ফিলিস্তিনি শিশু পুড়িয়ে হত্যা
ক্ষোভের আগুন ইসরাইলেও
বর্বরতার চরম উদাহরণ সৃষ্টি করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে ফিলিস্তিনি শিশু আলী সা’দ দওয়াবশেহকে। ওই ঘটনায় ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে পশ্চিম তীর, গাজা, জেরুজালেম। এবার এই আগুনের অাঁচ লেগেছে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবেও। গত শনিবার তেল আবিবসহ পুরো দেশেই ইসরাইলিরাও এই ফিলিস্তিনি শিশু হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা এ ধরনের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর ওপরও জোর দিয়েছেন তারা। এদিকে, উগ্র ইহুদি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের দেয়া আগুনে নিহত শিশুটির পরিবারের অন্য সদস্যরাও ইসরাইলের বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে জানা গেছে।
সংবাদসংস্থাগুলো বলছে, উগ্রপন্থী ইহুদিদের বর্বর হামলার প্রতিবাদ জানাতে শনিবার রাজধানী তেল আবিবের রাস্তায় নামেন প্রায় দুই হাজার ইসরাইলি। ‘তেল আবিবে পিস নাউ’ নামের ইহুদি বসতি স্থাপন পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা ওই বিক্ষোভের আয়োজন করে। এতে নিহত শিশুটির চাচাও উপস্থিত ছিলেন। সংস্থাটির পরিচালক ইয়ারিভ ওপেনহেইমার বলেন, ‘আমরা এসব বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং পুনরায় শান্তি আলোচনা শুরু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
এই হত্যার প্রতিবাদে জেরুজালেমেও বেশ বড়সড় বিক্ষোভ হয়েছে এবং সেখানে শিশু হত্যার পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবারের একটি র্যালিতে কট্টর ইহুদিদের হামলার সমালোচনা করা হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলের অন্যান্য অংশেও ছোট ছোট বিক্ষোভ র্যালি করেন ইসরাইলিরা।
এদিকে, শিশু হত্যার ঘটনার দিন থেকেই বিক্ষোভে ফুঁসছে ফিলিস্তিন। জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন ফিলিস্তিনিরা। অনেক ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ইসরাইলি পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে। নিহত শিশুটির গ্রাম দৌমায় প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি বিক্ষোভের চেষ্টা করলে ইসরাইলি পুলিশ সেখানে বাধা দেয়। সেখানেও কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অগ্নিসংযোগে হতাহতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রুভলিনও শনিবার জেরুজালেমে এক সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘প্রতিহিংসা ও সহিংসতার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের দেশে। এটি বিকৃত একটি বিশ্বাস।’ তিনি দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার অঙ্গীকার করেন। তবে ঘটনার দুই দিন পার হলেও এখনো কোনো দোষীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এদিকে, উগ্রপন্থী ইহুদিদের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে ইসরাইলের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিহত শিশুটির পরিবারের বাকি সদস্যদের অবস্থাও ভালো নয়। নিহত শিশুর বাবা সা’দ দক্ষিণ ইসরাইলের সরোকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শরীরের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পুড়ে যাওয়া সা’দের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির একজন নারী মুখপাত্র। শিশুটির মা রেহাম এবং ভাই আহমেদ তেল আবিবের কাছে তেল হাশোমার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দগ্ধদের স্বজনরা জানিয়েছেন, রেহাম মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। তার শরীরের অবস্থা আগের চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভোরে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের দৌমা গ্রামের একটি বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উগ্রপন্থী ইহুদিরা। এ ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় অগি্নদগ্ধ হয়ে ১৮ মাস বয়সী শিশু আলী সা’দ দওয়াবশেহ মারা যায়। আর গুরুতর আহত হন তার বাবা, মা এবং চার বছর বয়সী ভাই।