মিয়ানমারে ‘মুসলিমবিহীন’ নির্বাচন !
মিয়ানমারে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কৌশলে মুসলিমদের বাদ দেয়া হচ্ছে। প্রায় ৩০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমকে ভোটার না করার পাশাপাশি বড় দলগুলোতে কোনো মুসলিম প্রার্থী রাখা হচ্ছে না।
দেশটির নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দলের একটি সূত্র বলছেন, সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) থেকে কোনো মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। সুচির নির্দেশে দলের মধ্যে ‘মুসলিমদের কাটছাঁট’ করার প্রক্রিয়া চলছে। মূলত দেশটিতে উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের মুসলিমবিরোধী মনোভাবের কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণতন্ত্রপন্থী দলটি।
স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে এনএলডির এক হাজার ১৫১ প্রার্থীর মধ্যে একজনও মুসলিম নেই। যদিও দেশটিতে প্রায় ৫০ লাখ মুসলিমের বসবাস। দেশটির মোট জনসংখ্যার তুলনায় তা প্রায় চার থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। অপরদিকে দেশটির সেনা সমর্থিত ক্ষমতাসীন দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) পক্ষ থেকেও কোনো মুসলিমকে প্রার্থী করা হয়নি। আর এরই মধ্যে দেশটির নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অনেক মুসলিম প্রার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। তাদের বাবা-মা মিয়ানমারের নাগরিক নন_ এমন অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। সু চির দলের সূত্রটি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় মা বা থা-র (উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের সংগঠন) ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন সু চি। এ কারণেই মুসলিমদের অপসারণের প্রক্রিয়া চলছে।’
উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের সংগঠন মা বা থা (অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অব রেস অ্যান্ড রিলিজিয়ন) সরাসরি মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে থাকে। তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর আক্রমণ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে আসছে। ২০১০ সালের পর মুসলিমবিরোধী বেশ কয়েক উগ্রপন্থী বৌদ্ধকে মিয়ানমারের জেল থেকে ছেড়ে দেয়ায় বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।
দেশটিতে মুসলিমবিরোধী চেতনা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি মুসলিমদের এড়িয়ে চলছেন। ২০১২ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা এবং এখন পর্যন্ত চলা নিষ্ঠুর নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। এমনকি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেয়ার ব্যাপারেও তিনি নিশ্চুপ। জাতিসংঘ, আমেরিকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সু চি এ বিষয়ে টু শব্দটি করেননি।
মিয়ানমারে প্রায় ১৩৫টি সংখ্যালঘু নৃ-তাত্তি্বক গোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গাসহ গুটি কয়েক সম্প্রদায়ের সদস্যদের নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি। তাই তারা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। দেশটির এবারের সাধারণ নির্বাচনে ৯০টি দল অংশ নেবে।