বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে কোটি টাকার কার্গো মাল জালিয়াতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক
বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে কোটি টাকার কার্গো মাল জালিয়াতির ঘটনায় অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই ফ্লাইটে হিসাবের অতিরিক্ত সাড়ে তিন টন কার্গো পণ্য পরিবহণে আদায়কৃত ভাড়া বিমানের তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে নথি-পত্র তলব করে গত ২ সেপ্টেম্বর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দিয়েছেন দুদক উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। চিঠি অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথি-পত্র দুদককে সরবরাহ করতে হবে। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কার্গো মাল জালিয়াতির ঘটনাটি গত ৩ জুলাই লন্ডনে ফাঁস হয়। ওইদিন হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সকাল ১০টায় বিজি ০০১ নামের যে বিমানটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এর পর থেকেই দুদক বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে থাকে। পরে ১২ আগস্ট থেকে চূড়ান্ত অনুসন্ধান শরু করে দুদক। এরই অংশ হিসেবে নথি-পত্র তলব করা হয়েছে। বিমানের এমডিকে দেয়া দুদকের চিঠিতে সংশ্লিষ্ট বিমানের দায়িত্ব পালনরত ক্যাপ্টেন-পাইলট এবং কেবিন ক্রুসহ অন্য স্টাফদের নাম-ঠিকানার তালিকা ও লোড শিটের কপি চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটে কার্গো মাল লোডে দায়িত্বরত বিমানের নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাস্টমস-এর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কার্গো শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম-ঠিকানার তালিকা চাওয়া হয়েছে। পাশপাশি পরিবহনকৃত কার্গো মালের বিবরণ সম্বলিত তালিকা, এয়ার ওয়েজ বিল এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানাসহ এ সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ড-পত্রের কপি চাওয়া হয়েছে।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিমানটি লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে অবতরণের পর বিমানের ক্যাপ্টেন ঢাকা থেকে দেয়া হিসেবের চেয়েও যে অতিরিক্ত তিন হাজার ৩৩৪ কেজি কার্গো মাল পান সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ড-পত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে সরবরাহ করতে হবে। একই সময়ের মধ্যে যাত্রী ও কার্গো অনুযায়ী স্বাভাবিক জ্বালানী তেলের চেয়ে যে অতিরিক্ত তেল পুড়েছে তার তুলনামূলক হিসাব বিবরণী সম্বলিত তথ্য ও রেকর্ড-পত্রের কপি চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া হিথ্রো বিমান বন্দরে অতিরিক্ত কার্গো মাল উদ্ঘাটনের পর সেখানকার অপারেশন ম্যানেজার বাংলাদেশ বিমানের এমডি’র কাছে যে প্রতিবেদন পাঠান সে প্রতিবেদনের কপিও চাওয়া হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে বিমানের এমডি’র কাছে আরও যেসব রেকর্ড-পত্র চাওয়া হয়েছে সেসবের মধ্যে আছেÑ ঢাকা থেকে লন্ডন রুটের কেজিপ্রতি কার্গো মাল ভাড়ার নির্ধারিত হার এবং জালিয়াতির ঘটনায় বিমানের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় সে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন।
সূত্র জানায়, হিসাবের অতিরিক্ত মাল নিয়ে ঢাকা থেকে বিমানের ফ্লাইট নিয়ে যখন লন্ডন অবতরণ করেন, তখন পাইলট সেখানেই কার্গোর ওজন মাপেন। তাতেই ধরা পড়ে হিসাবের বাইরে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পাঠানো অতিরিক্ত মাল পাচারের বিষয়টি। হিসাবের বাইরে এই অতিরিক্ত মাল পাঠানো হয়েছে বিমানের কার্গো শাখা থেকে। এ পণ্য পরিবহনের ভাড়া (চার্জ) প্রায় এক কোটি টাকা। ওই ফ্লাইটে ছিলেন ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক ও ক্যাপ্টেন নাদিম। যাত্রী ছিলেন ৪৯ জন।
ফ্লাইট টেক অফ করার আগে ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক লোড শিটে দেখতে পান, যে সংখ্যক যাত্রী ও কার্গো আছে তা খুবই স্বাভাবিক। তাতে জ্বালানি তেল খুব বেশি পোড়ার মতো নয়। কিন্তু আকাশে ওঠার পর তিনি দেখতে পান, ওজনের বিপরীতে জাহাজের যে পরিমাণ জ্বালানি তেল পোড়ার কথা, তার চেয়েও বেশি পুড়ছে। তাই হিথ্রো বিমানবন্দরে যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর তিনি ওই ফ্লাইটের কার্গো মাল ওজন করান।
জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পর পরই বিমানের অপারেশন ম্যানেজার আশরাফুল ঢাকায় বিমানের এমডি’র কাছে লিখা এক চিঠিতে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি লিখেন, লোড শিটের বাইরে জালিয়াতির মাধ্যমে কার্গো বহন করা শুধু বাণিজ্যিকভাবে বিমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এতে ওই ফ্লাইটের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। যদি ফ্লাইটটি কোথাও কোন খারাপ আবহাওয়া বা অন্য কোন কারণে আকাশে অপেক্ষা করতে হতো, সে ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয় ছাড়া কোন গত্যন্তর ছিল না।
এ বিষয়ে দুদক উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব রেকর্ড-পত্র চাওয়া হয়েছে সেসব এখনও পাইনি। রেকর্ড-পত্র হাতে পাওয়ার আগে এ বিষয়ে তেমন কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।