বিশ্বের সেরা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং’র এমডি হলেন নওশাদ শাহ
নবাব উদ্দিন: ব্রিটেনে বাঙালির সাফল্যের পালকে যুক্ত হলো নতুন আরেকটি নাম। তিনি নওশাদ শাহ। ঈর্ষণীয় এক অর্জনে নওশাদ উজ্জ্বল করলেন অভিবাসী বাঙালির মুখ। র্যাংকিং টেবিলে বিশ্বের এক নম্বর ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। নওশাদ শাহ-ই হচ্ছেন প্রথম কোনো ব্রিটিশ বাংলাদেশি যার বার্ষিক বেতন ছয় অঙ্কের ফিগারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
ব্যাংকিং সেক্টরের সবচেয়ে লোভনীয়, বিশ্বের সেরা ব্যাংকারদের স্বপ্নের চাকরিতে নওশাদ শাহ যোগ দিয়েছেন গত জুলাই মাসে। নওশাদ শাহের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে গোল্ডম্যন শ্যাস। উল্লেখ্য বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ইনভেস্ট ব্যাংক হচ্ছে গোল্ডম্যান শ্যাস, জেপি মর্গান, মর্গান স্ট্যানলি, ব্ল্যাকস্টোন গ্রুপ, ডয়চে ব্যাংক, ল্যাজআরড. বার্কলে ক্যাপিট্যাল, ব্যাংক অব আমেরিকা এবং গ্রিণহিল এন্ড কো.।
ফাইন্সেসিয়্যাল টাইমসের লিগ টেবিল অনুযায়ী এর মধ্যে গোল্ডম্যান শ্যাসই হচ্ছে বিশ্বের সেরা প্রথম স্থান অর্জনকারী বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। আর সেই ব্যাংকেরই ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ নওশাদ শাহ। বিলেতের বাঙালি বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের প্রমাণ রেখে চলছেন, শিক্ষায়-দীক্ষায় তাদের এগিয়ে যাওয়া নজর কাড়ছে সকলের। মেধাবী এই প্রজন্ম ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরিতেও উচ্চতর অবস্থান নিশ্চিত করছে। যোগ্যতা আর প্রাপ্তিতে নতুন নতুন অর্জনে তারা প্রতিনিয়ত তৈরি করছে নতুন নতুন ইতিহাস। আর চাকরিক্ষেত্রে প্রাপ্তির এই ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যোগচিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হবেন নওশাদ শাহ।
এক চাকরিতেই তিনি পরিণত হয়েছেন ব্রিটেনে বাঙালির অন্যতম অহঙ্কারে। ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া এই তরুণ সাউথ ওয়েস্ট লন্ডনে বেড়ে উঠেছেন-লেখাপড়া করেছেন। তার বাবা হচ্ছেন বিলেতের সুপরিচিত একাউন্টিং ফার্ম মোহাম্মদ শাহ এন্ড কো. এর অন্যতম পার্টনার নাসির আলী শাহ। নাসির আলী শাহ প্রোপার্টি ব্যবসায়ও সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া একজন সমাজসেবী হিসেবেও তার রয়েছে আলাদা পরিচিতি।
বাংলাদেশের প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাসির আলী শাহ কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের জীবন সদস্যও। উত্তরাধিকার সূত্রেই যেনো নওশাদ শাহ বাবার মেধাকে ধারণ করেন নিজের মাঝে। পরিবারের একমাত্র ছেলে নওশাদ শাহ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন তীক্ষè মেধাবী। পড়ালেখায় সব সময়ই ছিলেন এগিয়ে। এলএসসি ইউনির্ভাসিটি থেকে ফাইনেন্স এন্ড একাউন্টিং বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রীধারী নওশাদ শাহ তার চাকরি জীবন শুরু করেন একজন ট্রেডার হিসেবে। তারপর নিজের মেধা-যোগ্যতা এবং বিচক্ষণতাকে কাজে লাগিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। চলার পথে তিনি ঋদ্ধ হন নতুন নতুন অভিজ্ঞতায়। চাকরিক্ষেত্রে দারুণ সাফল্যের পরিচয় দিয়ে ক্রমে উচ্চ থেকে উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে বিশ্বের অন্যতম ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ডয়চে ব্যাংকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান।
টানা পাঁচ বছর এই ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন তিনি। এই সময়ে তার কর্মদক্ষতা বিশেষভাবে নজর কাড়ে বিশ্বের প্রথম স্থান অর্জনকারী বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান শ্যাসের। আর এখান থেকেই শুরু হয় আরেক নতুন উত্থানের। এ বছরের জুলাই মাসে নওশাদ শাহ গোল্ডম্যান শ্যাসের সিকিউরিটি ডিভিশরে ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে নিয়োগ পান।
গোল্ডম্যান শ্যাস হচ্ছে আমেরিকান বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক। তাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ক্লায়েন্টদের সাথে গ্লোবাল ব্যাংকিং, সিকিউরিটিজ, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রদান করা।
১৮৬৯ সালে গোল্ডম্যান শ্যাস আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটির লোয়ার ম্যানহাটানের ২০০ ওয়েস্ট স্ট্রিট অফিসে তাদের প্রথম যাত্রা শুরু করে। দেড়শ বছরের পথচলায় এই ব্যাংকটি বিশ্বের সেরা প্রিমিয়ার বিনিয়োগ ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ব্যাংকে বিশ্বের নামিদামি ব্যাংকারগণ কাজ করেছেন এমনকি বর্তমানে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গর্ভনর মার্ক কার্পিও একসময় গোল্ডম্যান শ্যাস-এর নির্বাহী পদে কর্মরত ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী শহরে রয়েছে এই ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের শাখা। তাদের বর্তমান কর্মী সংখ্যা হচ্ছে ৩৪ হাজার। ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ব্যাংকের সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৮৫৬.২৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং তাদের নেট আয় হচ্ছে ৮.৪৭৭ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসমূহে ব্রিটিশ তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়। কিন্তু তাদের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো কোনো ব্রিটিশ বাঙালি তরুণ এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন।
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের বেতন-বোনাস খুবই আকর্ষণীয়। বিভিন্ন তথ্যসূত্র অনুযায়ী কোনো কোনো ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বার্ষিক বেতন হচ্ছে মিলিয়ন পাউন্ডের অধিক তার উপর রয়েছে বিশাল অংকের বার্ষিক বোনাস। বর্তমানে অধিকাংশ এমডিগণ মিলিয়ন পাউন্ডের অধিক বোনাস পেয়ে থাকেন। এই হিসেবে নওশাদ শাহই হচ্ছেন প্রথম কোনো ব্রিটিশ বাংলাদেশি যার বার্ষিক বেতন ছয় অঙ্কের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।
উল্লেখ্য মেধাবী, ব্যাংকিং জগতের অন্যতম বড় কর্মকর্তা নওশাদ শাহের দেশের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলা শহরে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত নওশাদ শাহ এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা।