হজ্ব : মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্লাটফর্ম
আতিকুর রহমান নগরী: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি দিয়ে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পবিত্র আরব ভূমিতে। সাদা-কালো সব বর্ণের, সব গোত্রের মুসলমানগণ মহান আল্লাহ্ তা’আলার সান্নিধ্য লাভের জন্য সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে লাব্বাইক বলে জমায়েত হন এক প্লাটফর্মে।
হাদিস শরীফে সমস্ত মুসলিম উম্মাহ্কে একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ এই জাতি সব বিবাধ ভুলে গিয়ে দলমত-জাতিবর্ণ নির্বিশেষে মহান প্রভুর সম্মানে ইবাদতে মগ্ন হয়।
প্রত্যেক ধর্মেরই কিছু নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান আছে যার দ্বারা সেই ধর্মের অনুসারীগণ এক স্থানে সমবেত হন। একের সঙ্গে অন্যের সাক্ষাত হয়। কিন্তু পৃথিবীর সব ধর্মের চেয়ে ইসলাম ধর্ম তার অনুসারিদের একত্রিকরণের জন্য রেখেছে ব্যতিক্রম ব্যবস্থা।
হজ্ব হচ্ছে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা আর্থিক ও শারীরিক ইবাদতও বটে। হজ্বের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা, সংকল্প করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্বের মাসসমূহে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট কিছু স্থানের যিয়ারত করাকে হজ্ব বলে।
হজ্বের মাসসমূহ: শাওয়াল, যিলক্বাদাহ ও যিলহাজ্জার দশ দিন। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে হজ্ব যখন ওয়াজিব হয় তখনই পালন করা এবং একবারই পালন করা ফরয।
হজ্ব ফরয হওয়ার শর্ত আটটি: (১) মুসলমান হওয়া (২) জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া (৩) বালেগ হওয়া (৪) স্বাধীন হওয়া (৫) হজ্বের নির্ধারিত সময় তা আদায় করা (৬) মধ্যম ধরনের ব্যয় হিসেবে সফরের ব্যয় বহনের সামর্থ্য থাকা, যদি হজ্ব পালনকারি মক্কা শরীফে অবস্থান করে তবুও (৭) যারা মক্কা শরীফের বাহিরে থাকেন তাদের জন্য হজ্ব পালনের শর্ত হলো মালিকানা বা ভাড়া সূত্রে স্বতন্ত্রভাবে একটি বাহন বা অন্যকিছু ব্যবহারের সামর্থ্য থাকা যেমন: আমাদের দেশের হাজ্বীগণ বিমান ব্যবহার করে থাকেন। তবে কেউ যদি বিনিময় ছাড়া তার বাহন বা সওয়ারি ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে তা সামর্থ্য হিসেবে গণ্য হবে। যারা মক্কার আশেপাশে অবস্থান করেন, তাদের উপর তখন হজ্ব ফরয হয়। যখন তারা কষ্ট সহ্য করে নিজ শক্তিতে পায়ে হেটে হজ্ব করতে পারে। কিন্তু হাঁটতে সক্ষম না হলে সেই ব্যক্তি মক্কার অধিবাসী হোক বা না হোক তার জন্য অবশ্যই বাহনের প্রয়োজন হবে। (৮) অমুসলিম দেশে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির “হজ্ব ইসলামের একটি রুকন (ফরয)”-একথা জানা থাকা বা সে ব্যক্তি মুসলিম দেশের অধিবাসী।
হজ্ব ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাঁচটি: (১) সুস্থ থাকা (২) হজ্বে যাওয়ার বাহ্যিক বাধা দূরীভূত হওয়া (৩) রাস্থাঘাট নিরাপদ থাকা (স্থল ও সামুদ্রিক পথে যদি অধিকাংশ লোক নিরাপদে ফিরে আসে তবেই রাস্থা নিরাপদ বলে ধর্তব্য হবে।) (৪) মহিলাগণ তাদের ইদ্দত অবস্থায় না থাকা (৫) নারির বেলায় হজ্বে তার সাথে একজন মুসলমান আস্থাভাজন, জ্ঞান সম্পন্ন, বালেগ মাহরাম পুরুষ বা স্বামি থাকা। মাহরাম ব্যক্তি স্তন্যসূত্রে মাহরাম হতে পারে অথবা বৈবাহিক সূত্রেও হতে পারে।
চারটি কাজে হজ্ব পালনঃ চারটি কাজ করলে স্বাধিন ব্যক্তির হজ্বের ফরয বিশুদ্ধভাবে পালিত হয়। এক. ইহরাম। দুই. ইসলাম। এ দু’টি হলো হজ্বের শর্ত অতঃপর হজ্বের অপর দুই ফরয পালন করা। অর্থাৎ যিলহজ্বের নবম তারিখে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর থেকে কোরবানির দিনের ফযর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্তত এক মুহূর্ত আরাফাতের ময়দানে ইহরাম অবস্থায় থাকা। তবে শর্ত হলো এর পূর্বে ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস না করা চাই। দ্বিতীয় ফরয হলো তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর যথাসময়ে অর্থাৎ দশম তারিখের ফযরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর পালন করা।
হজ্বের ওয়াজিব সমূহঃ (১) মিক্বাত হতে ইহরাম বাধা (২) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা (৩) যিলহজ্বের দশ তারিখে ফযরের সময় শুরু হওয়ার পর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফায় থাকা (৪) পাথর নিক্ষেপ করা (৫) হজ্বে ক্বেরান ও হজ্বে তামাত্তু পালনকারীর পশু যবেহ করা (৬) মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা (৭) মাথা মুন্ডানোর কাজটি হারাম শরীফে এবং ক্বোরবানির দিন গুলোতে সম্পন্ন করা (৮) মাথা মু-ানোর পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করা (৯) হজ্বে ক্বেরান ও হজ্বে তামাত্তু পালনকারির পাথর নিক্ষেপ ও মাথা মু-ানোর মধ্যবর্তী সময়ে পশু যবেহ করা (১০) ক্বোরবানির দিনগুলোতে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করা (১১) হজ্বের মাসগুলোতে সাফা-মারওয়ার মধ্যখানে সায়ী করা (১২) গ্রহনযোগ্য তাওয়াফের পর সায়ী করা। (১৩) ওযর ব্যতীত পায়ে হেঁটে সায়ী করা (১৪) সাফা থেকে সায়ী আরম্ভ করা (১৫) বিদায়ী তাওয়াফ করা (১৬) বায়তুল্লাহ শরীফের সবক’টি তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে শুরু করা (১৭) ডান দিক থেকে তাওয়াফ শুরু করা (১৮) ওযর ছাড়া পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করা (১৯) ছোট-বড় উভয় প্রকার হাদাস থেকে পবিত্র থাকা (২০) সতর ঢাকা (২১) তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর (ক্বোরবানির দিনগুলোতে) সম্পন্ন করার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো সম্পন্ন করা (২২) নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা
যেমন: পুরুষরা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা এবং মাথা ও চেহারা ঢাকা, মহিলারা চেহারা ঢাকা, যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলা, গুনাহের কাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, শিকার বা শিকারের প্রতি ইশারা করা কাউকে শিকার দেখিয়ে দেয়া ইত্যাদি।
হজ্বের কার্যাবলি পুরোপুরিভাবে সম্পাদনের পদ্ধতি: যখন কেউ হজ্ব করার ইচ্ছা করবে তখন সে ‘মিক্বাত’ থেকে ইহরাম বাধবে। ইহ্রাম বাঁধার নিয়ম এই যে, ইহ্রাম বাঁধার প্রারম্ভে গোসল কিংবা ওযু করে নেয়া। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসলই উত্তম। কাজেই হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত নারীর যদি গোসল করলে ক্ষতি না হয় তাহলে গোসল করবে। নখ ও গোঁফ কেটে, বগলের পশম পরিষ্কার করে, নাভির নিচের পশম মুড়িয়ে, গোসল করে সুগন্ধি লাগিয়ে তেল ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হওয়া মুস্তাহাব। পুরুষ লোক একটি ইযার ও চাদর পরিধান করবে, যা নতুন কিংবা ধৌতকরা হতে পারে। তবে নতুন সাদা কাপড় উত্তম। চাদরটি বোতামবিহীন হতে হবে। কোন প্রকারের জোড়া বা কাপড় ছিড়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ধরনের কাজ করা মাকরুহ। এজন্য তার উপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।
হে হজ্ব বা ওমরাহ্ পালনকারী ব্যক্তি! এবার আপনি দু’রাকাত নামায পড়ুন। অতঃপর বলুন, হে আল্লাহ্ আমি হজ্ব পালন করার ইচ্ছা করেছি, সুতরাং আপনি আমার জন্য কাজটি সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা ক্ববুল করুন। নামাযের পর তালবিয়া পড়ুন “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদাহ্, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা”। যখন আপনি হজ্ব বা ওমরাহর নিয়তে তালবিয়া পড়লেন তখনই আপনার ইহরাম বাঁধা হয়ে গেল। সুতরাং এ সময় থেকে আপনি রাফাস তথা স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবেন। সবসময় তালবিয়া পড়ুন, তবে চিৎকার দেয়ার প্রয়োজন নেই, যার দ্বারা নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয়। যখন আপনি মক্কায় পৌঁছুবেন তখন আপনার গোসল ও দরজায়ে মুআল্লা দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব।
হজ্বের প্রকারভেদ: হজ্ব মোট তিন প্রকার। ১. হজ্বে ইফরাদ ২. হজ্বে তামাত্তু এবং ৩. হজ্বে ক্বেরান।
হজ্বে ইফরাদের পরিচয়: ইফরাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: একা, একাকি বা পৃথক। শরীয়তের পরিভাষায় মিক্বাত হতে শুধু হজ্বের নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে শুধুমাত্র হজ্ব সম্পন্ন করার নাম ইফরাদ।
হজ্বে তামাত্তু এর পরিচয়: তামাত্তু এর আভিধানিক অর্থ: উপকারিতা অর্জন করা, উপভোগ করা। পরিভাষায় মিক্বাত হতে প্রথমে ওমরার ইহরাম বেধে তার কার্যাবলি সমাপন করে হালাল হওয়ার পর হজ্বের সময় হজ্বের ইহরাম বেঁধে তার আহকাম সমূহ সম্পাদন করাকে তামাত্তু বলে।
হজ্বে ক্বেরান এর পরিচয়ঃ ক্বেরানের শাব্দিক অর্থ: মিলানো, মিশ্রণ করা। পরিভাষায় মিক্বাত হতে একসাথে হজ্ব ও ওমরাহর নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে উভয়টিকে একই ইহরামে সমাপ্ত করাকে ক্বেরান বলে।
সর্বোত্তম হজ্ব কোনটি: তিন প্রকারের হজ্বের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম আবু হনিফা (রহঃ)’র মতে হজ্বে ক্বেরান হচ্ছে সর্বোত্তম হজ্ব। এরপর তামাত্তু তারপর ইফরাদ। কেননা নবিয়ে করিম (সাঃ) বিদায় হজ্বের সময় ক্বেরান হজ্ব করেছেন এবং তার পরিবারবর্গকেও তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া এটা পালন করা খুবই কষ্টকর। কারণ এতে দুটি ইবাদত একসাথে করা হয়।
ইমাম শাফি ও ইমাম মালিক (রহঃ)’র মতে ইফরাদ হচ্ছে সর্বোত্তম। এরপর তামাত্তু, তারপর ক্বেরান। এখানে ইমামে আযম (রহ.) এর মতটিই গ্রহণযোগ্য।
ক্বেরান হজ্বের প্রথম কাজ ক্বেরানের মধ্যে সর্বপ্রথম ওমরাহ্র কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে, তারপর হজ্বের কাজ শুরু করতে হবে। এ কারণে কোন ব্যক্তি প্রথমে হজ্বের নিয়তে তাওয়াফ করলেও উমরার তাওয়াফই হবে।
ক্বেরানকারির ক্বোরবানির বিধান: ক্বেরানকারিগণ ক্বোরবানির দিবসে হজ্ব ও ওমরাহ্ উভয়ের জন্য ক্বোরবানি করবে। কেননা আল্লাহতা’লা তাকে একই সময়ে একই ইহরামে হজ্ব ও ওমরাহ্ দু’টিই আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আল্লাহ্র শুকরিয়া হিসেবে তার উপর একটি ক্বোরবানি ওয়াজিব হবে। আর যদি ক্বোরবানির সামর্থ্য না থাকে তাহলে দশটি রোযা রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে তিনটি হজ্বের দিন সমূহে তথা সাত, আট ও নয় তারিখে রাখতে হবে। পবিত্র ক্বোরআনে ইরশাদ হয়েছে “ফামান তামাত্তাআ বিল ওমরাতি ইলাল হাজ্বি ফামাস তাইসারা মিনাল হাদয়ি ফামাল লাম ইয়াজিদ ফা সিয়ামু সালাসাতি আইয়্যামিন ফিল হাজ্বি ওয়াসাব আতিন ইলা রাজা’তুম তিলকা আশারাতুন কামিলাহ”। অর্থাৎ “যে ব্যক্তি হজ্বের সাথে ওমরাহ্কে একত্রিত করে উপহবে হবে সে তার সাধ্যানুযায়ী ক্বোরবানি দেবে। আর যে ব্যক্তি ক্বোরবানি দিতে অক্ষম হবে সে হজ্বের সময় তিনদিন রোযা রাখবে আর যখন তোমরা হজ্ব হতে প্রত্যাবর্তন করবে তখন আরও সাতটি রোযা রাখবে।
ক্বেরান নিয়তকারী ওমরাহ্ ছেড়ে দিলে তার হুকুম: ক্বেরান পালনকারী যদি মক্কায় প্রবেশ না করে সোজা আরাফায় চলে যায় তবে তার ওমরাহ্ বাতিল ও মুফরিদ হিসেবে গণ্য হবে। এ ওমরাহ্ ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর একটি দম ও পুনরায় ক্বাযা ওয়াজিব হবে। কেননা সে নিয়তের মাধ্যমে তার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছিল আর ওয়াজিব পরিত্যাগের জন্য ক্বাযা ওয়াযিব হয়েছে। আর যদি মক্কায় দাখিল হয়ে ওমরাহ্র অধিকাংশ কাজ করার পূর্বেই আরাফায় চলে আসে তাহলে উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে, তবে ওমরার তাওয়াফের অধিকাংশ যেমন: সাত চক্করের স্থলে চার চক্করের পর আরাফায় চলে গেলে তার ওমরাহ্ বাতিল হবে না। বরং ক্বোরবানির দিবসে তা পূরণ করে দিবে।
হজ্বে তামাত্তুর পরিচয়: তামাত্তুর আভিধানিক অর্থ উপকৃত হওয়া বা লাভবান হওয়া। শরীয়তের দৃষ্টিতে তামাত্তু বলা হয় হজ্বের মাসসমূহে তথা শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্ব মাসে মিক্বাত হতে শুধু ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরাহ্র কার্যাবলি সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর যিলহজ্ব মাসের আট তারিখে পুনরায় ইহরাম বেঁধে হজ্ব সমাপন করা।
তামাত্তুকারি তাওয়াফের সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে: তামাত্তু আদায়কারী হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের পর ওমরাহর তাওয়াফ শুরু করার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে। মহানবী (সাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইমাম (রহঃ) বলেন: ‘বাইতুল্লাহ শরীফের প্রতি দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে।
দমের হুকুম: তামাত্তু আদায়কারীর উপর শুকরিয়া স্বরূপ ক্বিরান আদায়কারীর ন্যায় একটি ক্বোরবানি করা ওয়াযিব। যদি সে ক্বোরবানি করতে অক্ষম হয় তাহলে ক্বোরবানির দিনের পূর্বে তিনটি এবং বাকি সাতটি রোযা পরে রাখতে হবে।
আইয়্যামে হজ্বের বিভিন্ন নামসমূহ: ১. যিলহজ্বের আট তারিখকে ‘ইয়াউমুত তারউইয়্যাহ’। ২. নয় তারিখকে ‘ইয়াউমুল আরাফাহ’। ৩. দশ তারিখকে ‘ইয়াউমুন নাহর’। ৪. এগারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল ওকুফ’। ৫. বারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিল আওয়াল’ এবং ৬. তেরো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিস সানি’ বলে।
হজ্বে তামাত্তু বাতিল হওয়ার কারণ: তামাত্তুকারি হাদি প্রেরণ না করে হজ্বের মাসে ওমরার কাজ সমাপন করে নিজ দেশে ফিরে গেলে তার তামাত্তু বাতিল হবে। আর যদি হাদির জানোয়ার প্রেরন করে তাহলে ইমাম আবু হানিফা ও আবু ইউসুফ (রহঃ)’র মতে তার তামাত্তু বাতিল বলে গণ্য হবে।
হজ্বের মাসের পূর্বে ওমরাহ্র কাজ আংশিক করলে হজ্বে তামাত্তু হবে কিনা: কোন ব্যক্তি যদি হজ্বের মাসের পূর্বে ওমরাহ্র উহরাম করে চার চক্করের কম তাওয়াফ করে এরপর বাকি তাওয়াফ হজ্বের মাসে করে তাহলে তার তামাত্তু হবে না। বরং সে তামাত্তুকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
পরিশেষে, আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন বিশ্বের সকল মুসলমানকে হজ্ব সংক্রান্ত মাসআলা অবগত হয়ে শরীয়তের নির্ধারিত পদ্ধতিতে সঠিকভাবে হজ্ব পালন করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
তথ্যপঞ্জিকাঃ
১. হেদায়া (কিতাবুল হজ্ব)।
২. মাসাঈলে হজ্ব।
৩. নূরুল ঈযাহ।