২৫ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে সৌদি আরব

Saudi Arabia has received around 2.5 million Syriansসিরিয়ায় সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সৌদি আরবে আশ্রয় নেয়া সিরীয়দের সঙ্গে শরণার্থী হিসেবে আচরণ না করার নীতি গ্রহণ করেছে সৌদি আরব। শুধু তাই নয়। ‘শরণার্থীদের মর্যাদা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে’ শরণার্থী শিবিরেও তাদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে না। লাখ লাখ সিরীয়কে নাগরিকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তারা সৌদি আরবের যে কোন স্থানে ভ্রমণ করতে পারছেন। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, শ্রম বাজারে যোগদানসহ স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের অধিকার প্রদান করা হয়েছে সিরীয়দের।
রাষ্ট্রচালিত বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, সিরীয় ভাই-বোনদের দুর্দশায় থাকা অবস্থায় তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে সৌদি আরব এ সঙ্কটের প্রথম খেকে যেসব উদ্যোগ ও প্রয়াস নিয়েছে, সে ব্যাপারে দেশটি কথা বলতে বা দম্ভোক্তি করতে চায়নি। তিনি বলেন, সৌদি আরব ধর্মীয় ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে এবং গণমাধ্যমে প্রচারের আলোয় আসতে বা গৃহীত উদ্যোগের ব্যাপারে গর্ব করা বা দম্ভ প্রকাশের ইচ্ছা ছিল না দেশটির। ভুলে ভরা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করার গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি। সে কারণে সৌদি আরব যথাযথ পরিসংখ্যান ও প্রকৃত তথ্য গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিরিয়ায় উদ্ভূত সঙ্কট মোকাবিলায় সৌদি আরবের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়।
এক. সহিংসতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব ২৫ লাখ সিরীয়কে গ্রহণ করেছে। সৌদি আরব তাদের সৌদি আরবের যে কোন স্থানে ভ্রমণের অধিকার বা স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে যারা সৌদি আরবে বসবাসের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, নাগরিক হিসেবে দেশটিতে তাদের বসবাসের বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, শ্রম বাজারে যোগদানসহ স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের অধিকার প্রদান করা হয়েছে সিরীয়দের। ২০১২ সালে সৌদি রাজপরিবারের এক অধ্যাদেশে বিষয়টি সংযোজন করা হয়। সিরীয় শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুল ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয় ওই অধ্যাদেশে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১ লক্ষাধিক সিরীয় শিক্ষার্থীকে সরকারি স্কুল কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দুই. প্রতিবেশী জর্ডান, লেবানন ও অন্যান্য রাষ্ট্রে আশ্রয়প্রাপ্ত লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীদের জন্যও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সৌদি আরব এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। সৌদি আরবের গৃহীত এসব উদ্যোগের মধ্যে ছিল সে দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান। শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানকারী  দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে সৌদি আরব এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। নগদ অর্থ ও এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে সহযোগিতা দেয়া হয়েছিল।
তিন. ২০১৫ সালের ৩১শে মার্চ কুয়েতে অনুষ্ঠিত থার্ড হিউম্যানিটেরিয়ান প্লেজিং কনফারেন্স ফর সিরিয়া’র দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিরীয়দের জন্য প্রায় ৭০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে সৌদি আরব।
চার. জর্ডানসহ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ এবং সৌদি আরবের বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। লেবানন ও সিরিয়ায় বসবাসকারী বহু সংখ্যক সিরীয় নাগরিকের ব্যয়ভার বহন করেছে সৌদি আরব। সিরীয় নাগরিকদের বাড়িভাড়া প্রদান এবং তাদের জীবন নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করেছে ও করছে দেশটি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button