ইসরায়েলের কারাগারে ৭০০০ ফিলিস্তিনীর অমানবিক জীবন-যাপন
বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর এখনো চলছে জায়নবাদী ইসরায়েলি বর্বরতা। যুদ্ধ বিরতির পর ধ্বংস স্তুপের জঞ্জাল সরিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্নটাও নষ্ট করে দিচ্ছে তারা। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রতিনিয়তই হামলে পড়ছে দখলদার ইহুদি শক্তি।
তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ফিলিস্তিনের অবুঝ শিশুরাও। বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে তাদের। নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ধরে নিয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্মম নির্যাতন।
বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটক রাখা হচ্ছে কারাগারের গহীন অন্ধকারে। মানবিক অধিকারটুকুও দেয়া হচ্ছে না তাদের। নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ইসরায়েলি গারদে বন্দিরা।
দিনের পর দিন বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুণতে হচ্ছে তাদের। মধ্য প্রাচ্যের “ক্যান্সার খ্যাত” ইসরায়েলের কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অসংখ্য ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিন সরকারের কারাবন্দি বিষয়ক বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমানে ইসরায়েলের ১৭টি কারাগারে ৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন।
যাদের বেশির ভাগই কোন অভিযোগ ছাড়াই বছরের পর বছর আটক রয়েছেন। এর মধ্যে গত গ্রীষ্মকালে পশ্চিম তীর ও গাজা এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দু’ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিন স্বাধীনতা সংস্থা- পিএলও জানিয়েছে, গত দেড় যুগে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে ১০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি শিশুকে আটক করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল।
পিএলও’র বন্দি বিষয়ক কমিটির প্রধান ঈসা কারাকে বলেন, আটক ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর নিয়মিত নির্যাতন চালায় ইহুদিবাদী কারারক্ষীরা।
তিনি আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনে শিশুদের আটক ও নির্যাতন না করার যে বিধান রয়েছে তা চরমভাবে লঙ্ঘন করছে তেল আবিব।
এছাড়া, তাদেরকে নিয়মিত ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও নির্যাতন করা হচ্ছে এবং তাদের জন্য স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে না।”
এদিকে ফিলিস্তিনের কারাবন্দি বিষয়ক বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিরা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে না। ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা মা’আন দেশটির সরকারের একটি বিবৃতির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই বিবৃতিতে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৭৫ বছর বয়সী ফুয়াদ সুইকি’র শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ফিলিস্তিন সরকার বলছে, তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গেছে। বেড়েছে রক্তচাপ।
মূত্রথলীতেও সমস্যা দেখা দিয়েছ। কিন্তু তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাননি। সবচেয়ে বয়স্ক এই ফিলিস্তিনি বন্দিকে ২০০৬ সালে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে ২০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
আরেক কারাবন্দি খালেদ হাসান আল-ক্বাদি ২০০৩ সালে দণ্ডিত হওয়ার পর থেকেই হেপাটাইটিস-বি’তে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ তাকে কোন ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়নি।
এছাড়াও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আল-রামলা হাসপাতালে ১৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দির চিকিৎসা গ্রহণের কথাও জানিয়েছে ওই কারাবন্দি বিষয়ক বিভাগ।
ইসরায়েলি কারাগারগুলোর অবস্থা ও বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল কারাবন্দি রাখার প্রশাসনিক নীতির প্রতিবাদে প্রায় প্রতিদিনই অনশন করে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি বন্দিরা।
সর্বশেষ মোহাম্মদ আল্লান (৩১) নামে এক যুবক ৬০ দিন অনশন পালন করে গত ৩১ আগস্ট অচেতন হয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
ইসরায়েলি কারাগারে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটকের প্রতিবাদ এবং এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গত দু’মাস তিনি কোন খাবার গ্রহণ করেননি। বর্তমানে আল্লানের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের অনুমোদনক্রমে ওই ফিলিস্তিনি বন্দিকে তরল খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে মোহাম্মদ আল্লানের অসুস্থতার খবরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনিরা। তার দাবির সমর্থনে গত শনিবার বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীরের কাফর কদ্দাম শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
এসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ইসরায়েলি সেনারা টিয়ার গ্যাস, রাসায়নিক মিশ্রিত পানি ও গুলি ছোড়ে।
এ ঘটনায় অনেক ফিলিস্তিনি গুরুতর আহত হন। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসময় ইসরায়েলিরা একটি বুলডোজার দিয়ে কাফর কদ্দাম শহরে পানি সরবরাহের একটি পাইপ লাইন ভেঙ্গে দেয় বলে জানান ফিলিস্তিনিদের সংগঠন ‘পপুলার স্ট্রাগল কমিটি’ এর সমন্বয়কারী মুরাদ ইশতেই।
তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলিদের দখলদারিত্ব এবং অপরাধ বন্ধের দাবি জানান। একই সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের নি:শর্ত মুক্তির দাবিও জানান তারা।