কারাগারে ঈদ করছেন জামায়াত-বিএনপির ১৫ শীর্ষ নেতা
আলমগীর হোসেন: এবারও কারাগারে ঈদ করছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ ১৫ ভিআইপি। বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের এসব ভিআইপিকে আটক রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ৬ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ৯ নেতা রয়েছেন। এছাড়া দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদসহ বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের বহু নেতা এখন কারাগারে আছেন। সেখানেই তাদের ঈদুল আযহা উদযাপন করতে হচ্ছে। ১৯৭১ সালের সংঘটিত কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের এসব ভিআইপিকে আটক রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় কাউকে আটক রাখা হয়েছে আবার কাউকে দ-াদেশ দেয়া হয়েছে।
এরা হচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী যথাক্রমে এমকে আনোয়ার ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
কারাগারে ঈদ করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুস সুবহান, নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, সাবেক এমপি যথাক্রমে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার ও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর সাবেক এমপি শামসুল ইসলাম।
কারান্তরীণ এসব নেতার ক’জন গত ৬ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। তাদের পরিবার আজ সীমাহীন দুর্ভোগ ও কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আটক নেতারা সবাই পরিবারের প্রধান। পরিবারের প্রধান কারান্তরীণ থাকায় তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে কষ্ট বেদনার ছায়া। খুশির ঈদেও চোখের পানি ঝরে এসব ভিআইপি কারাবন্দীর স্ত্রী-সন্তান ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীর। কারাগারে বসেই মা, বাবা ও ছেলে হারিয়েছেন কেউ কেউ। এবারের ঈদেও পরিবার-পরিজন থেকে দূরে, নিঃসঙ্গ কারাগারে ঈদুল আযহার দিন কাটাবেন তারা। কারাগারেই তারা ঈদের নামায পড়বেন এবং ঈদ উদযাপন করবেন।
এসব ভিআইপি রাজনীতিক সরকারের সিদ্ধান্তে কারান্তরীণ থাকায় তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দের পরিবর্তে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ কামনা করেছে অনেকের পরিবার। ঈদের দিন এবং ঈদের পরদিন কারা ফটকে সাক্ষাৎ করবেন প্রায় সবার পরিবারের সদস্য।
কারাগারে দ্বাদশ বারের মতো ঈদ করবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। তিনি বর্তমানে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে আটক আছেন। প্রথমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাওলানা নিজামীর মেঝো ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, আমরা আববুকে ছাড়া ঈদ করছি। এটা একটা কষ্টকর ব্যাপার। তিনি বলেন, প্রতি ঈদেই তিনি ঈদের নামাজ আদায় করে কূটনীতিকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। সন্ধ্যায় তিনি আমাদের সময় দিতেন। পর পর ১২টি ঈদে আমরা তাকে মিস করছি। ঈদের পরদিন কারাগারে পরিবারের সদস্যরা তার সাথে দেখা করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রয়েছেন কাশিমপুর-১ কারাগারে।
২০১০ সালের ২৯ জুন শহীদবাগের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মাওলানা সাঈদীকে গ্রেফতার করে। কারান্তরীণ অবস্থায়ই তিনি প্রিয় মা এবং বড় ছেলে মাওলানা রাফিক বিন সাঈদীকে হারিয়েছেন।
মাওলানা সাঈদীর ছেলে পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী জানান, আমাদের ঈদ যেন জেলখানার চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে আমার বাবার বিচার চলাকালীন ইন্তিকাল করেছেন বড় ভাই রাফিক বিন সাঈদী। বাবা কারাগারে থাকা অবস্থায় যেমন বড় ভাইকে হারিয়েছি, দাদীকেও হারিয়েছি। সুতরাং আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে কিছু নেই। তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমার বাবা কারাগারে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ৭৬ বছর বয়স্ক পিতা শারীরিকভাবে অসুস্থ আছেন। হাটু এবং কোমড়ে ব্যথা। চিকিৎসার প্রয়োজন। মানবিক কারণে হলেও সরকার তার চিকিৎসা নিবেন বলে আশা করছি। আব্বার সঙ্গে আমরা মাসে একবার দেখা করার সুযোগ পাই। সর্বশেষ যখন দেখা হয়, তখন তিনি আমাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, লাখো-কোটি কোরআন প্রেমিকের দোয়া ও চোখের পানির বিনিময়ে তিনি অবশ্যই আবারও কুরআনের ময়দানে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। এ বছর ঈদের দিন অথবা ঈদের পরদিন কারাগারে মাওলানা সাঈদীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুস সুবহানকে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে একটি মামলায় হাজিরা দিতে পাবনা যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পূর্ব টোল প্লাজা এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করে। পরে তাকে পাবনা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-১ কারাগারে রয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তাকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করে পুলিশ। মুজাহিদের মেজ ছেলে আলী আহমদ মাবরুর বলেন, ঈদের দিন বাবার শূন্যতা খুব বেশি অনুভব করব।
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ২০১২ সালের আগস্টে জামিনে মুক্তি পাওয়ার তিন দিন পর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-২ কারাগারে রয়েছেন।
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে গত ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলস্থ দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-২ কারাগারে আটক আছেন। তিনি অষ্টম বারের মতো কারাগারে ঈদ করবেন। তার পরিবারের সদস্যরা ঈদের দিন তার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি যথাক্রমে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার ও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর সাবেক এমপি শামসুল ইসলাম কারাগারে ঈদ করছেন।
এছাড়া কারাগারে ঈদ করছেন দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, কারাগারে ঈদ করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী যথাক্রমে এমকে আনোয়ার ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এখন কারাগারে আছেন। সেখানেই তাদের ঈদুল আযহা উদযাপন করতে হচ্ছে।