পাহাড়ে আরব খেজুর চাষে সফলতা
পুলক চক্রবর্তী রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশে খেজুর খুবই অবহেলিত একটি ফল যার সন্ধান মিলে রাস্তার পাশে, আনাচে-কানাচে বা পুকুরপাড়ে। পরিকল্পিত খেজুর বাগানের সন্ধান বাংলাদেশে কোথাও পাওয়া যায় না বললেই চলে। আরব দেশের মেসোপটেমিয়াকে খেজুরের আদি নিবাস হিসেবে ধরা হয়। তবে বাংলাদেশে যে খেজুর চাষ হয় সেটি বন্য, যার কোনো তেউড় চারা থেকে চারা হয় না। চাহিদার কারণে এই আরবের খেজুর রমজান মাসে আরব দেশ থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। দেশে খেজুরের এ চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে পরিকল্পিত খেজুর চাষে মনোযোগী হয়েছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। আরব খেজুরের পরীামূলক চাষ করে সফল হয়েছে রাইখালীর পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। সরাসরি সৌদি আরবের গাছ থেকে কয়েক শ’ বীজ এনে সেগুলোর চারা করে রাইখালীর গবেষণা মাঠে রোপণ করা হয়। সব গাছেই এ বছর ফুল আসে এবং প্রচুর ফল ধরে যার আকার ও আকৃতি খুবই আকর্ষণীয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে আরব খেজুর চাষ কৃষি েেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আরবের এই খেজুর নিয়ে অকান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন রাইখালীর পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনর রশীদ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্যাম প্রসাদ চাকমা। গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনর রশীদ বলেন, পরিকল্পিত খেজুর বাগানের সন্ধান বাংলাদেশে কোথাও পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের যে খেজুর চাষ হয় সেটি বন্য যার কোনো তেউড় চারা হয় না, যার আদি নিবাস ভারত উপমহাদেশ এবং উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম ফিনিক্স সিলভেস্ট্রিস। আরবের খেজুরের উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম ফিনিক্স ডেকটাইলিফেরা যার বীজ ও তেউড়ের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়। তিনি বলেন, চাহিদার কারণে এই আরবের খেজুর রমজান মাসে আরব দেশ থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। খেজুর একটি ভিন্নবাসী উদ্ভিদ যার স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ভিন্ন ভিন্ন গাছে হয়ে থাকে। ফলের ভালো আকার আকৃতির জন্য পুরুষ ফুলের রেণু খুবই জরুরি। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে স্ত্রী গাছ পাওয়ার অনুপাত খুবই কম। ফলে তেউড়ের মাধ্যমে খেজুরের বংশবিস্তার করাই উত্তম যা মাতৃগুণাগুণ বজায় রাখে। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্যাম প্রসাদ চাকমা বলেন, রাইখালীর পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ২০০৮-০৯ সালে সৌদি আরব থেকে সরাসরি গাছ থেকে কয়েক শ’ বীজ এনে সেগুলোর চারা তৈরি করে গবেষণা মাঠে রোপণ করে। অনেক গাছে এ বছর ফুল আসে। এগুলোর বেশ কিছু গাছে স্ত্রী ফুল আসে এবং প্রচুর ফল ধরে যার আকার ও আকৃতি খুবই আকর্ষণীয়। তিনি বলেন, ফলগুলো লম্বায় ৪.০০ থেকে ৪.৬০ সে.মি. এবং প্রস্থে ২.০০ থেকে ২.৫০ সে.মি। এক একটি ফলের ওজন ১২ থেকে ১৫ গ্রাম এবং বীজের ওজন আধা গ্রামের মতো। এসব স্ত্রী গাছের সব ক’টিতে এবার তেউড় গজিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানান, গবেষণার মাধ্যমে শিগগিরই এই আরবের খেজুর বাংলাদেশের মাটিতে অবমুক্তায়িত করা হবে। তাদের মতে এই গবেষণা সফল হলে বাংলাদেশের আর কোনো খেজুরের আমদানির প্রয়োজন হবে না এবং দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে। দেশীয় আবহাওয়া মাটি ও পরিবেশের ভারসাম্যকে কাজে লাগিয়ে রাঙ্গামাটির পাহাড়ে আরবের খেজুর বাগান ও ফলন সম্ভব হয়েছে বলে জানান বিজ্ঞানীরা।