যুক্তরাষ্ট্রে মুনা’র দু’দিনব্যাপী বার্ষিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সংগঠন মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকার (মুনা) বার্ষিক কনভেনশনে বক্তারা বিশ্বব্যাপী অব্যাহত নেতিবাচক প্রচারণার মোকাবিলায় ইসলামের মানবিক ও কল্যাণকর বিষয়গুলোর প্রসারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কনভেশনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে প্রায় ৬ হাজার নারী-পুরুষ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অংশ নেন। কনভেনশনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিরোধী প্রচারণায় যতগুলো মাধ্যম ব্যবহার হচ্ছে, ইতিবাচক দিকগুলো প্রসারে সে তুলনায় প্রচেষ্টা খুবই সামান্য। অপরদিকে মানবিক ও সমাজের কল্যাণকর বিষয়গুলোতে মুসলমানরা অনেক পিছিয়ে আছে। ফলে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইসলামের নেতিবাচক বিষয়গুলোই মুখ্য হিসেবে কাজ করছে। বক্তারা বলেন, ‘ইসলামোফোবিয়া’র বিরুদ্ধে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
গত শনিবার নিউইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে মুনা’র দুই দিনব্যাপী এই কনভেনশন শুরু হয়। ‘ডিভাইন মেসেজ : রোড টু সাকসেস’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে এই কনভেনশনে আমেরিকা ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ইসলামিক স্কলাররা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনভেনশন কমিটির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ নূরুজ্জামান। এরপর উম্মাহ শিল্পীগোষ্ঠী কনভেনশনের থীম-সং পরিবেশন করে।
মুনা’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সাইদুর রহমান চৌধুরীর বক্তব্যে বলেন, কনভেনশনের মাধ্যমে আমেরিকায় বাংলাদেশী মুসলমানদের পরিবার পরিজনকে একসঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। একইসাথে এ কনভেনশনের মাধ্যমে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে ইসলামী সংস্কৃতি চর্চাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মায়ের পেটে বাচ্চাকে গুলীবিদ্ধ করা হচ্ছে, কম্প্রেসার দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যা করা হচ্ছে। এসব কিছুই বার্তা বহন করে আমরা কতটুকু ইসলামকে ধারণ করতে পেরেছি। মূলত: পরিবার-সমাজে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে এসব অনাচার ঘটতো না।
এক্সিকিউটিভ ডিরেকটর অব মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি (ম্যাস) মাজেন মোক্তাদি বিশ্বব্যাপী ইসলামের নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা নতুন কিছু নয়, এটা আগেও ছিল। ইতিহাস প্রমাণ করে এ ধরণের নেতিবাচক প্রচারণা আমাদের র্দুবল নয় বরং আরো শক্তিশালী করে।
ওসামা জামাল বলেন, মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, এটা কোনো বড় সমস্যা নয়। সকল মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে একমত হতে হবে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরিতে মুনা এ কাজটি করে যাচ্ছে।
ইমাম আব্দুল মালেক বলেন, আল্লাহর সকল সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদতের জন্য। আমরা সবাই তার মহিমা সম্পর্কে অবহিত। বিলিনিয়র অথবা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্য নয়।
উদ্বোধনী দিনে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা তারেক মনোয়ার, ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ, শেখ কামাল আল-মালিকী, শেখ আবদুল কাইয়ুম, ড. আবদুল বারী, উস্তাদ মোহাম্মদ বাজুর প্রমুখ।
এছাড়া উত্তর আমেরিকার নতুন প্রজন্মের মুসলিম তরুণ-তরুণীদের জন্য পৃথক কনফান্সের আয়োজন করা হয়। এতে ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন হাফিজ জাকির, মোহাম্মদ হাসান, ক্বারী আবদুল্লাহ আল আমিনসহ আরো বেশ কজন তরুণ বক্তা। শিশুদের জন্যও পৃথকভাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়। কনভেনশনে রকমারি সামগ্রীর বিক্রয় ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা-মুনা একটি অলাভজনক দাওয়াহভিত্তিক সমাজ সেবামূলক জাতীয় সংগঠন হিসেবে ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি স্টেটে মুনা’র কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করেছে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি