মানবিকতার কাছে হার মানল মেসিডোনিয়া
শেষ পর্যন্ত এক রকম বাধ্য হয়েই মানবিকতার সামনে পরাজয় মেনে নিল মেসিডোনিয়া। গ্রিস সীমান্ত দিয়ে হাজারেরও শরণার্থীকে প্রবেশ করতে দিতে বাধ্য হয়েছে দেশটির প্রশাসন। দ্বিতীয় দিনের মতো অস্ত্র ব্যবহার করেও শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত অনুমতিই দিয়েছে সেখানকার পুলিশ। রাতের আঁধারে গ্রিস থেকে সীমান্ত পার হয়ে মেসিডোনিয়ায় প্রবেশ করল প্রায় দেড় হাজার শরণার্থী।
আলজাজিরা জানিয়েছে, গত দু’দিনে রাতের অন্ধকারে হাজারো শরণার্থী খোলা মাঠে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে লুকিয়ে মেসিডোনিয়ায় প্রবেশ করতে পারলেও অনেককেই আবার নিজ দেশে ফেরতও পাঠানো হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে গুলিও।
বৃহস্পতিবার থেকেই বৃষ্টিস্নাত কয়েক হাজার শরণার্থী গ্রিস ও মেসিডোনিয়া সীমান্তে আটকা পড়েন। এ সংকট নিরসনে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে জরুরি অবস্থা জারি করে দেশটির সরকার।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্রিস শাখা জানিয়েছে, শরণার্থীদের সঙ্গে দাঙ্গাবাজদের মতো আচরণ করেছে মেসিডোনীয় পুলিশ। দু’দিন ধরে শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিতে মেসিডোনিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কিছু শরণার্থী আহত হয়।
এদিকে দু’দিনে গ্রিস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, নারী-শিশুরা সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছে। মায়ের কোলে শিশু। বাবার কাঁধে শিশুসন্তান। কাঁটাতারের সীমান্ত ছিন্ন করে তারা পার হতে চায়। তাদের সামনে অজানা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের দায়িত্ব নিতে চায় না কেউ।
সিরিয়ার ইদলিব থেকে আসা একজন সিরীয় শরণার্থী আহমেদ সাতাফ আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের শুধু মেসিডোনিয়ার সীমান্ত পার হতে দেয়া হোক। আমরা সন্ত্রাসী নই। আমরা মানুষ। কোথায় মানবতা? কোথায় বিশ্ব?’
আহমেদ সাতাফ আরও বলেন, ‘আমাদের কিছুই দরকার নেই। আমরা অর্থ চাই না। আমাদের সীমান্ত পার হতে দেয়া হোক। আমরা জার্মান যেতে চাই।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র গ্রিসে চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় জীবন নিয়ে শংকিত জনগণ শরণার্থী হিসেবে গ্রিস ছেড়ে সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য মেসিডোনিয়া সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে পলায়নপর মানুষও রয়েছেন এ দলে।