভিনন্দন জানান কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান।
গত বছর হোম অফিস ও ব্যারিস্টার আবু সায়েমের ল’ফর্মের মধ্যকার একটি পরিস্থিতিকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে সংবাদ মাধ্যম উদেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আবু সায়েম ও বিএনপি নেতৃত্বের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ব্যারিস্টার সায়েম তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপি ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে স্বেচ্ছায় উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সে সময় তিনি সভ্যতা ও গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তি কর্তৃক তার বিরুদ্ধে প্রচারিত সীমাহীন মিথ্যাচারের উপযুক্ত ও বলিষ্ঠ জবাব দেওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা ব্যারিস্টার সায়েমকে সকল অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার পক্ষে রায় দেয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি আবার স্বপদে ফিরে আসলেন।
সংবাদ সম্মেলনের পুরো বক্তব্য :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
রবিবার ২ আগস্ট ২০১৫
প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সংক্ষিপ্ততম নোটিশে আহূত আজকের এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর আমি দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত এক পরিস্থিতিতে আরও একবার আপনাদের মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমি তখন আইন পেশার পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা পদে দায়িত্বরত ছিলাম।
সেদিন আমি নিঃসংকোচে আপনাদের জানিয়েছিলাম যে, ২১ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে ইউকে বর্ডার এজেন্সি সন্দেহবশত আমার পেশা সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে কয়েক ঘণ্টার জন্য আমাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। এ ঘটনার সাথে আমার দলীয় রাজনীতির বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক ছিল না। তথাপি, কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম এ ইস্যুকে পুঁজি করে উদেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আমার ও আমার দলের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
উদ্দেশ্য, অসত্য প্রচারণার মাধ্যমে বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা এবং প্রবাসে বিএনপিকে অকার্যকর করে রাখা। অতি উৎসাহীরা এমনকি বিষয়টির সাথে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নাম জড়িয়ে কাল্পনিক, মনগড়া ও মুখরোচক সংবাদ প্রচার করে যা ছিল একশতভাগ ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যমূলক। কেবল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল ও জনাব তারেক রহমানের ইমেজ ক্ষুন্ন করাই ছিল এ জাতীয় হলুদ সাংবাদিকতার অন্যতম অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।
আমি দৃঢ়চিত্তে সেদিন আপনাদের বলেছিলাম, আনীত সর্বৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের সাথে আমার কিংবা আমার উজমা ল’ ফার্মের কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত সত্য সকলের সামনে উন্মোচিত হবে।
কিন্তু যেহেতু আমার একান্ত পেশাগত একটি বিষয়ের সাথে অহেতুক আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে টেনে এনে আমার দলের সম্মানিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ঘৃণ্য ও অসভ্য তৎপরতা চলছিল, একজন দল ও দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে আমি তাই আমাকে প্রদত্ত মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি ও যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন হতে নিজেকে বিরত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, সাংবাদিক ভাইদের প্রতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন সংবাদ পরিবেশনের পূর্বে প্রকৃত সত্য যাচাই করে নেওয়ার বিনীত অনুরোধ জানিয়ে আমি কথা দিয়েছিলাম, তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ হলে ফলাফল যা-ই হোক আমি যথাসময়ে আবারো আপনাদের সামনে হাজির হব।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমি আজ যারপরনাই আনন্দের সাথে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি এ কথা জানাতে যে, অবশেষে সত্যের জয় হয়েছে। গত ১২ জুন ২০১৫ তারিখে আমার বিরুদ্ধে আনীত পেশাগত সকল অভিযোগ থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে হোম অফিসের বিশেষ তদন্ত সংস্থা।
আমি এজন্য প্রথমেই মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শোকরিয়া আদায় করছি। আল্লাহ ন্যায়বিচারক ও পরম করুণাময়।
আমার ওপর অবিচল আস্থা রাখার জন্য অতপর গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মাননীয় চেয়ারপারসন দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কাণ্ডারি দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রতি। পাশাপাশি আমি ঋণী যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে যারা দুঃসময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। আমি গর্বভরে বলতে চাই, যুক্তরাজ্যে আমার সাংবাদিক বন্ধুরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও সততার পরিচয় দিয়েছেন। তারা গুজবে কান দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নেতিবাচক কোন প্রচারণায় মেতে উঠেননি। এছাড়া আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক ও পেশাগত সহকর্মীদের আমার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালবাসার জন্য। সকলে মিলে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ।
আবারো প্রমাণিত হল, ন্যায় ও অন্যায়ের যুদ্ধে ন্যায়ের জয় অবশ্যম্ভাবী।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমি এখন আপনাদের বিশেষ অবগতির জানাতে চাই- যদিও বিগত সংবাদ সম্মেলনে আমি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম, কিন্তু বাস্তবে আমার সে আবেদন কখনোই গৃহীত হয়নি। সুতরাং আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, আমি এখনো আমার উপদেষ্টা পদে বহাল আছি। উপরন্তু, যুক্তরাজ্য বিএনপির নবগঠিত কমিটিতেও আমাকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রিয় নেতা দেশনায়ক তারেক রহমানের বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা রেখে আমি দেশ ও দলের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমি দৃঢ়তার সাথে আপনাদের সামনে উচ্চারণ করতে চাই যে, কোন ষড়যন্ত্রের কাছে কখনো আমি মাথা নত করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। বরাবরের মত দলের প্রতি শতভাগ বিশ্বস্ত থেকে আমার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করে যাব।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।
আমি সকলের সহযোগিতা ও দো’আ কামনা করছি।
বিনীত
ব্যারিস্টার আবু সালেহ মো. সায়েম
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান
দেশনায়ক তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা
এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুক্তরাজ্য বিএনপি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button