মানবিকতা নাকি পাপমোচন ?

চার সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শরণার্থীদের নাম নিবন্ধনের কাজ করছেন ফ্রাংক দিত্রিচ। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। শরণার্থী নিবন্ধন কেন্দ্রে বসে তিনি বললেন, আমার সময়গুলোর শ্রেষ্ট ব্যবহার চলছে এখন। বাসায় টেলিভিশনের সামনে বসে থাকার চেয়ে এই কাজ অতি উত্তম। হাজার হাজার মানুষ নিবন্ধনের অপেক্ষায়। সরকার একা সামলাতে পারছে না। এখন দরকার জনগণের সাহায্য।
দিত্রিচের মতো কয়েক হাজার জার্মান এগিয়ে এসেছেন শরণার্থীদের সহায়তায়। কেউ ত্রাণ বিতরণ করছেন, কেউ বাচ্চাদের পোশাক-খাবার দিচ্ছেন, কেউ জার্মান ভাষা বোঝানোর কাজে দোভাষীর দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী কেন্দ্র খোলা হয়েছে জার্মানিতে। চলতি বছর প্রায় ৮ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে হচ্ছে দেশটিকে।
দিত্রিচ বলেন, এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব। প্রতিটি জার্মান পরিবারে কেউ না কেউ একসময় শরণার্থী ছিলেন। জার্মানির নোবেলবিজয়ী লেখিকা হার্তা মুলার পত্রিকায় আমিও শরণার্থী ছিলাম নামে একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছেন। সেখানে তিনি স্মরণ করেছেন, নাৎসি শাসনামলে হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। কীভাবে কমিউনিস্ট পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব জার্মানি থেকে লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছিল।
মুলার লিখেছেন, আমিও রোমানিয়ার শরণার্থী ছিলাম। নাৎসি আমলে জার্মান শরণার্থীদের জন্য অন্য দেশ যা করেছিল, আজ অন্যদের জন্য আমাদের তা করার সময় এসেছে। জার্মান ঐতিহাসিক আরনাফ বারিং বলেন, আমরা আজ যা ভালো কাজ করছি, তা অতীতের পাপমোচন, নাৎসি আমল আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধের কাফফারা।
মুলারের ভাষায়, ইতিহাস আমাদের অনেক দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু ভালোবাসা দেখানো মানবিকতারও অংশ। মানবিকতা আর পাপমোচন যে কারণেই হোক না কেন প্রতি পাঁচজন জার্মানির একজন শরণার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button