ইউরোপের চেয়েও বড় সংকটে মধ্যপ্রাচ্য

Refugeeসিরিয়া থেকে মাত্র ১০ হাজার শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করেছে, আর তাদের দিকেই গোটা বিশ্বের নজর আটকে রয়েছে। অথচ এর চেয়ে অনেক বড় ও গভীর শরণার্থী সংকটের মুখে রয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। খবর :ওয়াশিংটন পোস্ট।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চার বছর পার হলেও দেশটির বহুপক্ষীয় এই মানববিধ্বংসী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। পরিণতিতে ৪০ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে। লেবানন, জর্ডান, তুরস্ক, ইরাকে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে নিরীহ অসহায় সব মানুষ। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু সৃষ্টিকারী একক দেশ। গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মানবিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দেশটি। সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের খুবই ছোট একটা অংশ ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে।
দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পরিণতিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সবে বুঝতে শুরু করেছে যে, উদ্বাস্তুরা সহসা আশ্রয়দাতা দেশগুলো থেকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সিরিয়ার অভ্যন্তরে যারা নিরাশ্রিত হয়ে আছে তারাও নিজের বাড়িতে সহসা ফিরতে পারছে না। সব মিলিয়ে, এই উদ্বাস্তু সংকট যে দীর্ঘমেয়াদি তা নিয়ে সন্দেহ নেই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর। কিন্তু সবচেয়ে বড় আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, এ সংকট মোকাবেলার জন্য তাদের হাতে যথেষ্ট অর্থসম্পদ নেই। মানবেতর জীবনে বাধ্য হওয়া লাখ লাখ উদ্বাস্তুর কারণে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই এখন অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাতিংসংঘের উদ্বাস্তু সংস্থার হাইকমিশনার আন্তনিও গোতেরেস বলেন, কূটনৈতিক ব্যর্থতাই সিরীয় যুদ্ধের এই করুণ পরিণতি ডেকে এনেছে। এ পর্যন্ত দেশটির আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে। এখনও এ সংকট সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। দেখা যাচ্ছে না যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণও। আরও ভয়ঙ্কর দিক হলো, মানবিক সহযোগিতার সমস্ত উদ্যোগও বলতে গেলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে চলেছে। দাতা দেশগুলোর অন্ধ স্বার্থ আর আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণও ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।
গত চার বছরে উদ্বাস্তুদের মৌলিক বিষয়গুলোতে সহযোগিতার জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তার অর্ধেকও হাতে পায়নি জাতিসংঘ। বাধ্য হয়ে ত্রাণ সহযোগিতায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এমনকি যারা সিরিয়া থেকে প্রাণ হাতে করে সবকিছু ফেলে পালিয়ে আসছে, তারাও তাৎক্ষণিক সহযোগিতার অভাবে নিঃস্ব হয়ে আটকে পড়ছে আশ্রয়দাতা দেশে। জাতিংসংঘের উদ্বাস্তু সংস্থার হাইকমিশনার জানান, লাখ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য নূ্যনতম সহযোগিতাটুকুও পাচ্ছে না। এর মূল্য কতটা ও কীভাবে গুনতে হবে তা এখনি সঠিক অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে তা যে বিশাল ও ভয়ঙ্কর হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, লেবানন ও জর্ডানের দুই-তৃতীয়াংশ উদ্বাস্তু একেবারেই দারিদ্র্যজর্জর। তাদের প্রায়ই না খেয়ে দিন পার করতে হয়।
অন্যদিকে লাখ লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়ে এমনতিই নাজুক প্রতিবেশী দেশগুলোর স্থিতিশীলতা আরও বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। মানবিক সহযোগিতার অভাবে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য উদ্বাস্তুদের অনেকেই কট্টর জঙ্গিপন্থার দিকে ঝোঁকার আশঙ্কা বাড়ছে। এর পরিণতিও ভয়াবহ হবে বলেই মনে করছেন ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের থিঙ্কট্যাঙ্ক পিটার হার্লিং। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কনটেম্পরারি আরব স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক রোসেলে ডেভিস বলেন, তবে এখনও উদ্বাস্তুদের মাধ্যমে বড় ধরনের কোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ঘটনা ঘটেনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button