উসমানীয় শাসনের শঙ্কায় হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউরোপে শরণার্থী ও অভিবাসীদের ঢল এবং ইউরোপীয় জোটের ব্যর্থ অভিবাসন নীতি এই মহাদেশের খ্রিস্টীয় পরিচিতি বা শেকড়গুলোকে ক্ষুণ্ণ করার হুমকি সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেছেন, ‘আপনার স্থান যখন দখল হয়ে যাচ্ছে তখন আপনি অভিবাসী বা মুহাজিরদের গ্রহণ করতে পারেন না এবং অভিবাসীদের বেশিরভাগই মুসলমান, খ্রিস্টান নয়। অথচ ইউরোপ এবং ইউরোপীয়দের রয়েছে খ্রিস্টীয় নানা শেকড়।’
‘ইউরোপের খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি তার খ্রিস্টীয় মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে যে হিমশিম খাচ্ছে তা কী এরইমধ্যে আশঙ্কাজনক নয়?’-প্রশ্ন করেন ওরবান।
গতকাল ব্রাসেলস সফরের অবকাশে জার্মান দৈনিক Frankfurter Allgemeine Zeitung-এ লেখা এক প্রবন্ধে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান এইসব মন্তব্য করেছেন।
যুদ্ধ আর দারিদ্র এড়াতে ইউরোপে শরণার্থী এবং অভিবাসীদের যে ঢল নেমেছে তা থামাতে ও তার গতিকে মন্থর করতে হাঙ্গেরির সরকার সার্বিয়ার সীমান্ত-জুড়ে প্রাচীর বা দেয়াল নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরবান তার পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ এটা চাইছে যে আমরা যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আমাদের সীমান্ত রক্ষা করি। ‘কেবল সীমান্ত রক্ষার পরই আমরা এ প্রশ্ন তুলতে পারি যে কতজন মুহাজিরকে আমরা আশ্রয় দিতে পারব অথবা এ বিষয়ে কোটা থাকা উচিত কি-না।’- যোগ করেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী।
হাঙ্গেরি ও স্পেন ছাড়া আর কোনো দেশ ইউরোপের সীমানাগুলো রক্ষা করতে চাইছে না বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘অভিবাসী বা মুহাজিরদের উন্নত জীবনের আশা দেখানো এবং তাদেরকে সবকিছু ফেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে আসতে উৎসাহ দেয়াটা ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ।’
এদিকে ব্রাসেলসে ইউইউ বা ইউরোপীয় জোটের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর এই প্রবন্ধের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমার মতে সামাজিক জীবনে খ্রিস্টিয়তার অর্থ হলো বিপদের সময় আমাদের ভাইদের সহায়তা দেয়া।’
এদিকে আল-জাজিরা জানায়, ওরবান বলেছেন যে তার দেশ বিপুল সংখ্যক মুসলিম শরণার্থী নিতে আগ্রহী নয়। ইউরোপে যে শরণার্থী সংকট তৈরি হয়েছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন রয়েছে হাঙ্গেরি। এ দেশ হয়ে বহু শরণার্থী জার্মানসহ অন্য দেশে যেতে চাচ্ছে।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদফতরে সাংবাদিকদের ওরবান বলেন, ‘আমার মনে হয়ে আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নেব কি-না সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে।’
ষোড়শ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রায় ১৫০ বছর হাঙ্গেরির উসমানীয় শাসনে থাকার দিকে ইঙ্গিত করে ওরবান বলেন, ‘আমরা পরিণতি ভোগ করতে চাই না।’
সিরীয় শরণার্থীদের হাঙ্গেরিতে না আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দয়া করে আসবেন না… আসাটা ঝুঁকিপূর্ণ। আপনাদের গ্রহণ করার নিশ্চয়তা দিচ্ছি না আমরা।’