ইসলামের ছায়ায় বিশ্বের বিশিষ্টজনরা
মুহাম্মদ বশির উল্লাহ: ইসলাম পাশ্চাত্যে দ্রুত বর্ধনশীল। একটি বাস্তবতা। এ সম্পর্কে স্যার জর্জ বার্নার্ড শ, দ্য জেনুইন ইসলাম, ভলিউম-১, নং ৮, সন ১৯৩৬। তিনি বলেন, “মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সবসময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি কারণ, এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবন যাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে- যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তার (মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি। চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিস্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তার মতো ব্যক্তির কাছে যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো তবে এর সমস্যাগুলো তিনি এমনভাবে সফলতার সঙ্গে সমাধান করতেন যা বহু প্রতীক্ষিত শান্তি ও সুখ আনয়ন করতো। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, মুহাম্মদের ধর্ম বিশ্বাস আগামী দিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা ইতোমধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আরম্ব করছে। যদি কোনো ধর্মকে ইংল্যান্ড তথা সমগ্র ইউরোপকে শাসন করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে যে ধর্মটি পরবর্তী ১০০ বছর ধরে পারবে, তা হলো ইসলাম।”
ইতিহাস খুঁজে দেখা গেছে, আমেরিকায় ১৯০০ সালে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। ১৯৯১ সালে এসে দাঁড়ায় ৩ মিলিয়ন বা তার চেয়েও বেশি। পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ২৮,৮৩,০১১ জন অমুসলিম ইসলাম ধর্মগ্রহণ করছে। তার মধ্যে অগণিত সংখ্যক মনীষী রয়েছেন যারা কোনো না কোনো ক্ষেত্রে বিখ্যাত বা সুপরিচিত। এমন কিছু মহামানবদের স্মরণ করার জন্য এ ক্ষুদ্র আয়োজন। যারা ইসলামে ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে ধন্য হয়েছেন।
১. মোহাম্মদ আলি। ১৭ জানুয়ারি ১৯৪২ সালে লুইসভিলা, কেন্টাকিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে সিনিয়র। মোহাম্মদ আলি ছিলেন, তৎকালীন মার্কিন মুক্তিযোদ্ধা। ৩ বারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং ওলিম্পিক লাইট হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজেতা। ১৯৯৯ সালে তাকে বিবিসি শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন এবং নাম পরিবর্তন করে মোহাম্মদ আলি নাম রাখেন। তার মতে, এজন্য ভূমিকা রাখেন নেশন অফ মুসলিমের প্রধান ডব্লিুউডি মুহাম্মদ।
২. মাইক টাইসন। জন্ম ৩০ জুন ১৯৬৬, ব্রুকলিনে। একজন আমেরিকান। মাইক টাইসন বিশ্বের তৎকালীন হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। ৬ মার্চ ১৯৮৫ সালে টাইসনের অভিষেক হন। ১৯৯২ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।৩. কারিম আবদুল জব্বার (খবি অষপরহফড়ৎ)। একজন আমেরিকান অবসরপ্রাপ্ত বাস্কেটবল প্লেয়ার, কোচ, অভিনেতা এবং লেখক। তিনিও ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেন।
৪. আহমদ রুশদি। এমি পুরস্কার প্রাপ্ত সাবেক আমেরিকান ফুটবলার।
৫. অলিভিয়ের সেন্ট জাঁ। পরবর্তী নাম তারিক আবদুল ওয়াহিদ। ফ্রান্সের সাবেক বাস্কেটবল প্লেয়ার।
৬. ইউসুফ ইউহানা। পাকিস্তানের ক্রিকেটার। খ্রিস্টান থেকে মুসলমান। নাম রাখলেন মুহাম্মদ ইউসুফ।
৭. রাশিদ ওয়ালেস। আমেরিকান বাস্কেটবল প্লেয়ার। সংগঠক ও রাজনীতিবিদ।
৮. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। জন্ম ১৫ই আগস্ট ১৭৬৯ইং এজাক্সিউএ। তিনি ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের সময়কার একজন জেনারেল, ফ্রান্সের সম্রাট ও ইতালির রাজা। ইসলাম ধর্ম গ্রহন উপলক্ষে তিনি যে বানী প্রচার করেছেন তার দলিল কায়রোর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে এখনো রক্ষিত আছে। নেপোলিয়নের জীবনি বা তার বিজয় অভিযানগুলো নিয়ে যেসব বই রচিত হয়েছে তাতে তার ধর্ম সমন্ধে বিশেষ কিছু জানা না গেলেও তৎকালীন বিশেষ ব্যাক্তিদের ডায়েরিতে তার ইসলাম ধর্মগ্রহণের সত্যতা পাওয়া যায়। তার একজন কাছের মানুষ ছিলেন খধ পধংবং। তার ডায়েরিতে নেপোলিয়নের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়। ডায়রিটি ফরাসি সরকার আটক করে গোপন রাখে। পরবর্তীতে নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে যখন সেন্ট হেলেনায় নির্বাসন দেয়া হয় তখন আলোচনা প্রসঙ্গে তাকে অনেকবার ডব সঁংষরসং এই বাক্য ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তাছাড়া পোপ কর্তৃক মুকুট গ্রহণ করতেও তিনি সম্মতি প্রদান করেননি। সবশেষে নেপোলিয়ন তার আত্মজীবনিতে কোরআন ও মহানবী নিয়ে এমন সব প্রশংসাসূচক বাক্য ব্যবহার করেন তা কেবল একজন নিষ্ঠাবান মুসলিমের পক্ষেই সম্ভব। তা হলো- ‘আমি প্রশংসা করি স্রষ্টার এবং আমার শ্রদ্ধা রয়েছে নবী ও পাক কুরআনের প্রতি। আমি আশা করি সে সময় খুব দূরে নয় যখন সবকটি দেশের শিক্ষিত লোকেরা এক হয়ে কোরআনের নীতিসমূহ মেনে চলে মানুষকে শান্তির পথে নিয়ে আসবেন।’
৯. ম্যালকম এক্স। জন্ম ১৯ মে ১৯২৫। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কৃষাঙ্গদের মানবাধিকার আদায়ের আন্দোলনে অন্যতম অংশগ্রহণকারী ছিলেন। নাম ছিলো ম্যালকম লিটন। ইসলাম গ্রহণের পর নাম রাখা হয় ম্যালকম এক্স। তিনি আলহাজ মালিক আল শাব্বাজ নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন আফ্রিকান ও মার্কিন মুসলিম রাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় নেতা। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সালে নিউইয়ার্কে ম্যালকম এক্স একটি সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১০. মারিও স্কিয়ালোজা। জন্ম ২৯ জুলাই ১৯৩০। তিনি ছিলেন ইতালির রাষ্ট্রদূত এবং বিশ্ব মুসলিম লীগের সভাপতি, অবসরপ্রাপ্ত ইতালীর কূটনীতিক, ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সৌদি আরবে সর্বশেষ পোস্ট রাষ্ট্রদূত। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ইতালি উপস্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৯৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
১১. কিথ ইলসন। আমেরিকান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস নির্বাচিত প্রথম মুসলিম। ক্যাথলিক ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
১২. এনড্রু কার্সন। তৎকালীন ব্যাপটিস্ট। লেখক ও সাংবাদিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ম্যান হিসেবে দ্বিতীয় মুসলিম।
১৩. মোহাম্মদ। জন্ম ৭ এপ্রিল ১৮৭৫। ইন্তেকাল ১৯ মে ১৯৩৬। ২৯ নভেম্বর ১৯১৭ সালে লন্ডন ওয়েস্ট মুসলিম সাহিত্য থেকে আয়োজিত ‘ইসলাম ও অগ্রগতি’র একটি বক্তব্য দেয়ার পর খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামের ছায়ায় স্থান করে নেন। নাম রাখলেন মোহাম্মদ। তিনি একজন উপন্যাসিক ও সাংবাদিক ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি হয়ে যান একজন পশ্চিমা ইসলামী পন্ডিত। তিনি কোরআনে ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুপরিচিত। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ওয়াশিংটন ডিসি মুসলিম কর্মী এবং মসজিদ আল ইসলামের পরিচালক ছিলেন।
১৪. এলসা কাজী। জন্ম ১৮৮৪। মৃত্যু ১৯৬৭। একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ জার্মান কবি ও লেখক ছিলেন। নাটক, ছোট গল্প, উপন্যাস ও ইতিহাস ছিল তার প্রধান লেখা।
১৫. জরফষবু। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক। তালিবান কর্তৃক অপহরণ ও তারপর মুক্তি পাওয়ার পর মুসলমান হন।
১৬. যায়িদ শাকির। আমেরিকান। ব্যাপটিস্ট, স্পিকার, বুদ্ধিজীবী ও লেখক। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
১৭. মাইকেল ওলফ। আমেরিকান কবি, লেখক ও ঐক্য প্রোডাকসন্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং নির্বাহী প্রযোজক। মুসলমান হয়েছেন।
১৮. লরেন বুথ। টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা। তার ভাষায় ইরানে একটি ‘পবিত্র অভিজ্ঞতা’র সম্মুখীন হওয়ার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
১৯. সালমান ফারসি। তিনি ছিলেন তড়ৎড়ধংঃৎরধহ সম্প্রদায়ভুক্ত। যারা ছিল খ্রিস্টান থেকে রূপান্তর।
২০. আইস কিউব। জন্ম ১৫ জুন, ১৯৬৯। আরেক নাম সিয়া জ্যাকসন। একজন আমেরিকান রাপার, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক। ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি একজন মুসলিম। ১৯৯০ সালে আইস কিউব মুসলিম হন।
২১. জারমেইন জ্যাকসন। জন্ম ১১ ডিসেম্বর ১৯৫৪। সাবেক জ্যাকসন ফাইভের সদস্য। মাইকেল এবং জ্যানেট জ্যাকসনের ভাই।
২২. দিলিপ কুমার। জন্ম ৬ জানুয়ারি ১৯৬৬। একজন ভারতীয় সুরকার, গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীত প্রযোজক, সঙ্গীতজ্ঞ। ১৯৮৯ সালে তার মায়ের বিশ্বাসের পথ ধরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাম রাখেন আর রাহমান।
২৩. ডেভ চ্যাপেল। জন্ম ২৪ আগস্ট ১৯৭৩। একজন আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, টেলিভিশন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা। ১৯৯৮ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার দুই ছেলের নাম রাখেন সোলাইমান ও ইব্রাহিম।
২৪. কেট স্টিভেন। জন্ম ২১ জুলাই ১৯৪৮। ব্রিটিশ সরকার, গীতিকার, শিক্ষাব্রতী এবং মানবাধিকার কর্মী। তিনি ১৯৭৯ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মুসলিম নাম ইউসুফ ইসলাম।
২৫. দাউদ ওর্য়ানসবি আলী। কানাডিয়ান গায়ক ও কবি।
২৬. স্টিভেন বার্নার্ড হিল। আমেরিকান গায়ক, গীতিকার ও রেকর্ড প্রযোজক।
২৭. সমিতা দেবি। বাংলা অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা।
২৮. বেত্তি সাহবাজ। ম্যালকম এক্সের স্ত্রী। সে সময়ের মেথডিস্ট।
২৯. জন নেলসন। ১৫৮৩ সালে প্রথম ইংরেজ মুসলিম হওয়ার রেকর্ড করেছেন।