মিনা ট্রাজেডি : ইরানকে শোক-বার্তা দিলেন সৌদি রাজা
মিনা ট্র্যাজেডির বিষয়ে ইরানের সরকার ও ক্ষতিগ্রস্ত ইরানি পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোকবার্তা দিয়েছেন সৌদি রাজা সালমান । সৌদি দৈনিক আররিয়াদে এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ‘খবর’ বা ছয় নম্বর চ্যানেল এই খবর দিয়েছে। মিনায় পদলিত হয়ে হাজার হাজার হজযাত্রীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, ইরানি হজযাত্রীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং সৌদি উদ্ধার-কর্মীদের উদাসীনতা আর অসহযোগিতার কারণে ইরানি হজযাত্রীদের হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কঠোর হুঁশিয়ারির প্রেক্ষাপটে এই খবর প্রকাশিত হল।
সৌদি দৈনিকটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিনার ঘটনায় হতাহত ইরানি হজযাত্রীদের বিষয়ে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ এবং এ বিষয়ে ইরানি ও সৌদি স্বাস্থ্য-মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।
‘মিনার ঘটনা সৌদিরা ইচ্ছা করে ঘটায়নি’ শীর্ষক সৌদি দৈনিকটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালেদ আলফাল্লাহ ইরানি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাশিমি’র সঙ্গে জেদ্দায় বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে মিনার ঘটনায় আহত ইরানি হাজিদের চিকিৎসা, তাদের পরিবহন ও আনা-নেয়া এবং নিহত ইরানি হাজিদের লাশ হস্তান্তরের বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
এই বৈঠকেই সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিনা ট্র্যাজেডির বিষয়ে ইরানের সরকার ও ক্ষতিগ্রস্ত ইরানি পরিবারগুলোর প্রতি সৌদি রাজা সালমানের শোক-বার্তা ইরানি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
সৌদি সরকার ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান।
সৌদি দৈনিকটি লিখেছে, সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাশিমি মিনা ট্র্যাজেডির ব্যাপারে সহযোগিতার প্রশ্নে সৌদি সরকারের ইতিবাচক জবাব ও এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবা দেয়ার যে কোনো উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং হাজিদের সেবা করা ও হজ পরিচালনা খুবই কঠিন দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও সৌদি কর্তৃপক্ষ যে তার সমস্ত শক্তি ব্যয় করছে এসব কাজে তা তিনি উপলব্ধি করেন বলে জানান।
দৈনিকটি আরও জানিয়েছে, আহত হাজিদের চিকিৎসা সেবা দিতে ও নিহত ইরানি হাজিদের লাশ চিহ্নিত করার কাজে সহায়তাসহ লাশগুলো যথাসম্ভব দ্রুত ইরানে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি দৈনিকটির বক্তব্য অনুযায়ী বৈঠক শেষে ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন(?): মিনায় ব্যাপক ভিড়ের চাপে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ইচ্ছাকৃত ব্যাপার ছিল না এবং আমরা আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করছি।
মিনা ট্র্যাজেডিতে গুরুতর আহত বহু ইরানি হজযাত্রী সৌদি উদ্ধার কর্মীদের উদাসীনতা ও নীরব দর্শকসুলভ ভূমিকার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইরানিদের লাশ হস্তান্তরের বিষয়েও অসহযোগিতা করে আসছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ। এমনকি এ ব্যাপারে ইরানি কর্মকর্তারা সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বলে কোনো কোনো সূত্র খবর দিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ‘ইরানিদের লাশ অন্য সব দেশের হাজিদের লাশের পর ফেরত পাঠানো হবে!’
এ অবস্থায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গতকাল (বুধবার) সৌদি সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মিনার ঘটনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনেক উদাসীনতা, অসৌজন্যতা ও অমানবিক আচরণ সত্ত্বেও আমরা ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার স্বার্থে সংযত আচরণ করে এসেছি; কিন্তু আমাদের হাজিদের ব্যাপারে অন্যায়, হঠকারি ও অবমাননাকর আচরণ অব্যাহত থাকলে ইরান অত্যন্ত কঠোর জবাব দেবে।
মিনায় পবিত্র ঈদের দিনে প্রচণ্ড ভীড়ের চাপে পদদলিত হওয়ার ঘটনায় চার হাজার ১৭৩ জন হজযাত্রী নিহত হয়েছে বলে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি খবর দিয়েছিল। অবশ্য সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরে তার ওয়েব সাইট থেকে এই পরিসংখ্যান সরিয়ে নেয়। এই ঘটনায় ইরানের ৪৬৪ জন হজযাত্রী নিহত হয়েছে। সৌদি সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মালির ৭৯ জন এ ঘটনায় প্রাণ হারান। এ ছাড়াও মিশরের ৭৮ জন এবং মরক্কোর ৮৭ জন নিহত হন একই ঘটনায়। বাংলাদেশের ৪১ জন হাজিও ওই ঘটনায় প্রাণ হারান। এ ছাড়াও পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ারও প্রায় অর্ধশত হজযাত্রী প্রান হারান মিনার ট্র্যাজেডিতে।