আরব নিউজের প্রতিবেদন : বাংলাদেশের জন্য অশুভ ইঙ্গিত
বাংলাদেশে দুই বিদেশী হত্যা ক্রমবর্ধমান জঙ্গি তৎপরতার বিপদের কথাই তুলে ধরে। এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এতে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এটা বাংলাদেশের জন্য অশুভ ইঙ্গিত। অনলাইন আরব নিউজে প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এর লেখক শফিকুল আলম।
তিনি লিখেছেন, দুই বিদেশীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএস। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান হলেও তারা বলছেন, যেসব কট্টরপন্থিকে রাজনীতির মূল স্রোত থেকে বাইরে রাখা হয়েছে তারা ক্রমাগত বেপরোয়া হয়ে উঠার পথ বেছে নিচ্ছে। এটা ঘটছে এমন এক দেশে যে দেশটি ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য পরিচিত। এ বছরের শুরু থেকে হত্যা করা হয়েছে চারজন ব্লগারকে। এ ঘটনায় সরকারের জঙ্গিবিরোধী যে প্রচেষ্টা তাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমনকি শনিবার যখন রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা করা হয় তার আগে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করে। কুনিও হোশি ও ইতালির এনজিও কর্মী সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ড গার্মেন্টের বিদেশী ক্রেতাদের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। তারা ঢাকায় স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে ২৫০০ কোটি ডলারের এ শিল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটির আলী রীয়াজ বলেন, এসব হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এ সব হত্যাকাণ্ড যে জঙ্গিরা করেছে তার একটি ধরন আছে। এ নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।
ওদিকে এ বছরই বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশ অন্তত উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর মর্যাদা পেয়েছে। গত এক দশকে এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শতকরা ৬ ভাগ। গত তিন বছর বাংলাদেশে অস্থিরতা চলছে। এতে অর্থনীতির যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে। এই তিন বছরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি দল দল জামায়াতে ইসলামীকে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন কারচুপির আশঙ্কায় বর্জন করে মূলধারার বিরোধী দল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ভূমিকা জন্য শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজনীতিককে দেয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। বছরের শুরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ যখন শুরু হয় তখন থেকে ইসলামপন্থিসহ বিরোধী দলের নিখোঁজ নেতাকর্মীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এসব নেতাকর্মীর পরিবারের আশঙ্কা তাদের হয়তো গোপনে আটক করা হয়েছে অথবা হত্যা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আতাউর রহমান বলেন, কট্টরপন্থি নেতাদের ওপর দমনপীড়ন জঙ্গি তৎপরতায় শুধু রসদ যুগিয়েছে। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, অনেক মানুষের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। ইসলামপন্থিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলকে একপেশে করে রাখা হয়েছে। এতে বেপরোয়া কর্মকাণ্ড উসকে দিয়ে থাকতে পারে। তিনজন ব্লগারকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। অন্যদিকে দায়েস বা আইএস গত সপ্তাহে দুই বিদেশী হত্যার দায় স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে কোন হত্যায় জড়িত থাকার কথা এই প্রথম স্বীকার করলো আইএস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে আইএস জড়িত থাকার কোন প্রমাণ পায়নি পুলিশ। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার বার বলছেন, দেশে ডায়েস বা আইএসের কোন উপস্থিতি নেই। আইএসে যোগ দেয়ার জন্য লোক জড়ো করার অভিযোগে গত কয়েক মাসে পুলিশ বেশ কিছু সদস্যকে আটক করেছে। বলা হয়, আটক ওই ব্যক্তিরা হয়তো সদস্য সংগ্রহ করছিল না হয় তারা ইরাক অথবা সিরিয়ায় লড়াইয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর আবদুর রব বলেন, বিদেশী হত্যায় ডায়েসের জড়িত থাকার বিষয়ে তিনি সন্দিহান। তবে জঙ্গিদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এখনও আইএস তাদের পা রাখায় জায়গা খুঁজছে। বিদেশী দুই নাগরিক হত্যায় আইএসের জড়িত থাকার কোন লক্ষণ পাওয়া যায় না। তবে আলী রীয়াজ বলেন, যারা দেশে আইএসের উপস্থিতি নিয়ে সন্দিহান আমি তাদের সঙ্গে একমত হতে চাই। কিন্তু সম্প্রতি যে দমনপীড়ন হয়েছে তাতে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা জঙ্গিদের পক্ষে যায়। তিনি বলেন, আপনি দেখবেন গণতন্ত্রের জন্য যতই স্থান সংকুচিত হয়, ততই জঙ্গি গ্রুপগুলো তাদের বিস্তার ঘটাবে।