ডায়ানার মৃত্যু দুর্ঘটনায় হয়নি : রাণী এলিজাবেথ
প্যারিস থেকে খবরটা যখন ঘুরতে ঘুরতে রাজ পরিবারের বালমোরাল প্রাসাদে পৌঁছুলো, রাণী নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। ঘটনা ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্টের। সেদিন ভোররাতে ভয়ানক দুর্ঘটনায় মারা যান ইংল্যান্ডের রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানা। প্রথমে মনে করা হয়েছিলো প্যারিসের পোন্ত দ্যু ল্য-অ্যালমা টানেলে সে রাতে হওয়া গাড়ি দুর্ঘটনা গুরুতর হলেও গাড়িতে থাকা ডায়ানা মারা যাননি।
রাণী এলিজাবেথ কিছুতেই মানতে পারছিলেন না যে, ডায়ানা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। খবরটা শোনার সময় রাণীর সাথে থাকা একজন তাঁকে জোরে জোরে বলতে শুনলেন, ‘নিশ্চয়ই কেউ ওর গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে দিয়েছিলো’। রাণীর এই প্রতিক্রিয়া থেকেই রাণী এবং ডায়ানার মধ্যকার অসামান্য সম্পর্কের চিত্র ফুটে ওঠে। উঠে আসে শাশুড়ি-বউয়ের মধ্যকার সুন্দর সম্পর্ক।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে রাণীর এ অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন লেখক ইনগ্রিড সিউয়ার্ড। রাজ পরিবারের সদস্যদের জীবন এবং ভেতরকার কথা নিয়ে বইটি লেখেন তিনি।
বইটিতে রাজ পরিবারের জীবনযাপন, প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়ে এবং এলিজাবেথ-ডায়ানার সম্পর্ক নিয়ে অজানা অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন সিউয়ার্ড। পাশাপাশি রাজ পরিবারের অপ্রকাশিত বহু ছবিও রয়েছে এতে।
সবসময়ই মনে করা হতো এলিজাবেথ এবং ডায়ানার সম্পর্কটা ঠাণ্ডা, ভালোবাসাহীন। তাঁদেরকে একে অপরের দিকে হাসতেও দেখা যেতো না তেমন। যতটুকু দেখা যেতো, সেটাও যেন মেকি, দেখানো। মনে হতো রাণী-রাজবধূর সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন।
কিন্তু ইনগ্রিড সিউয়ার্ডের লেখা বইতে উঠে এসেছে তাঁদের সম্পর্কের পেছনের কথা। সেখানে বলা হয়েছে, রাণী প্রথমে ডায়ানাকে খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু ডায়ানার অস্থির জীবনযাপনের কারণে তার প্রতি রাণীর উষ্ণতা ধীরে ধীরে কমে আসে। যখন প্রিন্সেস ডায়ানা বিয়ের আগে লেডি ডায়ানা হিসেবে প্রথম বালমোরালে আসেন, তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ১৯ বছর। রাজ পরিবারের সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন ডায়ানা। বিশেষ করে রাণীকে। ডায়ানার বাবা ভিসকাউন্ট আলথর্প ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত রাণীর অশ্বশালার দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
ডায়ানার বড় বোন সারাহ ছিলেন প্রিন্স চার্লসের সাবেক প্রেমিকাদের একজন। আর আরেক বোন জেন ছিলেন রাণীর ব্যক্তিগত সচিব রবার্ট ফেলোয়েজের স্ত্রী। ডায়ানাকে ছোট থেকে বড় হতে দেখেছেন রাণী এলিজাবেথ। একবার এক বন্ধুকে চিঠিতে লেখেন তিনি, ‘ও আমাদেরই একজন। ওদের তিন বোনকেই আমার খুব ভালো লাগে।’
ডায়ানাকে সবাই গ্রহণ করে নেন রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে। কিন্তু পরবর্তী কালে সবাই বুঝতে পারেন তাঁর অপরিণামদর্শী, অস্থির মানসিকতাকে। পারিবারিক জীবনের প্রতি উদাসীনতা, রাণী চাইলেও তাকে সময় না দেওয়া, বিয়ে বর্হ্ভিূত সম্পর্কে জড়ানো, সব মিলিয়ে দূরত্ব তৈরি হয় শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্কে। যার প্রতিফলন বিশ্ববাসী দেখতো তাঁদের আচরণে।
কিন্তু এতকিছুর পরও ডায়ানার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি রাণী। মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর আচরণেই বোঝা যায় বিভিন্ন কারণে বিরক্ত হলেও মনে মনে ডায়ানাকে ঠিকই ভালোবাসতেন তিনি। তাই কষ্ট পেয়েছিলেন তাঁর অকাল প্রয়াণে।