বিশ্ব কাঁপানো ছবিটি যেভাবে তোলা হয়েছিল

Niloকোমরের দু’পাশে দুটি হাত রেখে ছোট শরীরটাকে ভেজা বালিতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন নিলুফার দেমির। বুকটা মুচড়ে উঠেছিল যন্ত্রণায়। কিন্তু কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরার ব্যাগ, নোটবুক মনে করিয়ে দিচ্ছিল ‘কর্তব্য’। সাংবাদিককে যে ভেঙে পড়তে নেই! মন শক্ত করে শাটারে আঙুল রেখেছিলেন পেশাদার। সেই ছবিই সাড়া ফেলে দিয়েছে। পৃথিবীর মানুষকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে, আর কত প্রাণ কাড়ার পর বন্ধ হবে যুদ্ধ? ছোট এই বাচ্চাটার মৃত্যুর পরেও কি মন গলবে না ইউরোপের?
চিত্রসাংবাদিক নিলুফার কাজ করেন তুরস্কের এক সংবাদসংস্থায়। বদরামে শরণার্থী-সঙ্কট ‘কভার’ করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। বুধবার গভীর রাতে বদরাম ছেড়ে গ্রিসের কস যাওয়ার পথে ডুবে যায় শরণার্থী বোঝাই দু’টি নৌকা। তারই একটিতে ছিল বছর তিনেকের আয়লান কুর্দি, যার ছবি ঘিরেই উত্তাল গোটা বিশ্ব। নিলুফারের কথায়, ‘‘ওই সময় যেটা আমি করতে পারতাম, তা হল অন্যদের কাছে বাচ্চাটার কান্না পৌঁছে দেয়া।’’
নিলুফার জানিয়েছেন, আয়লানের বড়ভাই বছর পাঁচেকের গালিপের দেহ পড়ে ছিল ভাইয়ের থেকে ১০০ মিটার দূরে। আয়লানের নিষ্প্রাণ দেহের ছবি তোলার পর নিলুফার ছুটে গিয়েছিলেন সে দিকে। দেখেন, গালিপের শরীরে কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। সমুদ্রে তাকে ভাসিয়ে রাখতে পারে, ছিল না এমন কোনো কিছুই।
দুই ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে পাথর আবদুল্লা কুর্দি সে দিনের কথা ভেবে এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছেন। যে দালাল তাদের মোটরবোটে করে গ্রিসে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কথা রাখেননি তিনি। মোটরবোটের বদলে পনেরো ফুটের রাবারের ডিঙি নিয়ে হাজির হন তিনি। এতটাই পলকা যে ঢেউয়ের ধাক্কায় তা উল্টে যেতে এক মুহূর্তও সময় নেয়নি। আবদুল্লার আক্ষেপ, ‘‘আগেও বহু বার দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো বারই সফল হইনি। এ বার একজন পালতোলা নৌকায় করে গ্রিসে পৌঁছে দেবে বলেন। সেই আশ্বাসেই বুক বেঁধে যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কি থেকে কী হয়ে গেল!’’
কুড়ি বছর ধরে কানাডার বাসিন্দা, আবদুল্লার বোন টিমা কুর্দি চেয়েছিলেন ভাই ও তার পরিবার কানাডাতেই আশ্রয় পাক। কিন্তু আবদুল্লাদের আবেদন বাতিল করে দেয় কানাডা। আয়লান ও গালিপকে কখনো চোখে দেখেননি টিমা। ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমেই এত দিন কথা বলতেন তাদের সঙ্গে। কান্না চেপে টিমা বলছেন, ‘‘যুদ্ধ বন্ধ হওয়া ছাড়া এখন আমি আর কিছুই চাই না। আমি মনে করি, সিরীয় শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে গোটা বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ তারাও মানুষ।’’
বৃহস্পতিবারই কোবানে দুই ছেলেকে পাশাপাশি কবর দিয়ে এসেছেন আবদুল্লা। তার কথায়, ‘‘যা হারানোর, হারিয়ে ফেলেছি।’’ কিন্তু দালালকে বিশ্বাস করে এমন পরিণতি যাতে আর কারো না হয়, তার জন্য এই শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক, আকুতি আবদুল্লার।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button