জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে হাসিনা-খালেদার ফোন আলাপ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলের প্রতি আগামী সংসদ অধিবেশনে যোগদান এবং আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে তাদের প্রস্তাব উত্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলের যে কোনো প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাবো যদি তা জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে দেয়া হয়।’ তিনি আরো বলেন, তিনি নিজে এবং তার সরকার সব সময়ই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী।
শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ফোনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বাসসকে এ খবর জানান।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘টেলিফোনে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী বান কি মুনকে আগামী সাধারণ নির্বাচন ও চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করেন।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন যে, তিনি ইতোপূর্বে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সমস্যা সমাধানে সংলাপে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই প্রস্তাবের কোনো জবাব না দিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) সরকারকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন এবং পরবর্তীতে বিরোধী দল সরকার পতনের লক্ষ্যে সহিংসতা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের শান্তি ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শান্তি চায় এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর দেখতে চায়।
আগামী সাধারণ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে বলে শেখ হাসিনা দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না -বান কি মুনকে খালেদা জিয়া
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের তাগিদের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার পর টেলিফোনে সন্ধ্যায় বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। একই সাথে তার উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবকে বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন, সংকট সমাধানে সংলাপ কিংবা আলোচনার বিকল্প নেই। বিএনপি যেকোনো ধরনের সংলাপ ও আলোচনায় প্রস্তত রয়েছে। তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
সকাল ১১টায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এর সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর তিনি বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে সোয়া ৭টার এ আধা ঘণ্টায় জাতিসংঘ মহাসচিব আগামী নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
বান কি মুনের টেলিফোন সংলাপের কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বিরোধী দলীয় নেতাকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে তারা একটি সবার কাছে গ্রহণযোগ ও সব দলের দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এজন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জাতিসংঘ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
জবাবে বিরোধী দলীয় নেতা জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনও জরুরি।
মির্জা ফখরুল জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব বিরোধী দলীয় নেতাকে বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়, সেজন্য আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা বেশিদূর এগোয়নি বলে তিনি তার উদ্বেগ কথাও বিরোধী দলীয় নেতার কাছে প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিরোধী দলীয় নেতার একান্ত সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, বিশেষ সহকারি এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিরোধী দলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিব সুরাতুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।