বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ীতে জঙ্গী আস্তানা
মোস্তফা মোঘল: দেশ কাঁপানো ‘বাংলাভাই’ অধ্যায় শেষ হওয়ার পর আবার নতুন করে উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া গেল বগুড়ায়। রহস্যময় এই সংগঠনের বিষয়ে এখনো আইন-শৃংখলা বাহিনী বিস্তারিত জানতে না পারলেও তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তাদের অবাক করেছে। র্যাব সদস্যরা বগুড়া শহরের যে বাড়ী থেকে নতুন এই জঙ্গী সংগঠনের আস্তানার সন্ধান পেয়েছে সেই বাড়ীর মালিক স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। এর আগে বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগারপাড়ার যে বাড়ী থেকে ট্রাকর্ভতি গুলী উদ্ধার হয়েছিল সেই বাড়ীর মালিকও ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ী থেকে একের পর এক জঙ্গী গ্রেফতার এবং অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে দেশে জঙ্গী উত্থানের পিছনে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নতুন করে আলোচিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ার যে বাড়ি থেকে র্যাব সদস্যরা আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রসহ তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে সে বাড়ীর মালিক দুলাল হোসেন ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বলে জানাগেছে। এছাড়া তিনি জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার ব্যবসায়িক পার্টনার। দুলালের ভগ্নিপতি সেই নেতার প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে পরিচিত। এই বাড়ীতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। এর আগে র্যাব সদস্যরা সেখান থেকে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। ঘটনার পর বাড়ির মালিকের সন্ধানে নিরাপত্তা বাহিনী কয়েক দফা অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি। জঙ্গী আস্তানা আবিস্কারের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বগুড়া থেকে অস্ত্র উদ্ধার ও ৩ জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়েও নাটক করেছে কিছু মিডিয়া। দৈনিক প্রথম আলো বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের অনলাইনে রিপোর্ট করে “বগুড়ায় শিবিরের মেস থেকে অস্ত্র উদ্ধার”। অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব কর্মকর্তারা এবিষয়ে কোন কিছু না বললেও প্রথম আলো র্যাব কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদটি প্রচার করে। এর ফলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রশিবির সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এমনকি র্যাবও বিব্রত পরিস্থিতির মুখে পড়ে। অবশেষে রাতে সংবাদটি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করে প্রথম আলো। এছাড়া এধরনের জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা গ্রেফতারের পর যে বাড়ী থেকে গ্রেফতার হয় বা যে বাড়ী থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয় সেই বাড়ীওয়ালার পরিচয়কে ফলাও করে প্রচার করে মিডিয়া। অথচ বগুড়ায় নতুন একটা জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্ব আবিষ্কারের পরেও বাড়ীওয়ালাকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই কোন মিডিয়া কর্মির? বিশেষ করে যারা জঙ্গী তৎপরতা আবিস্কারের জন্য দিনের পর দিন কাল্পনিক রিপোর্ট প্রকাশ করে চলেছেন সেইসব সংবাদকর্মিদের নিশ্চুপ ভূমিকা সবাইকে অবাক করেছে। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে- জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার কারণেই কি তাকে আড়াল করা হচ্ছে? শুধু তাই নয়; বিভিন্ন সংবাদপত্রে গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত জঙ্গি গ্রেফতারের খবরের সাথে সম্প্রতি বগুড়ায় অনুষ্ঠিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল সমাবেশের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
এদিকে, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় একের পর এক জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়ায় এই এলাকার ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বৃহস্পতিবার ‘বিইএম’ নামের নতুন এই জঙ্গী সংগঠনের আস্তানা আবিষ্কারের আগে জেএমবি নেতা বাংলা ভাই এবং জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান ছানি শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় বাড়ী ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ দিন আত্মগোপন করেছিলেন। শহরের অনেক জনাকীর্ণ এলাকা ছেড়ে জঙ্গীরা ঠনঠনিয়া এলাকায় কেন আশ্রয় নেয় তা নিরাপত্তা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে। এলাকায় সরেজমিনে ঘূরে দেখা গেছে, এই এলাকার বেশিরভাগ বাসা-বাড়ীর ধরন ভিন্ন। এসব বাড়ী থেকে চতুর্দিক দিয়ে রাস্তা রয়েছে। ফলে বিপদ মুহূর্তে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। জঙ্গী সংগঠনের নেতাকর্মিরা নিজেদের পালানোর সহজ পথ থাকায় এই এলাকাকে তাদের নিরাপদ আস্তানা মনে করে থাকে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
এর আগে ২০০৩ সালের ২৭ জুন রাতে বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগারপাড়া গ্রামে আওয়ামীলীগ নেতা পিন্টুর বাড়ী থেকে ট্রাকভর্তি রাইফেলের গুলী উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে পিন্টু পলাতক রয়েছেন। এছাড়া একসময়ে দেশের আলোচিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি’র প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আযমের ভগ্নিপতি। জেএমবি’র সামরিক কমান্ডার ছানি ছিলেন মির্জা আযমের ভাগ্নে। এভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দেশে জঙ্গী তৎপরতার সাথে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অথচ আ’লীগ সবসময় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ করে আসছে। কখনো কোন প্রমাণ না থাকলেও জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এমন কিছূ নেই যা তারা করেনি। বগুড়ায় একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ী থেকে জঙ্গী আস্তানা এবং গোলা বারুদ উদ্ধারের ঘটনায় আওয়ামী লীগের জঙ্গী কানেকশন অনেকটাই পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে বলে সচেতন মহল মনে করছে।