জীবন হাতে নিয়েও কেন সাগর পাড়ি দিচ্ছে তারা ?

Migrantঅনেক দেশের মানুষ ইউরোপে যাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। শরনার্থী হিসাবে আশ্রয় পেতে ইউরোপ যেতে তাদের ট্রানজিট দেশ লিবিয়া। লিবিয়ার আর্থিক আর নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশী পরিবারগুলোকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যেতে উৎসাহী করে তুলেছে।
লিবীয় উপকূলের কাছে কয়েকশ অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে ডুবে যাওয়া দুটি নৌকায় ৪টি পরিবারের মোট ৩১জন বাংলাদেশী ছিলেন, যারা সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালি যাবার চেষ্টা করছিলেন। এদের মধ্যে দুইটি শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিউনিসিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ।
দূতাবাসের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স মোজাম্মেল হক বলছেন, এই পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় বসবাস করছিলেন, কিন্তু সেখানকার আর্থিক আর নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় তারা ইউরোপে যাবার চেষ্টা করছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
দূতাবাসের হিসাবে, লিবিয়ায় এখন কুড়ি হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছে। কিন্তু লিবিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে দিনারের বিনিময় হার কমে যাওয়ায় তাদের আয়ও অনেক কমেছে। এসব কারণে লিবিয়ায় থাকা অনেক বাংলাদেশি পরিবারই ইউরোপে যাবার চেষ্টা করছে। সমুদ্রে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, তাদের বারবার সতর্ক করার পরও তারা এভাবে সমুদ্র পাড়ি দেয়।
তিনি বলেন, এই পরিবারগুলোয় লিবিয়ায় তাদের সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে ইউরোপে যাবার চেষ্টা করছিল। তাই তাদের সাথে এমনকি যোগাযোগের কোন ফোনও নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এর বাইরে একটি পাচারকারী চক্র বাংলাদেশ থেকেও পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশিদের লিবিয়া হয়ে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করে। প্রতিমাসে এভাবে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে জাল ভিসা ও কাগজপত্র তৈরি করে চট্টগ্রাম থেকে বিমানে করে, মধ্যপ্রাচ্য হয়ে, লিবিয়া নিয়ে আসা হয়েছে। পরে এখান থেকে তাদের ট্রলারে তুলে দেয়া হয়।
কয়েকমাস আগে এই বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাস ঢাকায় কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে। ফলে গত দুইমাস ধরে এই প্রবণতা কিছুটা কমেছে দূতাবাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আফ্রিকা ও এশিয়ার আরো অনেক দেশের মানুষ এভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাবার চেষ্টা করে। তাদের ট্রানজিট রুট হিসাবে লিবিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনেক সময় নৌকায় তুলে সেটি মাঝসমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়ারও ব্যবস্থা করে এই পাচারকারীরা। এরপর তারা উদ্ধারকারীদের খবর দেয়, যেন তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় দেয়া হয়। কিন্তু মাঝপথে মারা পড়ে অনেক মানুষ।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সি আর আবরারের মতে, অভিবাসনের মরিয়া প্রবণতাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে এই পাচার চক্র।
মি. আবরার বলেন, বৈধ পথে বিদেশে কাজের জন্য যাবার সুযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধ বা সীমিত হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষের ভালো কাজের আকাঙ্ক্ষা তো আর কমেনি। তাই তারা বিভিন্ন অবৈধ পথে মানুষ মরিয়া হয়ে বিদেশে যাবার চেষ্টা করছে। আর এরই সুযোগ নিচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র। তারা জলপথে, আকাশপথে এই মানুষদের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এরাও ভাবছে, অন্যদের যাই হোক, আমার কিছু হবে না। তাই তারাও ঝুঁকি নিচ্ছে।
ভুমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের স্বপ্নীল জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে তিনি বলেন, এর সাথে দেশগুলোর একটি মহল জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা যায়। নাহলে এভাবে বিমানে করে, সরকারি নজরদারী এড়িয়ে তাদের অন্যদেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। এটি বন্ধে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও দরকার বলে তিনি মনে করেন।
জাতিসংঘের হিসাবে, লিবিয়ার উপকূল থেকে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টায় এ বছরই দুইহাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানালেন, প্রতিদিনই লিবিয়া থেকে বিভিন্ন দেশের অনেক নৌকায় করে মানুষ ইউরোপে যাবার চেষ্টা করছে। তবে হতাহতের ঘটনা না ঘটলে সেটি আর আলোচনায় আসে না। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button