জার্মানিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রথম মুসলিম মহিলা প্রার্থী জেমিলে গিউসুফ
জার্মানিতে মুসলিম তরুণী জেমিলে গিউসুফ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের এক ব্যতিক্রমী সদস্য। আগামী সেপ্টেম্বরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তিনি হবেন খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রীদের প্রথম মুসলিম মহিলা প্রার্থী। জেমিলে গিউসুফের বয়স এখন ত্রিশ। জার্মানিতে যাদের বলা হয় গাস্টআর্বাইটার অর্থাৎ অতিথি শ্রমিক, সেই ধরনেরই একটি বহিরাগত পরিবারে তার জন্ম। সেভাবেই মানুষ হয়েছেন তিনি। জেমিলে বলেন, আমার বাবা-মা চেয়েছিলেন, আমার আর আমার ভাইয়ের জীবন যেন অন্যরকম হয়। সেইজন্য তারা শিক্ষার উপর খুব জোর দিতেন। পড়াশোনায় সরাসরি সাহায্য করতে না পারলেও, তারা অন্য সব ভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন।
জেমিলে জাতিতে তুর্কি, যদিও তার জন্ম জার্মানিতে। বাবা-মা এসেছিলেন তুরস্ক থেকে নয়, গ্রিসের সংখ্যালঘু তুর্কি সম্প্রদায় থেকে। তার জন্মের দু’বছর পরেই তার মা তাকে গ্রিসে পাঠিয়ে দেন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থাকতেন। জেমিলের মা জার্মানিতেই থেকে যান কাজের দায়ে। আরো দু’বছর পরে জেমিলেকে জার্মানিতে ফিরিয়ে নেন তার মা। জেমিলে তার ছেলেবেলা কাটান লেভারকুজেনে, পরে বন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে। অবসর সময়ে জেমিলে নডরাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্যে সিডিইউ দলের যে সংগঠনটির হয়ে কাজ করতেন, সেটির নাম হলো জার্মান-তুর্কি-ফোরাম। সেখান থেকেই তার রাজনীতির সঙ্গে সংযোগ। জেমিলে বলেন, আরো অনেক মানুষের মতো তিনিও গোড়ায় ভেবেছিলাম, সিডিইউ দলে অভিবাসীদের কোনো স্থান নেই। কিন্তু ২০০৫ সাল ধরে সিডিইউতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বহিরাগতদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি দলীয় প্রধান নিজের হাতে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে সিডিইউ অপরাপর দলগুলোকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে, বলে জেমিলের ধারণা। খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রীয় দলের খ্রিস্টীয় হওয়ার ব্যাপারে জেমিলে কোনো সমস্যা দেখেন না। ধর্মবিশ্বাসী মানুষ, তা তারা যে ধর্মেরই হন না কেন, সবাই একই জিনিস চান। জার্মানির মুসলমানেরা ও খ্রিস্টানরা, সকলেই চান যে, স্কুলে ধর্মশিক্ষা দেয়া হোক। কিন্তু সবুজরা তা চায় না। তারা চায় স্কুলে নীতিবিদ্যার পাঠ দিতে হবে। সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলে জেমিলে প্রধানত শিক্ষা ও পরিবার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেবেন। প্রত্যেকটি শিশুর শিক্ষার ভালো সুযোগ পাওয়া উচিত। বর্তমানে শিক্ষিত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের কলেজ পাস করার সম্ভাবনা সাধারণ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের চেয়ে সাতগুণ বেশি। সিডিইউ’র পরিবার সংক্রান্তনীতি খুবই ভালো, বলে মনে করেন জেমিলে। সিডিইউ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে; যে সব বাবা-মা বাড়িতে থেকে ছোট ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনা করেন, তাদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সবই বহিরাগতদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন তিনি সবে প্রার্থী। এখনই অন্তত একটি লক্ষ্য অর্জন করেছেন তিনি। সিডিইউ দলের প্রার্থী হয়ে তিনি অন্যান্য বিদেশি-বহিরাগত মানুষদের প্রেরণা দিয়েছেন, সাহস বাড়িয়েছেন, বলে মনে করেন জেমিলে। সূত্র : ওয়েবসাইড।