মাহমুদুর রহমান মুক্তি আন্দোলন ইউকে’র যাত্রা শুরু

MahmudurRahmanমাহমুদুর রহমান মুক্তি আন্দোলন ইউকে’র উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, মাহমুদুর রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের প্রতীক। মঈন-উদ্দিন ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল মাহমুদুর রহমান তখনই কলম নিয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন। যেখানেই তিনি অন্যায় দেখছেন, যেখানেই অবিচার দেখছেন, যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখছেন সেখানেই প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের আজকের এই পরিণতি তিনি ২০০৯ সালের ডিসেম্বরেই আঁচ করেছিলেন। তাই তখন-ই লিখেছিলেন ‘নবরুপে বাকশাল’ শিরোনামে মন্তব্য প্রতিবেদন।
বক্তারা বলেন, এই সরকারের কাছে মুক্তির দাবি নয়, হারানো সার্বভৌমত্ব লড়াই করে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত করতে হবে। একই সাথে বক্তারা মাহমুদুর রহমান মুক্তি আন্দোলন বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নতুন গঠিত মাহমুদুর রহমান মুক্তি আন্দোলন ইউকে’র উগ্যোগে পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে বৃহস্পতিবার বিকালে মাহমুদুর রহমানের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অন্যায় ও অবিচার এবং সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।
এই সংগঠনের উদ্যোগে এটাই প্রথম সমাবেশ। সমাবেশ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয় এবং তার মুক্তি দাবি করা হয়।
মাহমুুদুর রহমান মুক্তি আন্দোলন ইউকে’র আহ্বায়ক প্রবীন সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. কে এম এ মালিক, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাবেক উপদেষ্টা সাংবাদিক মোখলেসুর রহমান চৌধুরী, লন্ডনে সফররত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, খেলাফত মজলিস ইউরোপের আমির প্রফেসর আবদুল কাদির সালেহ, খ্যাতনামা আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও লেখক ব্যারিস্টার নাজির আহমদ, গবেষক ড. কামরুল হাসান, সাংবাদিক ও লেখক শাহ আলম, ড. এম এ আজিজ, শেখ নিউজ ডট কম-এর প্রধান সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমদ, মাওলানা রফিক আহমদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারি প্রেস সচিব  মুশফিকুল ফজল আনসারী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিরাজুল ইসলাম শাহিন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সৈয়দ সিদ্দিক, মানবাধিকার কর্মী মনোয়ার বদরুদ্দোজা, কবি ও লেখক শিহাবুজ্জামান কামাল, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন,  ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিন, সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার, সাবেক ছাত্র নেতা শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন, ব্যারিস্টার আবুল মনসুর শাহজাহান, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, মাওলানা এম এ নাসির উদ্দিন, সাংবাদিক মোতাহার হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার ইকবাল, সাবেক ছাত্রনেতা আক্তার হোসেন রাজু, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তোহা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আমিনুল এহসান তানিম, কমিউনিটি নেতা কবির হোসাইন, সাংবাদিক মাহবুব খানসুর, সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট শেখ তারেকুল ইসলাম,  মোহাম্মদ সেলিম, আমার দেশ পাঠক মেলা ইউকে’র আহ্বায়ক আদিলুর রশিদ হুমায়ূন, হাসনাত খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি ও মাহমুদুর রহমান মুক্তি আন্দোলনের সদস্য সচিব অলিউল্লাহ নোমান।
বক্তারা বলেন, মাহমুদুর রহমান দেশ প্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন সাচ্চা ঈমানদার ব্যক্তি। তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে মানুষকে নতুন করে পথ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের সংখ্যা গরীষ্ঠ ৮০ ভাগ মানুষের ঈমান ও সংস্কৃতির উপর যখন চূড়ান্ত আঘাত হেনেছিল শাহবাগের তথা কথিত গণজাগরণ মঞ্চ তখন মাহমুদুর রহমান লিখেছিলেন ফ্যাসিবাদের পদধ্বনী। তিনিই শাহবাগের কথিত গণজাগরণ মঞ্চের মুখোশ জাতির সামনে উম্মোচন করলে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে সেই মঞ্চ।
মাহমুদুর রহমানকে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতা আসার আগে তিনি শিল্প উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ থেকে রফতানিমুখি সিরামিক শিল্প তার হাতেই প্রসার লাভ করেছে। সিরামিকে জাপানে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের পর জাপান সরকার তাকে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব করেছিল। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছিলেন দেশে ফিরে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবেন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার দুর্দিনে পত্রিকাটির হাল ধরেন মাহমুদুর রহমান। ২০০৮ সালে পত্রিকাটির মালিকানা গ্রহনের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেন। এর আগে তিনি লেখালেখি করেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার মাহমুদুর রহমানকে হুমকি মনে করে। তাই সাজানো মামলায় অনুগত আদালতের মাধ্যমে দন্ডের নামে তাকে কারাগারে আটক রাখার কৌশল নিয়েছে। লড়াই যত কঠিনই হোক ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত করা হবে।
ড. কে এম এ মালিক বলেন, মাহমুদুর রহমানের সাথে মেজর জিয়াউর রহমানের চরিত্রের মিল খুজে পাওয়া যায়। মেজর জিয়াউর রহমান দিশেহারা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে পথ প্রদর্শন করেছিলেন। বাংলাদেশের বর্তমান এই সঙ্কটে সার্বভৌমত্ব ইন্ডিয়ান দখলমুক্ত করতে মাহমুদুর রহমান জাতিকে পথ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইন্ডিয়া এজেন্ট হিসাবে তৈরি করেছিল। ইনুদের ট্রেনিং দিয়ে তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ইন্ডিয়া। ইনুরা হচ্ছে ইন্ডিয়ার সাচ্ছা এজেন্ট। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান মানেই হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনের প্রতীক। তাই ইন্ডিয়ান এজেন্টরা মাহমুদুর রহমানকে ভয় পাচ্ছে।
মোখলেসুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাহমুদুর রহমান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই শুধু করেননি। সরকারের নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাস, গুম, খুনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন মাহমুদুর রহমান। তার মত সাচ্ছা ঈমানদার দেশপ্রেমিক ব্যক্তির পাশে না দাড়ালে স্বাধীনতা রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসবে না।
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, মাহমুদুর রহমানের মত দেশপ্রেমিক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীর পাশে না দাড়ালে ভবিষ্যতে আরো বড় অন্যায় যে কাউকে গ্রাস করতে পারে। তখন কাউকে পাশে পাওয়া যাবে না। মাহমুদুর রহমানের প্রতি যেই অবিচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো সকলের দায়িত্ব। কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে তাকেও এসব অন্যায় অবিচারের মোকাবেলা একদিন করতে হবে। কারণ মাহমুদুর রহমান নিজের জন্য কিছু করেননি। দেশ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই করেছেন মাহমুদুর রহমান।
প্রফেসর আবদুল কাদির সালেহ বলেন, মাহমুদুর রহমানের মুক্তি আন্দোলন আরো আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দেরিতে হলেও এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনকে সকল দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
শেখ মহিউদ্দিন বলেন, দলমত নির্বিশেষে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়া উচিত। কে আসল আর কে আসল না সেটার দিকে থাকিয়ে না থেকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি মানেই আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর যখন আঘাত করেছিল ভারতীয় সমপ্রসারণবাদ মাহমুদুর রহমান তখন ঢাকা থেকে তামাবিলে লংমার্চ করেছিলেন। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন লাখো জনতাকে সঙ্গে নিয়ে। ট্রানজিটের নামে করিডোর প্রদানের মাধ্যমে ইন্ডিয়ার পদতলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অর্পনের বিরুদ্ধে তিনি লেখনির পাশাপাশি ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ হয়ে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত লংমার্চ করেছেন। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও দেশের অভ্যন্তরে সরকারি নিয়ন্ত্রনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তিনি সাহসী কন্ঠে প্রতিবাদ করেছেন।
ড. কামরুল হাসান বলেন, মাহমুদুর রহমানকে মুক্তির আগে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে হবে। তবেই মাহমুদুর রহমান মুক্তি পাবেন।
মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, মাহমুদুর রহমান ঈমান আক্বিদা রক্ষার লড়াইয়েও নেতৃত্বে দিয়েছেন। তার পাশে দাড়ানো মুসলমান হিসাবে ঈমানি দায়িত্ব।
মেজর অব. সিদ্দিক বলেন, মাহমুদুর রহমান সততা, ইনসাফ ও ন্যায়ের প্রতীক। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলেন, আর সার্বভৌমত্ব রক্ষা বলেন মাহমুদুর রহমানের মুক্তির মাধ্যমেই সফলতা আসবে।
সভাপতির বক্তব্যে কে এম আবু তাহের মাহমুদুর রহমান মুক্তি আন্দোলন ইউকে’র পক্ষ থেকে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতা নেই। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশনসহ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলা মিডিয়া গুলো বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। সুতরাং প্রবাস থেকেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দোলনকে বেগবান করতে তিনি সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button