বিশ্ব ইসলামী অর্থনীতি সম্মেলনে
অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ব্যবসা নয়, মানুষ : ইউনূস
অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ব্যবসার বদলে মানুষকে নিয়ে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার বিশ্ব ইসলামী অর্থনীতি সম্মেলন উদ্বোধনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাখতুমের সঙ্গে যোগ দিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রফেসর ইউনূসেন বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন উদ্বোধন করতে ফ্লোর নেন। প্রফেসর ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ব্যবসা নয়, মানুষ। প্রবৃদ্ধির হার ব্যবসার অবস্থাকে প্রতিফলিত করে, মানুষের অবস্থা নয়। তিনি যুক্তি দেখান যে, পৃথিবীকে টেকসই করতে হলে ব্যবসাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। ব্যবসাকে একটি P অর্থাৎ Profit-এর পরিবর্তে ৩টি P-র লক্ষ্যে অর্থাৎ People, Planet ও Profit- কে সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিচালিত করতে হবে। কেবল এভাবেই ব্যবসা মানুষের অবস্থা প্রতিফলিত করতে পারবে। তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এই সতর্কবানী উচ্চারণ করেন যে, ব্যবসার উদ্দেশ্য পুনঃনির্ধারণ করতে না পারলে আমরা এমন এক বিশ্বে পৌঁছাবো যেখানে ১ হাজারেরও কম মানুয়ের হাতে এই গ্রহের প্রায় সকল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হবে।
দুবাই চেম্বার, দুবাই ইসলামিক ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট সেন্টার (DIEDC) ও টমসন রয়টার্স কর্তৃক আয়োজিত এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামি অর্থনীতির বিভিন্ন পরিবর্তনশীল চালিকাশক্তিগুলো পরীক্ষা করে দেখা।
বিভিন্ন সেশনে অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর মুবারক রশীদ আল মনসূরী, দুবাই ইসলামী ব্যাংক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ড. আদনান চিলওয়ান, আবু ধাবী ইসলামী ব্যাংক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তিরাদ আল মাহমূদ এবং এমিরেট্স ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী জামাল বিন গালাইতা সহ আরব আমিরাতের ইসলামী আর্থিক খাতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ।
এ ছাড়াও দুবাইতে ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আবুধাবি ইসলামি ব্যাংক-এর এথিক্যাল ফাইনান্স ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড (Ethical Finance Innovation Challenge Awards-EFICA) অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস দারিদ্র, বেকারত্ব ও পরিবশেগত সমস্যার মত পৃথিবীর জরুরী সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে আর্থিক সেবা খাতের সংস্কারের আহ্বান জানান।
এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট বিশ্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থার মারাত্মক ত্রুটিগুলোকে- বাজার ব্যবস্থায় কতিপয় প্রভাব বিস্তারকারীর দায়িত্বহীন আচরণসহ কিভাবে উন্মোচিত করেছে তা তুলে ধরেন। তবে তিনি বলেন যে, এসব ভুল সংশোধনের এবং বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে পুনঃর্গঠিত করার এখনই সুযোগ। প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘মানুষের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনা বরাবরই আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এ জন্যই EFICA-র মতো শিল্পে পরিবর্তন সূচনাকারী ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নকারী উদ্যোগ অত্যন্ত আশাপ্রদ।
তিনি বলেন, ‘যে সকল কোম্পানী সমাজের মঙ্গলের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছে তাদের অর্থায়ন প্রয়োজন, আর এখানেই ব্যাংকগুলো সামাজিক ব্যবসার বিকাশে একটি মূল ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা একটি সামাজিক ব্যবসা অর্থায়ন কোম্পানি তৈরি করতে পারি যা নবায়নযোগ্য শক্তি, স্বাস্থ্য সেবা বা তথ্য প্রযুক্তিতে অথবা স্থানীয় জনগণকে ক্ষুদ্রঋণ দানকারী কোন কোম্পানীকে অর্থায়ন করতে পারে।’
এর আগে ৪ অক্টোবর রবিবার প্রফেসর ইউনূস আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে ‘মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাখতুম গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।