দেশ-মানুষকে নিয়ে আমার কিছু চিন্তা
তারেক রহমান: আমরা রাজনীতিকরা যা নিয়েই আলোচনা করি ও কথা বলি না কেন- তা গিয়ে এক জায়গাতেই দাঁড়ায়, আর সেটি হলো দেশ নিয়ে, দেশের মানুষ নিয়ে আমাদের রাজনীতি। রাজনীতিকদের কাজ যেহেতু দেশ ও দেশের মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত, সেই জন্য আমরা এসব বিষয় নিয়ে সবসময় চিন্তা-ভাবনা করি। স্বাভাবিকভাবেই একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমিও সবার মতোই অনেক আগে থেকেই দেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সবসময় ভাবি।
আমি কোন রাজনৈতিক বিষয়ে কথা না বলে, কেবল দেশ ও মানুষকে নিয়ে কিছু চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা তুলে ধরবো। কারণ আমাদের দেশটি আয়তনে ছোট হলেও ১৬ কোটি মানুষের দেশ। জনসংখ্যার বিষয়টি অনেক বড় একটি চিন্তার কারণ। কাজেই এ দেশটি নিয়ে যখন ভাবতে হয়, তখন এত বেশি জনসংখ্যার দেশের পরিকল্পনাও হতে হয় অনেক বড় ও ভিশনারি। তাই এ বিষয়ে সংক্ষেপে আমার কিছু চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমার এই চিন্তাধারার সঙ্গে আপনারাও একমত হবেন।
আমাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য কি শুধু ক্ষমতায় যাওয়া? না, মূল উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতায়ন নয়। সেটি আমাদের রাজনীতির কেবল একটি অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নও কিন্তু এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশে-বিদেশে যারা আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবি, আমাদের ধর্ম, বিশ্বাস, মত কিংবা আদর্শ ভিন্ন হতেই পারে, কিন্তু দেশ তো আমাদের সবার। আমরা সবাই এদেশকে ভালবাসি। আর তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলতে হবে, একটি নতুন সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর। এই অগ্রযাত্রায় গতি হতে হবে দ্রুত। লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট। অতীতমুখী নয়, আমাদের চেতনা ও দায়বদ্ধতা হতে হবে ভবিষ্যৎমুখী। গতানুগতিক রাষ্ট্র পরিচালনার ধারায় অভ্যস্ত থাকলে কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল হবে না। আমাদের উৎসাহ দিতে হবে আধুনিকতাকে, বরণ করে নিতে হবে অভিনবত্বকে। সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আমাদের আলিঙ্গন করতে হবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনকে, যার আবর্তন রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় এবং বিবর্তন জনগণের সমস্যার সমাধান।
আমি এখানে খুব সংক্ষেপে দেশের গঠন-উন্নয়নে কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরতে চাই।
ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই জেনেছি, দেখেছি বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। আসুন, আমরা এই কৃষি নিয়ে প্রথমে কথা বলি। কৃষি নিয়ে আমার চিন্তা-ভাবনা খুব সংক্ষেপে তুলে ধরতে চাই। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে দেশ এবং মানুষ বাঁচানোর পূর্বশর্ত কৃষির মানোন্নয়ন ও কৃষকের জীবন উন্নয়ন। অতীত ও বর্তমানের মতো আমাদের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিরও মূল ভিত্তি হতে যাচ্ছে কৃষি। যাকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে তথা কৃষি ও কৃষককে বাঁচানোর তাগিদে নতুন কিছু ভাবা ও নতুন কিছু করা আজ সময়ের দাবি। কৃষি ক্ষেত্রে করণীয়কে আমরা ছয়টি মৌলিক বিষয়ে ভাগ করতে পারি।
এক. কৃষির প্রয়োজনীয় মূলধনকে কৃষকের কাছে সহজলভ্য করে তোলা প্রয়োজন। কৃষি ব্যাংক হচ্ছে এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিষ্ঠান। তাই কৃষি ব্যাংকের কার্যক্রমের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এর ঋণ প্রস্তাবনায় বৈচিত্র্য এনে এগুলোকে সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী করা জরুরি। কৃষি ভর্তুকির সর্বোচ্চ উপযোগিতা নিশ্চিত হয় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
দুই. কৃষি কাজে ব্যবহৃত প্রধান তিন ধরনের উপাদান, যথা: চারা ও বীজ, সার ও কীটনাশক এবং যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি, এগুলোর আমদানি ও বিতরণ পরিকাঠামো পরিবিন্যাস করা।
তিন. দুর্বল ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষকদেরকে কম দামে ফসল বিক্রয় করতে হয়। সেই একই ফসল ভোক্তারা চরম মূল্যে ক্রয় করে। এই অবস্থা নিরসন করতে একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি- যা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফসলের মূল্য নির্ধারণ করবে। এক একটি কৃষিপণ্যের মোট উৎপাদন ব্যয় বাদ দিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে লাভে বিক্রির জন্য কৃষকের অনুকূলে বাজার ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে। এই লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য কৃষিনির্ভর দেশের মতোই আমাদের দেশেও একটি স্বাধীন কৃষিবান্ধব মূল্য নির্ধারণ কমিশন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
চার. দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সুষ্ঠু ও সুষম বিতরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে একদিকে কৃষকদের কাছে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় করা এবং আরেকদিকে ক্রয়কৃত পণ্যের অনেকাংশ জনগোষ্ঠীর মাঝে কমমূল্যে বা বিনা মূল্যে নিয়মতান্ত্রিক ও পরিকল্পিতভাবে বিতরণ বা বিক্রয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে, অন্যদিকে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
পাঁচ. কৃষি সংক্রান্ত সকল ডাটা ও তথ্য যেন একসঙ্গে পাওয়া যায়, সেসব তথ্যের বিশ্লেষণের লক্ষ্যে একটি কৃষি তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই তথ্য ভাণ্ডারের উদ্দেশ্য হবে দেশের সার্বিক কৃষি পরিস্থিতির চিত্র এক স্থানে ধারণ করা, দেশের কোন অঞ্চলে, কোন মওসুমে কোন ফসল, কোন হারে, কত খরচে উৎপাদিত হয়; তা জেনে সেই আলোকে কৃষি পণ্যের উৎপাদন পরিকল্পনা করা হবে একটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত। তাই তথ্য ভাণ্ডার নির্মাণের ক্ষেত্রে নয়টি মূল বিষয় থাকতে পারে- ১. কৃষিপণ্যের খুচরা ও পাইকারি মূল্য, ২. কৃষি উপকরণ, ৩. সার ও কীটনাশক, ৪. অঞ্চলভিত্তিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, ৫. অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা, ৬. হিমাগার ও সংরক্ষণাগার, ৭. কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, ৮. কৃষিপণ্যের পরিবহন, এবং ৯. আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বা রপ্তানির সুযোগ।
ছয়. আমাদের দেশে কৃষি বলতে সাধারণত শুধু সমতলভূমির কৃষিকে বোঝানো হয়। কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাহাড়ি ভূমিকে যদি কৃষির মূল পরিকাঠামোর মধ্যে আনা যায়, তাহলে দেশের কৃষির উৎপাদন ও ফসলের বৈচিত্র্য শুধু বাড়বে না, বরং স্থানীয় চাহিদা পূরণ-পূর্বক বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
এরপর শিক্ষা সম্পর্কে আমার কিছু চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করতে চাই। একটি শিক্ষিত জাতি একটি দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। উন্নয়ন ও প্রগতির লক্ষ্যে আমাদের যত উদ্যোগ সেগুলোর দীর্ঘস্থায়ী বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতার পূর্বশর্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত শিক্ষানীতি। আর তা সম্ভব হবে যদি আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী ও ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তুলতে পারি। এ জন্য একজন শিক্ষিত বাংলাদেশীকে গড়ে তুলতে হবে একজন মূল্যবান বিশ্ব নাগরিক হিসেবে। এ জন্য ইংরেজি ভাষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বাংলাদেশীরা যেন সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তৃতীয় এমনকি চতুর্থ ভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের জন্য উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, আরবি, জার্মানসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। এই উদ্যোগের ফলে বিশ্বের মেধা দরবারে ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের প্রবেশ নতুন মাত্রা পাবে। একই সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি বেগবান হবে। চলমান বাণিজ্য পরিকাঠামোর মাধ্যমেই কেবল পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের রেমিটেন্সকে ১৪ মিলিয়ন থেকে ২০ মিলিয়নে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের অপশন খুবই সীমিত অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন এনে সিস্টেমকে আরও সমপ্রসারিত করা এবং পাঠক্রমে আরও নতুন নতুন বিষয় সংযোজন করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, পার্সোনাল ও প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি বিষয় যদি সংযোজন করা হয়, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের প্র্যাকটিক্যালি সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে, উৎকর্ষের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এটি সহযোগিতা করবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির মৌলিক পরিবর্তন আনার সময় এসেছে। অ্যাসেসমেন্টের জন্য লিখিত পরীক্ষায় পুরো মার্ক না রেখে আমরা এক-তৃতীয়াংশ মার্ক গ্রুপ ডিসকাশন, প্রেজেন্টেশন ও ক্লাস পরীক্ষার মধ্যে ভাগ করে দিতে পারি। এর মধ্য দিয়েই শুধু পরীক্ষায় ভাল ফল করার উদ্দেশ্যেই পড়াশোনার যে সংস্কৃতি রয়েছে, তাতে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সংস্কারের মাধ্যমে মেধা তালিকায় শীর্ষ পর্যায়কে প্রকৃত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অবস্থানটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে করা দরকার কর্মমুখী তথা রিয়াল লাইফ বা জব ওরিয়েন্টেড। শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষয় ভিত্তিক জেনারেলাইজেশন করার ফলে শিক্ষিত বেকারের ক্রমবর্ধমান হারের যে সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা ভুগছি- তা অনেকাংশেই সমাধান করা সম্ভব হবে। এই লক্ষ্যে একটি পৃথক বিভাগ গঠন করে তার আওতায় দেশব্যাপী সাবজেক্ট, এরিয়া ও ইন্ডাস্ট্রি ভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগ দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, যাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ ও ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম গঠিত ও পরিচালিত হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন: এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স ইত্যাদি শিক্ষার্থীরা বিষয় অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে নানা মেয়াদে কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক চাহিদা এবং বাংলাদেশের শিল্প পরিস্থিতি বিবেচনায় আবর্তিত হবে। প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট পেয়ে সরাসরি চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে পারবে। এই উদ্যোগ দু’টি প্রধান ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি।
প্রথমত, দেশে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি কর্মক্ষম বেকার রয়েছে। এ সংখ্যা ইনশাআল্লাহ কোটির নিচে নেমে আসবে এবং কর্মজীবী বাংলাদেশীদের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি থেকে আট কোটিতে উন্নীত হবে। দ্বিতীয়ত, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা শতকরা ৩১ ভাগ থেকে ১০ ভাগের নিচে নেমে আসবে।
একটি দেশের উন্নতির জন্য শিল্পায়ন খুবই জরুরি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর উৎকর্র্ষ সাধনের মূলে ছিল শিল্প।
আমাদের দেশের শিল্প নিয়ে কিছু কথা বলি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সার্বিক বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনা করে একটি স্ট্র্যাটেজিক বা সাসটেইনেবলভাবে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। একদিকে প্রতিষ্ঠিত সেক্টর যেমন, ব্যাংকিং, কনস্ট্রাকশন, হেলথ কেয়ার ইত্যাদির জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেয়া, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানির ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে। এই তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের সম্ভাবনাময় ও রপ্তানিকেন্দ্রিক শিল্পকে এগিয়ে নেয়া জরুরি।
শিল্পায়নের এমন বহুমুখী পরিকল্পনার দরুন, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার বিচারে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় ক্ষেত্রে পরিণত হবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র এবং মাঝারি। এসব প্রতিষ্ঠানে কত মানুষ কাজ করে তা নিয়ে রাজনীতিকদের ধারণা থাকতে হবে। দেশ ও মানুষকে নিয়ে কাজ করতে হলে এসব জানতে হবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উত্তেজিত ভাষায় কথা বললেই হবে না, সেটা হয়তো রাজনৈতিকভাবে কিছুটা কাজে দিতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে, আপনারা সেই দলের সদস্য যারা দেশ পরিচালনা করেছেন এবং করবেন। মাথায় কিছু থাকতে হবে। মেধা খাটাতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে ভিশনারি হতে হবে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে যখন বিতর্ক করবেন, তখন তথ্য বা ডাটা ব্যবহার করতে হবে।
যা বলছিলাম, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ কাজ করে। শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান করলেও রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় এসব জনগোষ্ঠী ও শিল্প অবহেলিত রয়েছে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ও ফাইন্যান্সিয়াল এবং অবকাঠামো ও ট্রেনিং সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। এর কোন বিকল্প নেই। জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনা করে এই শিল্পের বিকাশে একটি বিভাগ স্থাপন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া খুবই জরুরি। এই ব্যবস্থাটিকে উন্নত বিশ্বে একটি নামে অভিহিত করা হয়। এটিকে এসএমই বলা হয়।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস গার্মেন্ট খাত। এই খাতের উন্নয়নে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, এর মাধ্যমে শিল্পের মালিক ও শ্রমিক, উপাদান সরবরাহকারী, সরকার ও বৈদেশিক ক্রেতাসহ সবাইকে নিয়ে মৌলিক দু’টি ইস্যু শ্রমিকদের ‘বেতন ও নিরাপত্তা’ এবং ‘সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা’ নিশ্চিত করতে হবে। এর স্থায়ী সমাধান করা দরকার। আবাসন, বিদ্যুৎ ও কারিগরি দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে যেন নির্দিষ্ট গার্মেন্ট আইটেমের বাইরেও আমরা অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারাল আইটেম এক্সপোর্ট করে এই শিল্পকে আরও বহুমুখী করে গড়ে তুলতে পারি। আমি আশা করি, সামগ্রিক প্রয়াসে গার্মেন্ট খাতের আয়কে বৃদ্ধি করে পাঁচ বছরে ২২ থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
যে শিল্প দেশের জন্য এত বিশাল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করেছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার অবশ্যই একটি আলাদা মন্ত্রণালয় থাকা দরকার।
শিল্পের প্রসঙ্গে কৃষি নিয়ে আরও কিছু কথা বলা দরকার। যুক্তরাজ্যের মতো একটি দেশ যদি কৃষিকে শিল্পে রূপ দিতে পারে, তাহলে আমরা কৃষিপ্রধান দেশ হয়ে কেন কৃষিকে শিল্পে রূপ দিতে পারবো না? কৃষিকে আমাদের রপ্তানিকেন্দ্রিক শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। এ জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা যায়, যার কাজ হবে আমাদের কৃষক ও পোল্ট্রি উৎপাদনকারীদের সঙ্গে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সরাসরি সংযোগ ঘটানো। এক্ষেত্রে আমাদের কৃষি তথ্যভাণ্ডারে কৃষি সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্যাবলীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের সব তথ্যও স্থান পাবে। যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের সহজ প্রবেশাধিকার ও বিনিময় মূল্য নিশ্চিত হবে। আমাদের কৃষি ও পোল্ট্রি পণ্যের বর্তমান রপ্তানি বাজার বার্ষিক প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। আমি আশাবাদী, পরিকল্পিত উৎপাদন এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে খাদ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পরও রপ্তানির পরিমাণ ৫ বিলিয়নে উন্নীত করা সম্ভব।
এবার যন্ত্রশিল্প নিয়ে আলোকপাত করা যাক। ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও দক্ষতার ভিত্তিতে ধোলাইখাল, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও সৈয়দপুরসহ ছোট-বড় নানা আকৃতির কারিগরি শিল্প রয়েছে। তারা নিজেদের উদ্যোগে যানবাহন ও শিল্পের যন্ত্রপাতি তৈরি করে আসছেন। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ভোকেশনাল শিক্ষার সঙ্গে এই শিল্পকে সংযুক্ত করে একটি সম্পূর্ণ যন্ত্রপাতি শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে চারটি ভিন্ন শিল্পায়ন গড়ে তোলা যেতে পারে। ১. কৃষি খাতের যন্ত্রপাতি, ২. কনস্ট্রাকশন খাতের যন্ত্রপাতি, ৩. অটোমোবাইল খাতের যন্ত্রপাতি এবং ৪. জাহাজ নির্মাণ খাতের যন্ত্রপাতি। যেখানে কৃষি যন্ত্রপাতির বার্ষিক আন্তর্জাতিক বাজার ১২৫ বিলিয়ন ডলারের। চীন যদি নিজ দেশের চাহিদা মেটানোর পরও এককভাবে বিশ্ব বাজারে ১২ বিলিয়ন ডলার কৃষি উপকরণ বিক্রি করতে পারে, আর আমরা যদি টোটাল বাজারের ১ ভাগও সরবরাহ করতে পারি, তাহলে আমাদের অর্জন কত হবে? প্রায় ১.২৫ বিলিয়ন ডলার। এটা যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে পাঁচ বছরে এই সেক্টর থেকে আমরা মোটামুটি ১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো।
এবার প্রযুক্তির বিষয়ে কথা বলা যাক। যুবকরা এতে অনেক বেশি উৎসাহ বোধ করবেন। চলমান ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউট সোর্সিং ব্যবসাকে আমাদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যেমন: ডাটা প্রসেসিং, ডাটা এন্ট্রি, কল সেন্টার, সফট ওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কাস্টমার সার্ভিসসহ সকল প্রযুক্তিভিত্তিক খাত সঠিক গতিতে যাতে এগিয়ে যায়, সে পরিকল্পনা আমাদের নিতে হবে। আমাদের তরুণদের মাইক্রোসফট, ইনটেল, গুগল, এলজি, স্যামসাং, সনির মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মেধা ও যোগ্যতা অবশ্যই আছে। আমরা যদি সার্বিক সুবিধা সংবলিত কয়েকটি আইটি পার্ক স্থাপন করি, যেখানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এবং দেশীয় উদ্যোক্তারা আমাদের জনবল ব্যবহার করে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার তৈরি করবে, যেখানে ইলেকট্রনিক্স উপকরণ বানাবে এবং প্রযুক্তিগত রিসার্চ ও ম্যানুফ্যাকচারিং করবে। এ লক্ষ্যে আমাদের আরেকটি সাবমেরিন ক্যাবল বসানো প্রয়োজন, ইন্টারনেট গতি ও ব্যান্ডউইথ বাড়ানো প্রয়োজন, ইন্টারনেট খরচ কমানো প্রয়োজন, অবশ্যই পেপলসহ ই-কমার্সের সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য বিদেশী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনার মাধ্যমে ইনসেনটিভ দিতে হবে। এসব সম্ভব হলে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো আমাদের লক্ষ লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থান করা যাবে, একই সঙ্গে অর্জন করা যাবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা।
আসুন, এরপর পর্যটন শিল্প নিয়ে আলোচনা করি। বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৭তম। অথচ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সদ্ব্যবহার করে পর্যটন শিল্পকে যদি ঢেলে সাজাতে পারি, তাহলে পর্যটনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম পর্যটক আকর্ষক দেশ হতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য ৯৯ মাইল। এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষণাবেক্ষণ করে সেখানে একটি বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করতে পারি। আমাদের সমুদ্র সৈকতে একটি মূল্যবান সম্পদ আছে, আর তা হলো সিলিকন। সমুদ্রে বিরাজমান সিলিকন ব্যবহার করে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি, বা যুক্তরাজ্যের সিলিকন পেন-এর আদলে কক্সবাজার জেলায় একটি সিলিকন বীচ সিটি গড়ে তুলতে পারি; যা এশিয়ার নতুন টেকনোলজিক্যাল হাব হতে পারে। অন্যদিকে, পার্বত্য এলাকাগুলোতে ‘কেবল-কার’ চালু করে আন্তঃসংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এবং অন্যান্য টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন তৈরি করে এটিকে আমরা মালয়েশিয়ার ডেন্টিং আইল্যান্ডের আদলে ন্যাচারাল পার্ক বানাতে পারি। পর্যটনের জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো সুন্দরবন। যুক্তরাজ্যের আদলে আমরা সুন্দরবনে একটি ওয়াটার বেইজ সাফারি পার্ক বানাতে পারি। যেখানে পর্যটকরা ওয়াটার বোটে থাকবেন, আর বাঘসহ জন্তুরা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে। আমি বিশ্বাস করি, টুরিজমের এসব কাজ যদি আমরা করতে পারি, তাহলে বর্তমানে দেশে পর্যটকের সংখ্যা বছরে এক লাখ, যেটিকে খুব সহজে আমরা টার্গেট করে ১৫ লাখে উন্নীত করতে পারবো।
নগরায়ন নিয়ে আমরা এবার কথা বলবো। রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশে প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস করে। জনজীবনের অবর্ণনীয় বিপর্যস্ততা দূর করতে যানজট নিরসন করা অত্যন্ত জরুরি। ভূতাত্ত্বিক কারণে আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড পথ তৈরি করা হয়তো কঠিন। তাই ঢাকার চারপাশে ওভার ড্রাম রেল চালু করা প্রয়োজন। নগরীর প্রধান প্রধান স্থানগুলো যেন এসব রেল ছুঁয়ে যেতে পারে। প্রয়োজন ঢাকার আশপাশ এলাকায় রেল ব্যবস্থা চালু করা। ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে নতুন নতুন রাস্তা তৈরি করা জরুরি। নিকটস্থ জেলাগুলোতে পরিকল্পিত ছোট ছোট সিটি গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে যারা সেখানে বাস করবেন তারা পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা পান। ঢাকার কল-কারখানাগুলোকে কাছাকাছি শিল্পনগরী গড়ে তুলে সেখানে স্থানান্তর করা যেতে পারে। তেমনি অনেক সরকারি অফিস-আদালতকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলায় স্থানান্তর করতে পারি।
পানি ব্যবস্থাপনা একটি জরুরি বিষয়। বৈশ্বিক সঙ্কট ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের পানি সমস্যা প্রকট। প্রায় ১৬-১৭ কোটি মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য, কৃষির জন্য এবং অন্যান্য কাজে ব্যাপক পরিমাণ পানির প্রয়োজন। আমাদের এখন থেকেই পানির বিকল্প সব ক’টি উৎসকে কাজে লাগাতে হবে। বর্ষা মওসুমে পানি সংরক্ষণের জন্য গড়ে তোলা দরকার জলাধার। জলাধার তৈরি করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ‘খাল খনন’ করা। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় গ্রহণ করতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় খাল, বিল, পুকুর খনন করতে হবে। পানি পিউরিফিকেশনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নদ-নদীকে বর্জ্যমুক্ত রাখতে হবে।
বিদ্যুৎ আমাদের একটি বিশাল সমস্যা। কেবল কয়লা, গ্যাস ও তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। অন্যান্য উৎসেরও ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। যেমন- সোলার, পানি, নিউক্লিয়ার-এর পাশাপাশি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে এবং আমাদের দৈনন্দিন বর্জ্য যেমন: ধানের তুষ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগিতা যাচাই ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। অবশ্য এসব বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এরপর আসুন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলি। আর তা হলো বনায়ন। একটি দেশে ২৫ ভাগ বনায়ন থাকা অবশ্যক। বাংলাদেশে এটি নামতে নামতে প্রায় ১০ ভাগে নেমে এসেছে। আসুন, আমরা এরপরে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবো। শহর ও গ্রাম সব জায়গাই আমাদের প্রকল্পের অধীনে থাকবে। এমন বৃক্ষরোপণ করতে হবে, যাদের বহুবিধ ব্যবহার ও ঔষধি গুণ থাকবে।
আজকে, যেই বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করলাম, আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশ ও দেশের মানুষকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, যদি আমাদেরকে সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হয়, দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও সামাজিক শৃঙ্খলার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হয়, আমি বিশ্বাস করি, উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারলে এসব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাস করেন, আপনাদের এভাবে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। এই কাজে দেশবাসীকে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ আপনারা যেই মানুষটির আদর্শে নিজেদেরকে রাজনীতিতে নিয়োজিত রেখেছেন, সেই মানুষটি ও তাঁর দলের আরেকটি স্লোগান আছে, আর তা হলো- ‘বিএনপির রাজনীতি হলো উন্নয়নের রাজনীতি, উৎপাদনের রাজনীতি’। উল্লিখিত বিষয়গুলো সরাসরি বাংলাদেশের উৎপাদন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসুন, এই চিন্তাগুলো আমরা কিভাবে আরও মানুষের মধ্যে শেয়ার করতে পারি। পর্যালোচনার মাধ্যমে এই চিন্তা-ভাবনাগুলো আরও ডেভেলপ করতে পারি, সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগী হই।
আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা জরুরি, আর তা হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন দেশের মানুষের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আগামীতে একটি নিরপেক্ষ এবং একটি স্বচ্ছ নির্বাচন। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে, যা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, আর তা হচ্ছে একটি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যদি একটি পজিটিভ ধারার সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়; কেবল তখনই সম্ভব আজকে যে সব বিষয়ে মানুষকে ঘিরে, মানুষের জীবনকে ঘিরে, দেশকে ঘিরে আমরা কথা বলেছি তার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। তাই আগামীতে অর্থাৎ, নিকট ভবিষ্যতে আমাদের রাজনৈতিক সকল চিন্তা-ভাবনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত- কিভাবে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। এ জন্য দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল নেতাকর্মীকে উদ্যোগী হতে হবে। বিএনপি, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে। সকল বাংলাদেশীকে এই দাবিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যারা স্বয়ংসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন, তাদের প্রতি আমার আহ্বান- সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হোন।
(গত ২৪শে জুলাই, ২০১৩ লন্ডনের গৌমেন হোটেল দ্য টাওয়ার্সে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কিছু পরিকল্পনা’সহ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তুলে ধরা ভাষণ)।