বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি : স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মচারী বরখাস্ত
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট এরিয়া থেকে টাকা চুরির অভিযোগে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসআইবি) কর্মচারী দীপক চন্দ্র দাশকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বুধবার এসআইবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিনাক চক্রবর্তীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন। ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত ওই কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ভল্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
অন্যদিকে সুরক্ষিত এলাকা থেকে টাকা নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল, মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মাছুম পাটোয়ারি ও কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) শহিদুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রতিনিধিরা গত রবিবার চেকের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বস্তায় ভরার সময় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার টাকা নিতে আসা প্রতিনিধি দীপক চন্দ্র দাশ ৫ লাখ টাকার একটি বান্ডিল হাতিয়ে নেন। ভল্ট-সংলগ্ন এলাকা থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা তিনি চুপিসারে বাইরে রেখে আবার ভেতরে ঢোকেন।
বিবার বিকেল ৫টা ৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ড থেকে ৫টা ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ডের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। টাকা চুরির বিষয়টি প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও ভিডিও ফুটেজ দেখানোর পর স্বীকার করেন এবং চুরি করে নেওয়া ৫ লাখ টাকা ফেরত দেন।
অবশ্য এমন গুরুতর অপরাধ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিরুদ্ধে ওই দিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসবিআই তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে- এমন লিখিত দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে ছেড়ে দিয়েছিল।
তবে এমন ঘটনা ধরার পরেও তাকে পুলিশে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহার মধ্যস্থতায় দীপক চন্দ্র দাশকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাদা শার্ট গায়ে এক ব্যক্তি (ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের প্রতিনিধি) টাকা বুঝে নিচ্ছেন।
তার পেছনে থাকা চেয়ারে বসে আছেন আরেকজন সাদা শার্ট গায়ে দেওয়া ব্যক্তি (স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি)।
বিকেল ৫টা ৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে বসা ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বুঝে নেওয়া ব্যক্তির পেছনে গিয়ে দাঁড়ান।
দু এক পা এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটির পর ৫টা ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে সারি-সারি রাখা টাকার বান্ডিল থেকে একটি (পাঁচশ’ টাকার এক হাজার পিস নোট) নিয়ে আবার বসে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি কালো ব্যাগে টাকা ঢুকিয়ে ঠিক ৫টা ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ডে তিনি ভল্টের ভেতর থেকে বেরিয়ে যান।
গত বছর বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। গত বছরের জানুয়ারিতে সুড়ঙ্গ কেটে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের রথখোলা শাখা থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা টাকা চুরি হয়।
একই বছরের মার্চে সোনালী ব্যাংকের বগুড়ার আদমদীঘি শাখা থেকে চুরি হয় ৩২ লাখ টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকের পুরান ঢাকার ঠাটারী বাজার শাখা থেকে এক কোটি টাকা চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে চোর।
চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়া শাখায় দিনদুপুরে ডাকাতির সময় আটজন নিহত হন। এর আগে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির খবর শোনা গেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির কথা শোনা যায়নি।