লন্ডনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন
ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ জোবায়দা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পূর্ব লন্ডনের ফেয়ারলোপ ওয়াটার কান্ট্রি পার্কে এই অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশই নেতাকর্মীদের হৈ চৈ আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে হারিয়ে গেছে।
বাংলাদেশে শুক্রবার ঈদ হলেও যুক্তরাজ্যের মুসলমানরা ঈদ করেছেন বৃহস্পতিবার। স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওই পার্কে বড় একটি তাঁবুর মধ্যে খালেদার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত বিএনপিনেত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য দীর্ঘসময় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অতিথিদের।
নেতাকর্মীরা মঞ্চের সামনে জড়ো হয়ে মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে থাকলে মঞ্চে উঠতে অতিথিদের বেগ পেতে হয়। এ সময় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে অতিথিদের ধাক্কাধাক্কিও হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানও অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
হৈ চৈ থামিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টায় যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদকে বার বার চিৎকার করতে শোনা যায়।
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রবাসী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ‘কারাগারে’ পরিণত করেছে। বিএনপির যত নেতাকর্মী আছে, প্রত্যেকের নামে মামলা দিয়েছে। এই হল বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ ঠিক মত ঘুমাতে পারে না। কোথায় ঘুমাবে? দেশে কোনো মৌলিক অধিকার নাই, মানবাধিকার নাই, আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই।
শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধ ও অনির্বাচিত একটি সরকার উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি, ভোট কেন্দ্রগুলো ছিলো ফাঁকা। নির্বাচনের আগেই ১৫৪ জনকে বিনাভোটে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বিনাভোটের এই সরকারকে জনগণ বৈধ বলে মেনে নেয়নি। তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধানকে পরিবর্তন করে নিজেদের মতো করেছে। দেশে সেই বাকশালের মতো অবস্থা চলছে।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন, মেয়র নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভই প্রমাণ করে জনগণ বিএনপির পেছনে ঐক্যবদ্ধ। তাই তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চায় না। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছাড়লে সরকার পার পাবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশে বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের মাধ্যমে এ সরকারকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একদিন রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে। দেশে সংবাদপত্রের কোনো স্বাধীনতা নেই উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, সাংবাদিকরা সত্যি কথা লিখতে পারে না। সত্যি কথা লিখলে তাদের নামে মামলা হয়, জেল হয়। যারা টকশো-তে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের সমালোচনা করে তাদেরকে টকশো-তে আসতে দেয়া হয় না। সংবাদপত্রে বা টেলিভিশনে বিরোধী দলের কিছু প্রচার করতে দেয়া হয় না। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় আতংক হলো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। কিছু হলেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম। একদলীয় পার্লামেন্টে বসে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই।
বেগম জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। প্রতি মুহর্তে দেশের মানুষ খুন ও গুম হচ্ছে। চলছে অত্যাচার, অনাচার আর গুমনীতি। কোনো উন্নয়ন নেই। দেশের মানুষ এসবের পরিবর্তন চায়। চায় শান্তি, উন্নয়ন ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি।
এই সরকারের পক্ষে পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, নিরপেক্ষ র্নিবাচন হলে বাংলাদেশের জনগণ বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইনশাল্লাহ পদ্মা সেতু তৈরী করবে।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে সকলের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে উল্লেখ বেগম জিয়া বলেন, বিএনপি শান্তি উন্নয়ন গণতন্ত্র ও জনগণের কল্যাণে বিশ্বাস করে। তাই আমরা জাতিকে বিভক্ত করে নয়, বরং ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে চাই। যাতে বৃটেনের মতো নিরপেক্ষ ভোট হবে। আর এই ভোটে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে সেইও হবে জনগণের প্রতিনিধি। ব্যালট বাঙ ছিনতাই করে জয়ের মধ্যে কোনো শান্তি নেই, কোনো আনন্দ নেই। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে শান্তি ঐক্য ও উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই।
আওয়ামী লীগের মধ্যেও ভালো ও দেশপ্রেমিক লোক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের সঙ্গে নিয়েই তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতন্ত্র না থাকলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও শিক্ষার ওপর ভ্যাটের সমালোচনা করে বেগম জিয়া বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের মূখে সরকার ভ্যাট প্রতাহার করতে বাধ্য হয়েছে।
দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একসময় দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। বাংলাদেশের মানুষ দেশে পরিবর্তন দেখতে চায়, গণতন্ত্র দেখতে চায়, মানবাধিকার মৌলিক অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চায়।
এম এ মালেকের সভাপতিত্বে ও কয়ছর এম আহমেদের পরিচালনায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আর্ন্তজাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার এম এ সালাম, সহ- সভাপতি আব্দুল হামিদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আক্তার হোসেন, মঞ্জুরুসামাদ চৌধুরী মামুন, প্রফেসর ফরিদ আহমেদ, লুৎফুর রহমান, শামিম আহমেদ, মুজিবুর রহমান মজিব, সাবেক ছাত্র নেতা পারভেজ মল্লিক, নসরুল্লাহ খান জোনায়েদ, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কামাল আহমেদ, তাজউদ্দিন, ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ খান, আব্দুস সাত্তার, ব্যরিস্টার এম এ সায়েম, শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, নাসিম আহমেদ চৌধুরী, নাসির আহমেদ শাহিন, দেওয়ান মোকাদ্দিম চৌধুরী নিয়াজ, আবুল হোসেন, আব্দুস সালাম প্রমুখ।