শরণার্থীদের জন্য জার্মানির চমক
চলমান শরণার্থী সংকটের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এক ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। দেশটি জানিয়েছে, আগামী কয়েক বছরে প্রতিবছর পাঁচ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে পারে তারা। সাগরে, দ্বীপে ও ইউরোপের পথে পথে যখন শরণার্থীদের জীবন-মরণের লড়াই অব্যাহত, তখন মঙ্গলবার এই ঘোষণা দিয়েছেন জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েল।
বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, জার্মানির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা এলেও দেশটির ভাইস চ্যান্সেলর গ্যাব্রিয়েল তার বিবৃতিতে বারবার উল্লেখ করেছেন, শুধু জার্মানিই নয়, ইউরোপের অন্য দেশগুলোকেও শরণার্থীদের চাপ ভাগ করে নিতে হবে।
শরণার্থীদের চাপে নাখোশ হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান জার্মানির প্রতি সীমান্ত বন্ধের আহ্বান জানানোর মাত্র একদিনের মাথায় এই ঘোষণা দিলেন সিগমার গ্যাব্রিয়েল। পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি এখনো বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর ভিড়। মূলত জার্মানি যাওয়ার জন্যই হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ভিড় জমিয়েছেন তারা। তাই জার্মানি তার সীমান্ত বন্ধ করে দিলে তবেই শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাপ থেকে মুক্তি মিলবে হাঙ্গেরির কট্টর ডানপন্থী সরকারের।
মঙ্গলবারও হাঙ্গেরিতে অধৈর্য হয়ে পড়া শরণার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। জানা গেছে, হাঙ্গেরির সার্বিয়া সীমান্তের কাছে পুলিশি বাধা ভেঙে হেঁটেই রাজধানী বুদাপেস্টের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছেন শরণার্থীরা। পুলিশ সদস্যরা তাদের ঠেকাতে ব্যর্থ হলেও নজরদারি অব্যাহত রাখে। এমনকি হেলিকপ্টার দিয়েও তাদের টহল দিতে দেখা যায়। এরই মধ্যে হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রিয়া ও জার্মানিতে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে হাঙ্গেরির বিভিন্ন ক্যাম্প এবং সার্বিয়া সীমান্তে এখনো যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় হাজারো মানুষ। প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হওয়ায় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ঘটেছে সহিংসতার ঘটনাও।
তুরস্কের উপকূল থেকে আসা শরণার্থীদের ঢল নামছে গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপে। গ্রিসের যে কয়টি দ্বীপ এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে তার মধ্যে লেসবোস অন্যমত। প্রকৌশল বিষয়ের ছাত্র আলাদীন বলেন, ‘আমি এখানে ৮-৯ দিন ধরে আছি। হায় আল্লাহ, আমি স্মরণ করতে পারছি না।’ আলাদীন জার্মানিতে তার ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হতে চান। এদিকে নানা মতবিরোধ সত্ত্বেও মঙ্গলবার জাতিসংঘ ও গ্রিস লেসবস দ্বীপে আটকেপড়া প্রায় ২৫ হাজার শরণার্থীকে উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছে। দ্বীপটিতে আটকে থাকা শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত কর্মী ও জাহাজ নিয়োগ করছে দেশটির সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা। গ্রিসের দ্বীপ হলেও লেসবসের অবস্থান মূল ভূখ- থেকে দূরে। ৬৩০ বর্গমাইলের এ দ্বীপটিতেই আটকে আছেন প্রায় ২৫ হাজার অভিবাসী। দুই সপ্তাহ মানবেতর জীবনযাপনের পর দ্বীপটি প্রায় বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ায় গ্রিসের টনক নড়েছে। একটি পরিত্যক্ত ফুটবল মাঠে অভিবাসীদের রাখার পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানী এথেন্সে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, আশ্রয়ের জন্য শুধু সোমবারই মেসিডোনিয়া সীমান্তে পেঁৗছেছেন সাত হাজার শরণার্থী।
অন্যদিকে ব্রাজিলসহ ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। সোমবার ব্রাজিলের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় দেশটির প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ বলেন, ‘যারা নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসছেন, তাদের স্বাগত জানাতে ব্রাজিলের আগ্রহের কথা আমি আবারো বলতে চাই। তারা এখানে এসে বাস করুক এবং ব্রাজিলের শান্তি ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখুক। আমরা হাত বাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছি।’
এর আগে ২০১৪ সালে ব্রাজিল এক হাজার ৪০৫ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল। এছাড়া ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো তার পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ২০ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেটও।