যেভাবে নিজেকে বদলিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছয় দশক আগে ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে বসার সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খ্যাত এই চার্চিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রপ্রপিতামহী রানি ভিক্টোরিয়ার সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের ৬৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৯ সেপ্টেম্বর। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে সিংহাসনে থাকার এটিই হবে দীর্ঘতম সময়। সিংহাসনে বসার পর থেকে দীর্ঘ পথযাত্রায় ব্রিটিশ সমাজ ও রাষ্ট্রে বিপুল পরিবর্তনের সাক্ষী এলিজাবেথ।
রানি এলিজাবেথের বয়স এখন ৮৯ বছর। ১৯৫২ সালে তিনি সিংহাসনে বসেন। তখন থেকে কয়েকটি দশক কেটে গেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজপরিবারেও ঘটে গেছে নানা পরিবর্তন। যে রাজপরিবারকে কেবল টেলিভিশনের পর্দা এবং বিভিন্ন উপলক্ষে কিছুটা সময়ের জন্য দেখত নাগরিকেরা, এখন টুইটারে তাদের পারিবারিক ছবি পাওয়া যায়। এমনকি দেখা যায় ‘সেলফি’ও।
ব্রিটিশ রাজপরিবারে এই যে পরিবর্তন তা কোনো বিপ্লব নয়, আসলে ক্রমবিবর্তন। ১৯৬৯ সালে রাজপরিবার নিয়ে নির্মিত টেলিভিশন প্রামাণ্যচিত্র ‘রয়েল ফ্যামিলি’ এই পরিবারকে ঘিরে থাকা নানা রহস্যের অবসান ঘটায়। রাজপরিবারের সদস্যরাও যে সাধারণ রক্তমাংসের মানুষের মতোই, সেটিই ছিল এই প্রামাণ্যচিত্রের মূল উপজীব্য।
১৯৭৭ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে বসার রজতজয়ন্তী পালিত হয়। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানা স্পেনসারের বিয়েতেও পুরো দেশ আনন্দে মেতে ওঠে। ১৯৮০-এর দশকে তাঁদের দুই সন্তানের জন্মও ব্রিটিশদের মধ্যে অফুরান আনন্দের সঞ্চার করেছিল। আবার নব্বইয়ের দশকেই রাজপরিবারে অনেক কিছু্ই ঘটে, যা কাঙ্ক্ষিত ছিল না।
১৯৯৭ সালে প্যারিসে দুর্ঘটনায় রাজপরিবারের জনপ্রিয় সদস্য প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু হলে রানি তাঁর সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে পড়েন। ডায়ানার মৃত্যুর সংবাদ জানার পরও রানি তাঁর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে থাকায় গণমাধ্যমে সমালোচনামুখর হন।
ডায়ানার মৃত্যুর পর সংকটে পড়া রাজপরিবার তাদের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার চেষ্টায় সচেষ্ট হয়। অধ্যাপক মারফি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রানির ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি আর যাই হোক, যেকোনো রাজনীতিকের চেয়ে অনেক ওপরে।’
এমপি পল ফ্লিন বলছিলেন, ‘রাজপরিবার অত্যন্ত দক্ষ ও কৌশলী গণসংযোগের মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে। রাজপরিবারের নতুন প্রজন্মের অনেক সদস্য বিপুলভাবে জনপ্রিয়। রানির ব্যক্তিত্ব এবং যে কাজে মাথা ঘামানোর দরকার নেই, তেমন বিষয়ে সহজাত নিস্পৃহতা এই সম্মান ও জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রাখতে সহায়তা করেছে।