বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা মুসলিম উম্মাহর চিন্তার বিষয় : পাকিস্তান
ভারতের উত্তর প্রদেশের দাদরিতে গরুর গোশত খাওয়া এবং তা বাসায় রাখার গুজব রটিয়ে মুহাম্মদ আখলাক নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান।
পাক পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র কাজী খলিলুল্লাহ বলেছেন, ভারত দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর গোশত রফতানিকারক দেশ। গরু জবাই করা ছাড়া এটা সম্ভব হতে পারে না।
সংবাদসংস্থা ইউএনআই জানিয়েছে, দাদরিতে গরুর গোশত খাওয়ার অপবাদ দিয়ে এক মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা প্রসঙ্গে কাজী খলিলুল্লাহ এ ধরনের হামলাকে মুসলিম উম্মাহর জন্য চিন্তার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটি দেশ যারা ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে, তাদের সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার সম্পূর্ণ রক্ষা করা উচিত।’
মুম্বাইতে পাকিস্তানের বিখ্যাত গজল গায়ক গুলাম আলীর কনসার্ট বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা খুব দুঃখজনক যে ভারতে পাকিস্তানি শিল্পীদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে।
আগেই অবশ্য নয়া দিল্লীতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আবদুল বাসিত বলেছেন, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এটাকে তার দেশ উৎসাহিত করে।
এ ব্যাপারে আমাদের নীতি অত্যন্ত গঠনমূলক এবং ইতিবাচক। যখন ভারতীয় শিল্পী পাকিস্তানে যান তাকে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয় না।’
এরপরেই পাক পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র কাজী খলিলুল্লাহর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যে এলো।
গতকাল শুক্রবার মুম্বাইয়ের সমুখানন্দ হলে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল পাকিস্তানের খ্যাতনামা গজল শিল্পী গুলাম আলীর। কিন্তু শিবসেনার হুমকিতে অনুষ্ঠান বাতিল ঘোষণা করতে হয়েছে আয়োজকদের।
সীমান্তে অশান্তির দোহাই দিয়ে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি জোট সরকারের শরিক শিবসেনার দাবি, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনোরকম সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।
এ নিয়ে দেশের সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে শিবসেনার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। গুলাম আলীকে কনসার্ট করতে না দেয়ায় ঘরে বাইরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গদকড়ি বলেছেন, ‘পাকিস্তান সরকারের ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের বিরোধিতা করা উচিত।
কিন্তু কোনো শিল্পীর বিরোধিতায় আমরা বিশ্বাস করি না।’ তিনি নিজে গুলাম আলীর ভক্ত এবং রোজ সকালে তার গান শুনে থাকেন বলেও মন্তব্য করেন গদকড়ি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভিও শিবসেনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করে বলেছেন, ‘গুলাম আলী শান্তির দূত। ওর মতো মানুষকে সীমান্ত সমস্যার ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। যিনি শান্তির বার্তা দিয়ে চলেছেন তার জন্য কোনো সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত নয়।’
ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ অবশ্য গুলাম আলীর কনসার্ট বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে বিশেষ কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি বলেন, ‘এটা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়।
আমাদের মন্ত্রকের কী-ই বা বলার থাকতে পারে!’ এ নিয়ে ‘পাকিস্তানের কড়া বিবৃতির পরে ভারত যুতসই জবাব দিতে পারলো না। ‘সাম্প্রতিক অতীতে এই নজির নেই’ বলে ভারতীয় একটি দৈনিক সংবাদপত্রে মন্তব্য করা হয়েছে।