রেমিটেন্স পাঠানোর শীর্ষে সৌদি আরব
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে। প্রায় ২৬ কোটি মার্কিন ডলার। সৌদি থেকে আসা রেমিটেন্সের এ পরিমাণ ইউরোপের সব দেশের চেয়েও বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ দেশভিত্তিক রেমিটেন্স প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এদিকে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসেও রেমিটেন্স পাঠানোর হার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৫১ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে জনশক্তি রপ্তানি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সেখানকার আর্থিক অবস্থাও খুব ইতিবাচক যাচ্ছে না। জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের বৃহত্তম এ বাজারে কর্মী পাঠানো বন্ধ থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধিও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশীরা মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, কুয়েত, লিবিয়া ও ইরানে মূলত কর্মী হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কাতার ও লিবিয়া থেকে রেমিটেন্স আসা সামান্য কমলেও বাকি দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স এসেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম মাস শেষে রেমিটেন্স প্রবাহের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের অবস্থান সর্বোচ্চ। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কুয়েত, ওমান, বাহরাইন ও কাতারের স্থান। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স এসেছে বেশি। তালিকায় এরপর রয়েছে মালেশিয়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই শেষে দেশভিত্তিক রেমিটেন্স এসেছে মোট ১২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত জুন শেষেও ছিল ১০৫ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে জুলাই শেষে এসেছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। কুয়েত থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে এসেছে ১০ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। এদিতে চলতি অর্থবছরের জুলাই শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ২১ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ে মালেশিয়া থেকে এসেছে আট কোটি ৬৭ লাখ ১১ হাজার মার্কিন ডলার । অন্যদিকে যুক্তরাজ্য থেকে একই সময়ে এসেছে আট কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দেশের অর্থনৈতিকভিত্তি যথেষ্ট মজবুত রয়েছে। এর প্রমাণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দায় পৃথিবীর অনেক দেশেরই অর্থনীতিতে ভাটা পড়েছে। সেখানে বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে আছেন প্রবাসীরা। জানা গেছে, বিদায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে এক বছর সময়কালে আসা রেমিটেন্সের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিদায়ী বছরের শুরু থেকে রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বগতি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা ছিল, বছর শেষে এর পরিমাণ ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার স্পর্শ করবে। তবে বছর শেষে তা ওই অঙ্ক ছাড়িয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১৬২ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বিদায়ী অর্থবছরের অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিটেন্স আসে। ওই মাসে ১৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার দেশে পাঠান প্রবাসীরা। এক মাসে এতো রেমিটেন্স আগে কখনও আসেনি। এক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে; ১২৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। রেমিটেন্স বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত রেমিটেন্স প্রবাহের যে গতি তাতে মনে হচ্ছে বিদায়ী অর্থবছরের মতো এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে মোবাইল ব্যাংকিং সমপ্রসারণ ও বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউস খোলাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গভর্নর বলেন, রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে।