নিহত মেয়েকে লেখা বেলতাজির চিঠিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এরদোগান

তুরস্কের উলকা টিভিতে সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রধানমন্ত্রী রজব তৈয়্যেব এরদোগান। অনুষ্ঠানের শেষপর্যায়ে মিসরের ব্রাদারহুডের সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ আল বেলতাজি তার মেয়ে আসমাকে লেখা চিঠি পাঠ করা হলে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি কয়েক মিনিটের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মেয়েটি ১৪ আগস্ট কায়রোয় মিসরীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হন। টুডেস জামান। দামেস্কের কাছে সিরীয় সেনাবাহিনীর রাসায়নিক অস্ত্রের হামলায় ১৩০০ লোক নিহত হওয়া থেকে শুরু করে তুর্কি সীমান্ত পার হয়ে অনেক সিরীয় উদ্বাস্তুর ঢল নামা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন এরদোগান। অনুষ্ঠান শেষে একটি ভিডিও সম্প্রচার করা হয়। এতে মেয়ের মৃত্যুর পর তাকে উদ্দেশ করে লেখা বেলতাজির চিঠি পাঠ করে শোনানো হয়। তুর্কি প্রধানমন্ত্রী তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। কয়েক মিনিট বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর তিনি বলেন, ভিডিওটি তাকে ১৯৯০ দশকের কঠিন দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তখন তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরদোগান বলেন, ব্যস্ত ও ঝামেলাপূর্ণ রাজনৈতিক জীবনে তিনি সন্তানদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারতেন না। একদিন তার মেয়ে এ নিয়ে অভিযোগ করেন। সম্প্রতি দামেস্কের কাছে সিরীয় বাহিনীর রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় প্রচুর মানুষ নিহত হওয়ার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বাশার আল আসাদকে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর দায়ে অভিযুক্ত করেন এরদোগান। বেলতাজির চিঠি স্নেহের কন্যা ও সম্মানিত শিক্ষক আসমা বেলতাজি, আমি তোমাকে বিদায় জানাতে পারছি না। আমি শুধু বলছি আগামীকাল আমরা একত্র হবো। মাথা উঁচু রেখে স্বৈরাচার ও শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ও স্বাধীনতা ভালোবেসে তুমি অমর হয়েছো। তুমি এই দেশটিকে সভ্য দেশগুলোর মাঝখানে নিজস্ব অবস্থানে পুনরায় স্থাপনে নতুন দিগন্তের নীরব প্রত্যাশী হয়ে অমর হয়েছো। তোমাদের বয়সীদের যেসব ব্যস্ততা থাকে তাতে তুমি নিজেকে ব্যস্ত রাখোনি। প্রচলিত শিক্ষা তোমার আকাক্সা ও আগ্রহ পূরণে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও তুমি সব সময় শ্রেণীতে প্রথম হয়েছো। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে আমি তোমার মূল্যবান সঙ্গ পাইনি। বিশেষ করে আমার সময় আমাকে তোমার সঙ্গ উপভোগের সুযোগ দেয়নি। রাবা আল আদাবিয়া স্কয়ারে সবশেষ সাক্ষাতে তুমি বলেছিলে, আমাদের সাথে থাকার সময়েও আপনি ব্যস্ত থাকেন। আমি বলেছিলাম, মনে হয় এ জীবন পরস্পরের সঙ্গ উপভোগের জন্য যথেষ্ট নয়। অতএব আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমরা যেন জান্নাতে পরস্পরের সঙ্গ উপভোগ করতে পারি। তুমি শহীদ হওয়ার দুই রাত আগে আমি স্বপ্নে তোমাকে বিয়ের সাদা পোশাকে দেখি। তুমি ছিলে সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে। যখন তুমি আমার পাশে ছিলে, আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, এটাকি তোমার বিয়ের রাত? তুমি বলেছিলে সন্ধ্যায় নয়, দুপুরে। লোকেরা যখন আমাকে জানালো তুমি বুধবার বিকেলে শহীদ হয়েছ, আমি তখন তোমার কথার মর্ম বুঝতে পারলাম এবং আমি অনুধাবন করলাম আল্লাহ তোমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। তুমি আমার এ বিশ্বাস জোরদার করেছো, আমরা সত্যের পক্ষে রয়েছি এবং আমাদের শত্রুরা মিথ্যার পক্ষে রয়েছে। তোমার শেষ বিদায়ে উপস্থিত না থাকা, তোমাকে শেষবারের মতো না দেখা, তোমার কপালে চুমু দিতে না পারা এবং তোমার নামাজে জানাজায় ইমামতি করতে না পারায় আমি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। স্নেহের মা আমার, আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি, আমি আমার জীবনের জন্য বা অন্যায়ভাবে কারাভোগের জন্য দুঃখ করছি না বরং তুমি যে বার্তার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছো অর্থাৎ বিপ্লবের পূর্ণতা সাধন এবং বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জন সেই বার্তা বহন করতে চাই। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু রাখায় তোমার জীবন মহিমান্বিত হয়েছে। ঘাতক বুলেট তোমার বুকে আঘাত করেছে। কী উজ্জ্বল দৃঢ় ও পবিত্র রূহ! আমি নিশ্চিত, তুমি আল্লাহর কাছে নিষ্পাপ ছিলে এবং তিনি আমাদের মধ্য থেকে তোমাকে শহীদ হওয়ার জন্য নির্বাচন করেছেন। শেষকথা, স্নেহের কন্যা ও সম্মানিত শিক্ষক, আমি তোমাকে বিদায় জানাব না বরং আমি তোমাকে বিদায় সংবর্ধনা জানাব। আমরা শিগগির আমাদের প্রিয় নবী ও তাঁর সাহাবিদের সাথে জান্নাতে একত্র হবো। সেখানে আমাদের পরস্পরের ও আমাদের প্রিয়জনদের সঙ্গ উপভোগের ইচ্ছা বাস্তবায়িত হবে। (মিডলইস্ট মনিটর থেকে অনূদিত)

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button