স্বদেশ নির্মাণে সম্প্রসারিত ভূমিকায় সৌদী নারী
নতুন করে পৌরসভার নির্বাচন সৌদি আরবে আবার শুরু হয় ২০০৫ সালে। এর ১০ বছর পর আবার চলতি বছর সেখানে হতে যাচ্ছে পৌর নির্বাচন। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় এবার আরো বেশি পরিলক্ষিত হবে বলে আশা করছেন পর্যবেক্ষকরা। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, শহরের দৈনন্দিন কর্মসূচির সুচারু সঞ্চালনে আগের তুলনায় জনগণ এবার আরো বেশি এগিয়ে আসবেন।
সুড়ঙ্গপথ, ফ্লাইওভার ও ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে জেদ্দার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে এবার ইতোমধ্যেই তৎপর রয়েছে নগর মিউনিসিপ্যালিটি। এই নির্মাণ যজ্ঞের সুফল জনগণও ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন। প্রত্যাশার অনুরূপ স্তরে জেদ্দার জনপরিবহন সেবা এখনো যদিও উন্নীত হয়নি। আশা করা যাচ্ছে, চলমান মেট্রোনির্মাণ কর্মসূচির বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ হলে পরিবহন সেবার অসম্পূর্ণতা অনেকখানি দূর হয়ে যাবে। রিয়াদে মেট্রোনির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই বহুদূর এগিয়ে গেছে।
নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অথবা ভোটদাতা হিসেবে অংশগ্রহণের চলতি বছর পর্যন্ত সৌদী নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। এ বছর সেই অধিকার তারা অর্জন করেছেন। পৌরসভা নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণের অধিকার অর্জনকে বহু বিদেশী ভাষ্যকার তাৎপর্যহীন দেখতে চাইলেও সৌদী নাগরিকরা বলছেন- সৌদি নেতৃত্বের প্রতিটি উদ্যোগের ছিদ্র সন্ধানই হচ্ছে ঐ বিদেশীদের কাজ।
সৌদীরা বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রার্থীরা শহরবাসীর জীবনযাত্রার বিভিন্ন অসুবিধা নিরসনে এবং তাদের আরো উন্নত সেবা সরবরাহের যে সুযোগ এবার পেতে যাচ্ছেন কোনভাবেই সে সুযোগ লাভকে খাটো করে দেখানো যাবে না। অতি নিম্ন বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন সৌদি আরবের কোথাও কোথাও বহু নারী আজো। দৈনিক “আল শর্ক সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে, মাসে মাত্র তিনশ’ সৌদী রিয়ালে বহু পাবলিক স্কুলের ক্যান্টিনে কাজ করে চলেছেন কিছু সৌদী নারী। এই খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক সৌদী নাগরিক মন্তব্য করেন, সৌদী হোক বা অসৌদী- এত অল্প বেতনে জীবন ধারণ কারো পক্ষেই সম্ভব হতে পারে না এবং কোনো একজন সৌদিও তা মেনে নিতে পারেন না। তিনি বলেন, চাকরিজীবীদের বেতনের ক্ষেত্রে এই অসংগতির বিষয়টি পৌরসভা নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণের সুবাদে- এখন থেকে অবশ্যই প্রকাশ্য আলোচনায় উঠে আসবে। এই সৌদির বক্তব্য হচ্ছে- চাকরিতে বেশি বেতন যারা পাচ্ছেন, তারা তা পেতে থাকুন- আপত্তি নেই। কিন্তু জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম বেতন থেকে কেউ বঞ্চিত হোন- মেনে নেয়া যাবে না। একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে জেদ্দা পৌর নির্বাচনে প্রার্থী এক সৌদীর। ব্যক্তিটি ছিলেন সৌদি আরবে সুপরিচিত এক ব্যবসায়ী। স্ত্রীসহ লেখাপড়া তিনি করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ছিলেন ধার্মিক। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল পৌরসভায় নারীদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে তিনি প্রস্তুত কি না। তার জবাব ছিল না। নারীদের মেকআপ ও ব্যবহৃত সুগন্ধি ছিল তার আপত্তির হেতু। সাক্ষাৎকার গ্রহীতা বিস্মিত হন জবাব শুনে। কিন্তু আগের ঐ কৃত্রিম সাজসজ্জাতেই বন্দী সৌদী নারীরা বর্তমানে আর নেই। অফিসের কাজকর্মে যেমন, তেমনি ভোটের পেছনেও সমান তালে ছুটছেন বর্তমানে সৌদী নারীরা।
জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি জেসিসিআইয়ের বিভিন্ন পদে কাজকর্মে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন আজকাল সৌদী নারীরা। নানা কর্মোদ্যোগে ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অন্য নারীদের পরামর্শ সহযোগিতা তারা পৌঁছাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন সৌদী নারী। নিজেদের অনবদ্য অবদানের মাধ্যমে সৌদী পৌরসভাগুলোকেও উজ্জ্বল পরিচিতিতে ও উচ্চলতায় পৌঁছাতে তারা সহায়ক হবেন- অবশ্যই আশা করা যায়।