প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা
‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ এবং ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে বর্নাঢ্য গণসংবর্ধনা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং ১৪ দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানান।
বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে উপচেপড়া উচ্ছ্বসিত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এসে পৌঁছান, তখন তাকে বরণ করা হয় এক অন্য রকম আবহে। প্রধানমন্ত্রী গণভবনের সভাকক্ষে গিয়ে তার সংবর্ধনায় আসা সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘এটা জাতির সম্মান, মানুষের সম্মান।
এর আগে বিমানবন্দর থেকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী এসে পৌঁছালে লেখক, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, ক্রিকেটার, এভারেস্ট বিজয়ী, চিত্রপরিচালক, দলীয় নেতা-কর্মী এবং দেশের বিশিষ্টজনরা গানে গানে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেন।
এর আগে জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য আট দিনের সফর শেষে শনিবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি। পরে সেখানে এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি শেষে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতিকালে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রুখতে এবং বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, যে মুহূর্তে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, সে মুহূর্তে দেশে পরিকল্পিতভাবে নানা ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ঢাকায় বিদেশী নাগরিক হত্যা পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রের অংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করা জন্য বিদেশী নাগরিক হত্যা করা হয়েছে। এটা দেশের জন্য অমঙ্গলজনক।
এদিকে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা জানাতে ঢাকায় আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল ১৪ দল ও সমমনা সংগঠনগুলো। এই সংবর্ধনার অংশ হিসেবে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার হয়ে জাহাঙ্গীরগেট, জাহাঙ্গীরগেট থেকে বিজয় সরণি ও জাতীয় সংসদ ভবন হয়ে গণভবন পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে দাঁড়িয়ে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানান। এ সময় তাদের হাতে ছিল অভিনন্দন বার্তা লেখা ব্যানার-ফেস্টুন।
জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি। এর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ এবং তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ অধিবেশনের এ সফরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হয়েছিলেন। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বে ১১৯ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ছিলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হওয়ার ফলে ওই সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা পড়ে চরম দুর্ভোগে। অনেকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, টঙ্গী ও গাজীপুর, খিলক্ষেত থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত বাড্ডা, মতিঝিল, খিলগাঁও, সবুজবাগ, কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে হোটেল র্যাডিসন পর্যন্ত গুলশান, রমনা, ক্যান্টনমেন্ট, ডেমরা, শ্যামপুর, র্যাডিসন হোটেল থেকে বনানীর কাকলি মোড় পর্যন্ত কাফরুল, মিরপুর, কাকলির মোড় থেকে জাহাঙ্গীরগেট পর্যন্ত বনানী, তেজগাঁও থানা, জাহাঙ্গীরগেট থেকে গণভবন পর্যন্ত মোহাম্মদপুর, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়েছেন। তারা এসেছেন মিনিবাসে চড়ে, বাসে চড়ে, ট্রাকে করে, কেউ কেউ ছাট ছোট মিছিল নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে তাদের হাতে দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল¬াকার্ড ও ছোট ছোট পতাকা। সড়কের কোনো কোনো স্থানে আবার ব্যান্ডপার্টি বাজানো হয়। চলেছে দেশাত্মবোধক গান।
দুর্ভোগে মানুষ
প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ। রাস্তায় নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকায় অনেক রাস্তায় পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীর এই সড়কের চাপ গিয়ে পড়েছে টঙ্গী পর্যন্ত। বাইরে থেকে ঢাকায় ফেরা দূরপাল্ল¬ার অনেক গাড়ির গতি টঙ্গীতে এসে কমে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে আলম, এশিয়া, বন্যা, আশিয়ান, জলসিঁড়ি, ইসলাম পরিবহনের বাস।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তৌফক হোসেন বলেন, ভাই আমার পরীক্ষা দুপুর ২টায়। গাড়ি না চললে আমি কীভাবে যাবো। আগে থেকে টিভিতে একটু প্রচার করতে পারতো রাস্তা বন্ধ থাকবে। উপায় না পেয়ে উত্তরা থেকে হাঁটা শুরু করেছি।
সালপিন আহমেদ ও শওকত কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা অনন্যা পরিবহনের যাত্রী। সঙ্গে রয়েছে অনেক ব্যাগ। আবদুল্লাপুরে গাড়ি তিন ঘণ্টা আটকে থাকার কারণে বাধ্য হয়ে নেমে হাঁটা শুরু করেন তারা।
মোহাম্মদ নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বলেন, বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে বিমানবন্দরের সামনেই আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, সরকারের লোকজন আগে থেকে জানাতে পারতো এ রোড দিয়ে আসা যাবে না। তাহলে আসতাম না। আজকে তো জমার টাকাও হবে না।
প্রাইভেটকারের চালক শেখ মাসুম জানান, বিমানবন্দর থেকে তার মালিককে নিয়ে বের হন। তিনি বলেন, আমাদের আগে থেকে জানানো হতো এ সময় থেকে ওই সময় পর্যন্ত এ সড়ক ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতাম না। গাড়িতে এসি নেই। স্যার অসুস্থ। এমন একটা জায়গায় আটকা পড়েছি আশপাশে পানি পাইনি।