‘গরু শুধুই একটি প্রাণি, এটি কারো মা হতে পারে না’
ভারতীয় প্রেস কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কেন্ডেয় কাটজু বলেছেন, ‘গরু শুধু একটি প্রাণী এবং একটি প্রাণী কারো মা হতে পারে না।’
গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে মোহাম্মদ আখলাক নামে এক মুসলিম বৃদ্ধকে নির্মমভাবে হত্যার নিন্দা জানিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বহু হিন্দু গরুকে মায়ের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। যদিও কথিত এই মাকে তার নিজের ঘরে স্থান না দিয়ে গোয়াল ঘরেই রাখে।
বানারাসে হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে কাটজু বলেন, দিল্লির নিকটবর্তী গ্রামে আখলাকের হত্যাকাণ্ড ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
‘গরু শুধু একটি প্রাণী। একটি প্রাণী কারো মা হতে পারে না। আমি যদি গরুর মাংস খাই তাতে ক্ষতি কী। সারা বিশ্বের লোকই তো গরুর মাংস খাচ্ছে। তাহলে আমি যদি খাই কার সাধ্যি ঠেকায়।’
কাটজু বলেন, তিনি আগেও গরুর মাংস খেয়েছেন ভবিষ্যতেও খাবেন।
‘সারা বিশ্বের লোকজন গরুর মাংস খায় বলে তারা খারাপ আর আমরা (ভারতীয়রা) খাই না বলে সাধু সন্ন্যাসী হয়ে গেছি? লোকজন গরুর মাংস খেলে ক্ষতি কী? আমি গরুর মাংস খেয়েছি এবং খাওয়া অব্যাহত রাখব।’
এর আগে এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, তিনি আগেও গরু খেয়েছেন, ভবিষ্যতেও খাবেন। বরং এখন থেকে আরো বেশি করে খাবেন। হিম্মত থাকলে এ বিষয়টি নিয়ে কেউ তার সামনে এসে মেরে দেখাক। তবে ওই ‘কাপুরুষদের’ জন্য তার হাতের লাঠি অপেক্ষা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কাটজুর মতই ভারতের বহু উদারমনা ব্যক্তিত্ব গরুর মাংস নিয়ে হিন্দু জঙ্গিদের উন্মত্ততার নিন্দা জানাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার ভারতের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক শোভা দে এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘আমি মাত্র গরুর মাংস খেয়েছি। আসো, খুন করো আমাকে।’
তার এই টুইটের পর হাজার হাজার মানুষ একই বক্তব্য দিয়ে রিটুইট করে।
এছাড়া গরুর মাংস খাওয়ার গুজবে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ভারতসহ বিশ্বের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিবাদ জানিয়েছেন সরকারি ও বিরোধীদলীয় নেতারাও।
কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, ‘দেশে হাজারো সমস্যা ফেলে মোদি সরকার ব্যস্ত ছিল গোরক্ষা নিয়ে। আর এর জন্য মরতে হলো বৃদ্ধ মোহাম্মদ আখলাক। এই হত্যার দায় অবশ্যই মোদি সরকারকে নিতে হবে।’
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, ‘একদিকে আমাদের মহাকাশযান মঙ্গলে যাচ্ছে। আরেকদিকে আমাদের জনতা গরু বাঁচাতে গিয়ে মানুষ মারছে। সভ্যতার এমন বৈপরীত্য কেবল ভারতেই সম্ভব।’
ভারতের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সানওয়ার লাল জাট লেখেন, ‘এই লজ্জা আমাদের। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে আমাদের সবাইকে নিয়েই। তবে যে উদাহরণ দেখানো হলো, এর জন্য আমরা লজ্জিত।’
আম আদমি দলের প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করেন, ‘গরুর মাংস খাওয়ার গুজবে একজনকে মেরে ফেলা হলো। খবরটি শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। কী হয়েছে আমাদের সমাজের!’
স্বনামধন্য সাংবাদিক বরখা দত্ত লিখেছেন, ‘এই আমাদের সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদের চেতনাবোধ? বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তার বাবাকে কেবল গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে মেরে ফেলা হলো!’
নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডে বলিউড অঙ্গনেও উঠেছে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়। অভিনেতা নানা পাটেকর একে ‘সভ্যতা ও জাতীয়তাবাদের প্রতি অবমাননা’ বলে উল্লেখ করেন।
আরেক বলিউড অভিনেতা ঋষি কাপুর টুইট করেছেন, ‘আমি গরুর মাংস খাই এবং এর সঙ্গে আমার ধর্মীয় কোনো দণ্ড নেই। আমি এখনো আমার ধর্মের প্রতি আস্থাবান।’ -ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডিএনএ, টাইমস অব ইন্ডিয়া