ওয়ালস্ট্রিটের ‘হিরো’ এখন নিউইয়র্কের রাস্তায় !
আজ যে রাজা, কাল সে ফকির ! অতিরিক্ত বিলাসিতা, অপরিকল্পিত জীবন অথবা ভাগ্যের নির্মমতা যে কাউকে উঁচু থেকে নামাতে পারে নিচে, একেবারে রাস্তায়!
এক সময় তিনি ছিলেন মার্কিন মুলুকের অন্যতম ধনকুবের। নিত্যনতুন BMW ছাড়া ঘুরতেন না। লাস ভেগাসের বিলাসবহুল সোহো লফট-এ তার বিলাসবহুল জীবন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিত। সেই ব্যক্তিকেই সম্প্রতি পাওয়া গেল রাস্তার ধারে ফুটে। না খেতে পেয়ে কঙ্কালসার চেহারা। আস্তাকুঁড় থেকে জোগাড় করা কিছু পিত্জার বাক্স পেতে শুয়ে আছেন। কথা বলারও সামর্থ নেই।
কী ভাবে হলো এই অবস্থা?
হলিউডের ‘Wolf of Wall Street’ ছবিটি যারা দেখেছেন, শেয়ারবাজারের দালালদের জীবনযাপনের বিলাসিতা সম্পর্কে একটা ধারণা নিশ্চয়ই আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালস্ট্রিটে শেয়ার মার্কেটের এক একজন দালালকে এককথায় ধনকুবেরই বলা যায়। প্রতি মুহূর্তে তাদের আয়। ভাগ্য সঙ্গ দিলে একদিনেই কোটিপতি হওয়ার নজিরও বিস্তর।
সেই ওয়ালস্ট্রিটের স্টকব্রোকার ছিলেন উইলিয়াম প্রেস্টন কিং। Merrill Lynch , Oppenheimer & Co-র মতো সংস্থায় উইলিয়ামের বড় ভূমিকা ছিল। তার বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তার উপর নির্ভর করেই বড় সংস্থা তাদের শেয়ারদর ঠিক করত। উইলিয়াম যা আশা করত, তা-ই দাম উঠত। তার গণনা কোনো দিনও ব্যর্থ হয়নি। দীর্ঘ তিন দশক দু’হাতে আয় করে বিলাসিতার শীর্ষে ছিলেন উইলিয়াম। অন্যান্য দালালরা রীতিমতো হিংসা করত তাকে। নিত্য নতুন দামি গাড়ি, বাংলো, পার্টি, নারীসঙ্গ- ধনকুবের উইলিয়ামকে এক ডাকে চিনত লাস ভেগাসের বাসিন্দারা।
নিউইয়র্কে গৃহহীন ভবঘুরের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে বলে বেশ চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। শহরে কত গৃহহীন মানুষ রয়েছেন, তারই একটি তালিকা তৈরি করতে গত সপ্তাহে একটি সমীক্ষা শুরু করে প্রশাসন। তাতেই এক গৃহহীন ভবঘুরের ছবি দেখে চমকে যান এক ব্যক্তি। শেয়ার মার্কেটে এক সময়ের উইলিয়মের বন্ধু জর্ডান বেলফোর্ট। নিউইয়র্কের রাস্তার ধারে পিত্জার বাক্স মাথায় দিয়ে শুয়ে আছে কঙ্কালসার উইলিয়াম। খবর যায় উইলিয়ামের বোন ক্রিস্টিন কিং-এর কাছে। ভাইয়ের অবস্থা দেখে তাজ্জব হয়ে যান ক্রিস্টিন। তার কথায়, ‘আমি ভাবতেও পারছি না, ভাইয়ার এই অবস্থা। ভাইয়া তো ধনকুবের ছিল।’
জানা গিয়েছে, উইলিয়াম প্রেস্টন কিং আসলে ফকির হয়েছেন মদ, ড্রাগ ও উদ্দাম জীবনের জন্য। শেয়ারবাজার থেকে যা আয় হতো, সবই তিনি খরচ করতেন নেশা আর নারীতে। এই ভাবেই গত বছর তিনি দেউলিয়া হয়ে যান। নেশা কেড়ে নেয় বাড়িও। তারপর থেকে রাস্তাতেই রাত কাটাচ্ছেন উইলিয়াম। ক্রিস্টিন আপাতত উইলিয়মকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে রেখেছেন। তার কথায়, ‘একসময় ভাইয়া খুব খারাপ ব্যবহার করত। আমার প্রচুর জিনিস, গয়না চুরি করে বিক্রি করে দিত। যা টাকা পেত, শেয়ারবাজারে ঢেলে দিত। তারপর একসময় আমাদের থেকে আলাদ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ ছিল না।’